বাড়ির আঙিনায় সবজি চাষে সরকারি সহায়তা পাবেন সাতক্ষীরার ২২৪০ কৃষক
করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট সংকট মোকাবেলায় মাঠপর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে দেশের সব জমিকে উৎপাদনের আওতায় আনার নির্দেশনা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর ‘বসতবাড়ির আঙিনায় সবজি চাষ’ নামে কর্মসূচি হাতে নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। সাতক্ষীরার ৭০টি ইউনিয়নের ২ হাজার ২৪০ জন কৃষককে ‘বসতবাড়ির আঙিনায় সবজি চাষ’ কর্মসূচির আওতায় এনে বীজ ও নগদ অর্থ সহায়তা দেয়া হচ্ছে। এতে পরিবারে বিষমুক্ত সবজির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি আর্থিকভাবে লাভবান হবেন কৃষকরা।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, জেলার ৭৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ৭০টি ইউনিয়নে ‘বসতবাড়ির আঙিনায় সবজি চাষ’ কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে। প্রতি ইউনিয়ন থেকে ৩২ জন কৃষককে নির্বাচন করে ২ হাজার ২৪০ জন কৃষকের তালিকা প্রণয়নের কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনী ও কাশিমাড়ি ইউনিয়ন, আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা, প্রতাপনগর ও খাজরা ইউনিয়ন, কালিগঞ্জ উপজেলার তারালী ইউনিয়নকে এ কর্মসূচি থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে পানিবন্দী হয়ে পড়া ও কর্মসূচি বাস্তবায়নে অনুপযোগী হওয়ায় এই আটটি ইউনিয়নকে বাদ দেয়া হয়েছে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আরাফাত হোসেন উপজেলার কুশখালী ইউনিয়নের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি জানান, স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের মাধ্যমে তালিকা করা হয়েছে। এরপর নির্বাচিত কৃষকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে যাচাই করা হয়েছে। ওই কৃষকের এক শতক জমি রয়েছে কি-না। প্রথম শর্ত কর্মসূচির আওতায় থাকা কৃষকের অবশ্যই বাড়ির আঙিনায় এক শতক জমি থাকতে হবে। গত ১৪ জুন (রোববার) সাতক্ষীরা কৃষি বিভাগের এ সিদ্ধান্ত বস্তবায়নের জন্য কৃষক নির্বাচন করতে পাঁচদিনের সময় বেঁধে দেয়া হয়। ইতোমধ্যে তালিকা প্রণয়নের কাজ শেষ হয়েছে।
কুশখালী ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মনিরুল ইসলাম। তিনি একজন কৃষক। বসতবাড়ির আঙিনায় তিন শতক জমি রয়েছে এই ইউপি সদস্যের। ‘বসতবাড়ির আঙিনায় সবজি চাষ’ কর্মসূচিতে তাকে নির্বাচন করা হয়েছে।
মনিরুল ইসলাম বলেন, এই কর্মসূচিতে আমার মতো সাধারণ মানুষরা খুব উপকৃত হবে। ৯ জনের সংসারে সপ্তাহে এক হাজার টাকার সবজি কিনতে হয়। আলোচনায় যা জেনেছি তাতে মনে হয়েছে এই কর্মসূচি শুরুর পর থেকে আমার পরিবারের জন্য আর সবজি কিনতে হবে না। এছাড়াও নিজের পরিবারের চাহিদা পূরণ করে বাইরেও সবজি বিক্রি করতে পারবো। এতে চাহিদা পূরণের সঙ্গে সঙ্গে অর্থও সাশ্রয় হবো। প্রধানমন্ত্রী যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। আমি এখনও বীজ বা নগদ অর্থ সহায়তা পাইনি তবে দ্রুত পেয়ে যাব বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তা।
সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ইসলামকাটি ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের কৃষক কার্তিক কুমার দাস। সম্প্রতি ঘূণিঝড় আম্ফানে নষ্ট হয়ে গেছে এই কৃষকের সবজি ক্ষেত। লাখ টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে বিপাকে পড়েছেন এই কৃষক।
কৃষক কার্তিক কুমার দাস বলেন, বাড়ির আঙিনায় সরকারিভাবে সবজি চাষ করা হবে বলে শুনেছি। কীভাবে তালিকা করা হচ্ছে সেটিও আমি জানি না। তবে এই তালিকায় আমাকে অন্তর্ভুক্ত করলে খুব উপকৃত হবো।
ইসলামকাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুভাষ চন্দ্র জানান, বাড়ির আঙিনায় সবজি চাষ করা হবে এমন কোনো কর্মসূচির কথা আমি এখনও জানতে পারিনি। কৃষি অফিস থেকে আমাকে কিছু জানানো হয়নি। প্রকল্পের বিষয়ে কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে খোঁজ নেব।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (খামারবাড়ি) উপপরিচালক নুরুল ইসলাম জানান, করোনা পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর বিষমুক্ত সবজি ও পুষ্টি চাহিদা পূরণের জন্য এই কর্মসূচি দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। কর্মসূচির আওতায় নির্বাচিত জেলার ২ হাজার ২৪০ জন কৃষকের মাঝে সবজি বীজ বিতরণ করা হচ্ছে। বছর ব্যাপী এ কর্মসূচি চলবে। কৃষকদের মাঝে প্রথম পর্যায়ে সবজি বীজ (কলমি শাক, লাল শাক, ডাটা শাক, ঢেঁড়স) বিতরণ করা হচ্ছে। বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে বিতরণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ইউনিয়নগুলোতে বিতরণ কাজ চলমান রয়েছে।
তিনি জানান, বীজ ছাড়াও সবজি ক্ষেত রক্ষায় বেড়া দেয়ার জন্য ১৯৩৫ টাকা করে নগদ অর্থ বিতরণ করা হবে। যা ওই কৃষকের সরাসরি ব্যাংক একাউন্টে চলে যাবে। নির্বাচিত এসব কৃষকদের বাড়ির আঙিনায় বার মাস সবজি চাষ করা হবে। সকল কার্যক্রম মনিটরিং, পরামর্শ সহায়তা দেবে ইউনিয়ন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা। তবে চাহিদার তুলনায় কম সংখ্যক কৃষককে নির্বাচন করা হয়েছে। কর্মসূচির আওতায় কৃষকের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে।
আকরামুল ইসলাম/আরএআর/এমএস