ঢুকতে দেয়নি কোনো হাসপাতাল, অ্যাম্বুলেন্সেই নারীর মৃত্যু
‘গত ১ জুন থেকেই বাড়ির সবার মাঝে করোনার উপসর্গ দেখা দেয়। করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় ভোগান্তির চিত্র দেখে টেস্ট না করে চিকিৎসকদের পরামর্শে ঘরেই চিকিৎসা শুরু করি। নিয়মিত চিকিৎসায় আমি নিজে ও বাকি সবাই সুস্থতার পথে থাকলেও স্ত্রী জেবুন্নেছার উন্নতির কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছিল না। এরই মাঝে অবস্থার অবনতি হলে রোববার তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতেই তাকে রেফার্ড করা হয় চট্টগ্রামে। সেখানে সময় মতো পৌঁছালেও হাসপাতালের দুয়ারে দুয়ারে কেবল ঘুরেছি। কেউ ভেতরে ঢুকতে দেয়নি। অ্যাম্বুলেন্সে আমার চোখের সামনেই জীবনসঙ্গী বিনা চিকিৎসায় মারা গেছে। অসহায়ের মতো চেয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না আমার। এমন ভোগান্তির মৃত্যু আল্লাহ যেন আর কাউকে না দেন।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে এভাবেই নিজ স্ত্রী জেবুন্নেছার (৪৮) করুণ মৃত্যুর ঘটনা জানালেন কক্সবাজারের ক্রীড়া সাংবাদিক জিয়াউল করিম।
চার সন্তানের জননী জেবুন্নেছা আগে থেকেই হৃদরোগে ভুগছিলেন। তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে সারারাত অপেক্ষার পর সোমবার (১৫ জুন) সকাল ১০টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সেই মারা যান তিনি। এর আগে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। কিন্তু করোনার পজিটিভ কিংবা নেগেটিভ কোনো রিপোর্ট না থাকায় তাকে কোনো হাসপাতালই ভর্তি নেয়নি।
কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য জিয়াউল করিম জানান, করোনাভাইরাস টেস্টের রিপোর্ট না থাকায় রোববার (১৪ জুন) সারারাতের চেষ্টায়ও চট্টগ্রামের কোনো হাসপাতাল তাকে ভর্তি করেনি। বিনা চিকিৎসায় অ্যাম্বুলেন্সেই ছটফট করে মারা যান জেবুন্নেছা। সোমবার সন্ধ্যায় পেকুয়ার নিজ গ্রামে জানাজা শেষে তার দাফন সম্পন্ন করা হয়।
জিয়াউল করিম পেকুয়ার বাসিন্দা হলেও কয়েক যুগ ধরে কক্সবাজার শহরের বাহারছড়ায় পরিবার নিয়ে বাস করেন।
জিয়াউল করিম বলেন, জীবনে বিপদাপন্ন মানুষ যেখানে দেখেছি বা যারাই সহযোগিতা চেয়েছে তাদের জন্যই পা বাড়িয়েছি। কিন্তু নিজের স্ত্রীর জন্য কিছু করতে না পারার দহন আমৃত্যু কুঁড়ে কুঁড়ে খাবে। প্রাইভেট হাসপাতালগুলোর জন্য মনে দুঃখ থাকবে না। কারণ তারা ইচ্ছে করলে চিকিৎসা দিতেও পারে নাও পারে। কিন্তু চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালও প্রাইভেট হাসপাতালের মতো আচরণ করলো। সেটাই মনের ভেতর কষ্ট দিচ্ছে।
সায়ীদ আলমগীর/আরএআর/এমএস