কক্সবাজারে তারকা হোটেলে হচ্ছে করোনা আইসোলেশন সেন্টার
কক্সবাজারে জ্যামিতিক হারে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। নানা পেশার মানুষের মাঝে জেঁকে বসছে করোনা। দিন দিন রোগী বাড়ায় কক্সবাজারে বিদ্যমান আইসোলেশন সেন্টারে রোগী সংকুলন হচ্ছে না। মুক্ত হাওয়ায় করোনা রোগীদের মানসিক প্রশান্তি ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধার কথা চিন্তা করে সৈকতের ঢেউয়ের কাছের তারকা হোটেলে ২ শতাধিক শয্যার আইসোলেশন সেন্টার চালুর প্রক্রিয়া চলছে। সী-ইন পয়েন্টের বালিয়াড়ির তীরে গড়া সী-প্রিন্সেস হোটেলটি এ সপ্তাহেই আইসোলেশন সেন্টার হিসেবে চালু করতে ইতোমধ্যে তৎপরতা শুরু হয়েছে। কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আশরাফুল আফসার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, কক্সবাজার সিভিল সার্জনের পক্ষে নতুন এই আইসোলেশন সেন্টারে চিকিৎসা সেবা দেয়া হবে। জেলা প্রশাসন ও সিভিল সার্জনের অফিস সমন্বিতভাবে এই আইসোলেশন সেন্টারের কার্যক্রম পরিচালনা করবে। তুলনামূলক যেসকল রোগীর উপসর্গ নেই, যারা মোটামুটি সুস্থ তাদের এই আইসোলেশন সেন্টারে রাখা হবে। আর যেসকল করোনা রোগী নিজের বাসায় থাকতে চান না বা বাসায় আলাদা থাকার ব্যবস্থা নেই তাদেরকেও এখানে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আশরাফুল আফসার বলেন, করোনা চিকিৎসার অন্যতম উপদান হলো নির্মল বাতাস। ফুসফুসে আঘাতহানা ভাইরাস করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করতে আইসোলেশন রুমটি জানালার পাশে রাখতে নির্দেশনা দেয়া হয়। সেটি মাথায় রেখেই বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতেই আইসোলেশন সেন্টার গড়তে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এখানে সৈকতের নীল ঢেউ ও নির্মল হাওয়া উপভোগ করেই চিকিৎসা নিতে পারবেন করোনা আক্রান্তরা। হোটেলের প্রতিটি রুম থেকে উপভোগ করা যাবে সমুদ্র সৈকত। এই সপ্তাহেই চালু হবে সাগর পাড়ের ২০০ শয্যার নতুন এই করোনা আইসোলেশন সেন্টারটি।
হোটেল সী-প্রিন্সেস'র সহকারী মহা-ব্যবস্থাপক (এজিএম) একরামুল বশর চৌধুরী সুমন বলেন, দেশে চলমান করোনা দুর্যোগে আক্রান্তদের সেবায় জেলা প্রশাসন আমাদের হোটেলটিকে আইসোলেশন সেন্টার করার প্রস্তাবনা দিয়েছে। রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে আমরা সহযোগী হতে প্রস্তুত। কিন্তু এটি করতে গিয়ে হোটেল এ্যামিনেটিস মেনটেনেন্স, বিদ্যুৎ বিল আর স্টাফ খরচ কিভাবে মেনটেইন হবে এ বিষয়ে জেলা প্রশাসন এখনও কিছু বলেনি। আমরা এত বড় প্রোপার্টি নিয়ে করোনার শুরু থেকেই চরম লোকসানে রয়েছি। সরকারি সিন্ধান্ত পালনের পাশাপাশি প্রোপার্টি রক্ষাও নৈতিক দায়িত্ব।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, কক্সবাজারের রামুতে ৫০ শয্যা ও চকরিয়ায় ৫০ শয্যার করোনা আইসোলেশন সেন্টার রয়েছে। উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১৫০ শয্যার করোনা ফিল্ড হাসপাতাল খোলা হয়েছে। এছাড়াও কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ১০টি করোনা আইসিইউ ও ৫০ শয্যার করোনা আইসোলেশন সেন্টারে কাজ চলছে।
উল্লেখ্য, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে স্থাপিত ল্যাবে গত ৬০ দিনে (রোববার পর্যন্ত) ৬ হাজার ৭৬৫ জন সন্দেহজনক রোগীর করোনা টেস্ট করা হয়। তারমধ্যে ৭৮১ জনের করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়। এতে রোববার ২৫৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৭০ জনের করোনা পজিটিভ এসেছে, যাদের মাঝে নতুন শনাক্ত হয়েছে ৬৬ জন। অপর ৪ জন রোগীর ফলোআপও পজিটিভ এসেছে।
এদিনের ৬৪ জনসহ কক্সবাজার জেলার রোগী রয়েছে ৭০৫ জন। এরমধ্যে কক্সবাজার সদরে ২৮৬ জন, মহেশখালীতে ৩২ জন, টেকনাফে ৩২ জন, উখিয়ায় ৯৮ জন, রামুতে ২৭ জন, চকরিয়ায় ১৫৯ জন, কুতুবদিয়ায় ২ জন এবং পেকুয়ায় ৩৯ জন রয়েছেন। এছাড়া ৩৪ জন রোহিঙ্গাও রয়েছেন এদের মধ্যে। অন্যান্যরা কক্সবাজারের নিকটবর্তী বান্দরবান জেলা এবং চট্টগ্রামের সীতাকুঞ্জ, লোহাগাড়া ও সাতকানিয়ার বাসিন্দা।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের দেয়া তথ্যমতে, ইতোমধ্যে করোনায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন দেড় শতাধিক। সোবমার সকালে দুই তরুণসহ মারা গেছেন ১৬ জন। এরমধ্যে সদর উপজেলায় মৃত্যুবরণ করেছেন ১১ জন। বাকিরা রামু, চকরিয়া ও টেকনাফের।
সায়ীদ আলমগীর/এফএ/এমকেএইচ