সাতক্ষীরায় বেড়ে উঠলেও সাহেদের প্রতারণা ছিল সবারই অজানা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি সাতক্ষীরা
প্রকাশিত: ০২:২২ পিএম, ০৯ জুলাই ২০২০

সাহেদ করিম ওরফে মো. সাহেদ এত বড়মাপের প্রতারক জানতে পারেননি সাতক্ষীরায় সাহেদের পরিবারের শুভাকাঙ্ক্ষীরা। সাতক্ষীরা শহরের কামালনগর নিউমার্কেট এলাকায় পাঁচ বিঘা জমির ওপর বসতি ছিল সাহেদের পরিবারের। ছিল ‘করিম মার্কেট’ নামের একটি বাণিজ্যিক মার্কেট। আজও মার্কেটটি করিম মার্কেট নামে থাকলেও পরিবর্তন হয়েছে মালিকানা। এখন সাতক্ষীরায় সাহেদের পরিবারের কেউ নেই। বসতি স্থাপনার জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে আরেকটি বাণিজ্যিক মার্কেট।

১৯৪৭ সালের পর সাহেদের দাদা জমি বিনিময়ের মাধ্যমে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসেন। এরপর সাতক্ষীরা শহরের কামালনগর নিউমার্কেট এলাকায় গড়ে তোলেন বসতি। সাহেদ পরিবারের শুভাকাঙ্ক্ষী সাতক্ষীরার ঘের ব্যবসায়ী বিশ্বনাথ ঘোষ। করিম মার্কেটের শম্পা ফিশের মালিক তিনি। এই মার্কেটটি ছিল সাহেদের বাবা সিরাজুল করিমের। গত ১০ বছর আগে এই মার্কেটটি বিক্রি করে দিয়েছেন সিরাজুল করিম।

জানা গেছে, সাহেদ করিমের দাদারা ছিলেন দুই ভাই। ইকরামুল করিম ও ইমদাদুল করিম। ইকরামুল করিমের চার ছেলে সিরাজুল করিম, রফিকুল করিম আর দুই ভাইয়ের নাম জানা যায়নি। সিরাজুল করিমের একমাত্র ছেলে সাহেদ করিম।

এই সাহেদ করিমই বর্তমানে সমালোচিত প্রতারক। যিনি রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান ও রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক। করোনা ভাইরাসের ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎসহ নানা দুর্নীতি অনিয়মের মাধ্যমে গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। তবে সাহেদের জন্ম সাতক্ষীরায় হলেও তার ভয়ানক এই প্রতারণার খবর জানতেন না সাতক্ষীরার কেউ।

ব্যবসায়ী ও করিম মার্কেটের শম্পা ফিশের মালিক বিশ্বনাথ ঘোষ বলেন, ‘আমি তাদের ১৮০ বিঘা জমি লিজ নিয়ে ঘের ব্যবসা করতাম। পরবর্তীতে ২০০৫-২০০৭ সালের দিকে ঘেরের জমি পর্যায়ক্রমে বিক্রি করে দেন তারা। ১৮০ বিঘার মধ্যে আমি ৫০ বিঘা কিনেছি। এছাড়া দেবহাটা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গণি ৫০ বিঘা ও আরেক ব্যবসায়ী বশির আহম্মেদ ৫০ বিঘা কিনেছেন। বাকি ৩০ বিঘা স্থানীয় লোকজন বিভিন্নভাবে দখল করে নিয়েছে। এছাড়া ২০১১ সালের দিকে করিম মার্কেটটিও বিক্রি করে দেয় সাহেদের পরিবার। করিম মার্কেটটিও আমিসহ আরও দুজন কিনেছি।

সাহেদ করিমের দুর্নীতির বিষয়ে তিনি বলেন, তাদের বাব-চাচাদের সঙ্গে আমি মেলামেশা করেছি। হাইস্কুল লেভেল পর্যন্ত সাহেদ সাতক্ষীরায় ছিল। এরপর ঢাকায় চলে যায়। যে কারণে বিস্তারিত আমি বলতে পারব না। তবে বর্তমানে রিজেন্ট হাসপাতালে করোনাকালে প্রতারণার যে ঘটনাটি শুনছি সেটি যদি সত্যি হয় তাহলে সেটি খুবই দুঃখজনক। ২০-২৫ বছর আগে সাহেদ করিমের বিয়ে হয়েছিল সাতক্ষীরায়। তখন সাতক্ষীরায় এসেছিল সে। তারপর থেকে আমার সঙ্গে আর কখনো দেখা বা যোগাযোগ হয়নি। এরপর থেকে সে সাতক্ষীরায় এসেছে বলে জানা নেই।

sahed

করিম মার্কেটের আরেক ব্যবসায়ী একে ফিশের মালিক রুহুল কুদ্দুস। তিনি জানান, এই মার্কেটসহ এখানে ৫-৬ বিঘা জমির ওপর বসতি ছিল সাহেদের পরিবারের। তবে পর্যায়ক্রমে বিক্রি করতে করতে তাদের এখানে কোনো জমি নেই। মূলত তারা বাংলাদেশি নয় ভারতীয়। ভারত থেকে জমি বিনিময়ের মাধ্যমে সাতক্ষীরায় এসে বসতি গড়ে তোলেন। ১৯৬২ সালের জমির রেকর্ডে তার বাবার নাম রয়েছে। সাহেদ ঢাকায় গিয়ে এত বড় প্রতারক হয়েছে সেটি অজানা ছিল। শুনেই হতবাক হয়েছি।

সাহেদ করিমের মা সাফিয়া করিম ছিলেন সাতক্ষীরা জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ১৯৯৬ সাল থেকে আমৃত্যু তিনি এই দায়িত্ব পালন করেছেন বলে জানা গেছে।

সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ নজরুল ইসলাম বলেন, সাফিয়া করিম জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তবে তার ছেলে সাহেদ করিম সাতক্ষীরায় আওয়ামী লীগের কোনো কর্মকাণ্ডে কখনও সম্পৃক্ত ছিলেন না। এখন কেন্দ্রের কোনো উপকমিটিতে রয়েছে বলে শুনেছি। শহরের করিম সুপার মার্কেট তাদের ছিল। সেটিও তারা বিক্রি করে চলে গেছেন। তাদের ব্যাপারে বিস্তারিত কোনো তথ্য আমার কাছে নেই।

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সদর থানার ওসি (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ জানান, বর্তমানে আলোচিত সাহেদ করিম বা তার পরিবারের নামে সাতক্ষীরা থানায় কোনো অভিযোগ বা তথ্য নেই। তবে তার ব্যাপারে আমরা খোঁজ নিচ্ছি।

আকরামুল ইসলাম/এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।