করোনায় বেনাপোল বন্দরে ১১ কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতি

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক বেনাপোল (যশোর)
প্রকাশিত: ০৭:১০ পিএম, ১৩ জুলাই ২০২০

করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে আড়াই মাস আমদানি কার্যক্রম বন্ধ থাকায় অর্থবছর শেষে সরকারি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বেনাপোল স্থলবন্দরে ১১ কোটি ছয় লাখ টাকা ঘাটতি হয়েছে। বেনাপোল বন্দরের উপপরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বন্দর সূত্রে জানা যায়, বেনাপোল বন্দর থেকে ভারতের কলকাতা শহরের দূরত্ব ৮৩ কিলোমিটার। মাত্র তিন ঘণ্টায় কলকাতা থেকে একটি পণ্যবাহী ট্রাক আমদানি পণ্য নিয়ে পৌঁছাতে পারে বেনাপোল বন্দরে। তেমনি একই সময় বেনাপোল থেকে পণ্যবাহী ট্রাক পৌঁছায় কলকাতা শহরে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় এই পথে ব্যবসায়ীদের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে প্রবল আগ্রহ রয়েছে। দেশের স্থলপথে যে পণ্য আমদানি হয় তার ৭০ শতাংশ হয়ে থাকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে।

প্রতি বছর এই বন্দর দিয়ে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি হয়। যা থেকে সরকার প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব পায়। আমদানি পণ্যের মধ্যে শিল্প কারখানার কাঁচামাল, তৈরি পোশাক, কেমিক্যাল ও বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য রয়েছে। তবে এই পথে আমদানি কমলেও দিন দিন বাড়ছে রফতানির পরিমাণ। এছাড়া বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতে প্রায় আট হাজার কোটি টাকা মূল্যের বিভিন্ন পণ্য রফতানি হয়।

ভারত থেকে যেসব পণ্য আমদানি হয় প্রাথমিক অবস্থায় পণ্যের চালান বেনাপোল বন্দরের গুদামে রাখা হয়। আমদানি পণ্য লোড-আনলোড, রক্ষণাবেক্ষণ ও গুদাম ভাড়া বাবদ বন্দর কর্তৃপক্ষ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নির্ধারিত হারে রাজস্ব আদায় করেন। রাজস্বের টাকা বেনাপোল জনতা ব্যাংকে জমা দেয়ার পর আমদানি পণ্য বন্দর থেকে খালাস দেয়া হয়।

২০১৯-২০ অর্থবছরে বেনাপোল স্থলবন্দরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৯৫ কোটি ৮ লাখ টাকা। অর্থবছরের শেষ দিন পর্যন্ত এ স্থলবন্দরে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৮৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এ হিসাব অনুযায়ী ১১ কোটি ৬ লাখ টাকার রাজস্ব ঘাটতি। এসময় ভারত থেকে আমদানি হয়েছে ১৭ লাখ ৭৮ হাজার ৬২৮ মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের পণ্য। এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ভারত থেকে আমদানির পরিমাণ ছিল ১৮ লাখ ৩৬ হাজার ৯৫৩ মেট্রিক টন।

বেনাপোল আমদানি-রফতানিকারক সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক আনু বলেন, এই পথে রাজস্ব আয় বাড়াতে হলে বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন বাড়াতে হবে। এছাড়া বন্দরে বার বার রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ডে অনেক ব্যবসায়ী পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছেন। ক্ষতিপূরণ না দেয়ায় এই বন্দর ছেড়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, বেনাপোল বন্দরের বর্তমান ধারণক্ষমতা প্রায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন। তবে এখানে সবসময় পণ্য থাকে প্রায় দেড় লাখ মেট্রিক টন। চাহিদা অনুপাতে জায়গা না থাকায় মূল্যবান আমদানি পণ্য রাখতে হয় খোলা আকাশের নিচে। এতে সুবিধাবঞ্চিত হয়ে ব্যবসায়ীরা অনেকে এই বন্দর ছেড়ে বাণিজ্য করছেন অন্য বন্দর দিয়ে। ফলে বন্দরটিতে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হচ্ছে না।

বেনাপোল স্থলবন্দরের উপপরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার বলেন, করোনার কারণে প্রথমত আড়াই মাস ধরে আমদানি বন্ধ ছিল। এই কারণে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে। ইতোমধ্যে বেনাপোল বন্দরে অনেক অবকাঠামোর উন্নয়ন হয়েছে। আরও যেসব উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে এর মধ্যে বন্দরে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, জেলখানার মতো বন্দরের চারদিকে প্রাচীর নির্মাণ ও নতুন জায়গা অধিগ্রহণ। এসব উন্নয়নকাজ সমাপ্ত হলে বেনাপোল বন্দর বিশ্বের কাছে একটি আধুনিক বন্দর হিসেবে পরিচিতি পাবে। তখন আমদানি বৃদ্ধির পাশাপাশি রাজস্ব বাড়বে দ্বিগুণ।

জামাল হোসেন/এএম/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।