১৩ লাখ টাকার সুরক্ষা সামগ্রী কোথায়?
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আক্তারের বিরুদ্ধে করোনাভাইরাস সুরক্ষা সামগ্রী ক্রয় এবং বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সুরক্ষা সামগ্রী কেনা আখাউড়া উপজেলা পরিষদের তালিকা ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের তালিকায় টাকার পরিমাণ এবং সামগ্রী কেনায় পরিমাণের পার্থক্য রয়েছে। এসব সুরক্ষা সামগ্রী ক্রয় ও বিতরণের মূল দায়িত্বে ছিলেন ইউএনও তাহমিনা আক্তার। সুরক্ষা সামগ্রী ক্রয় বাবদ উপজেলা উন্নয়ন তহবিল থেকে ১২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়।
আখাউড়া উপজেলা পরিষদের সুরক্ষা সামগ্রী কেনার তালিকা সূত্রে জানা গেছে, দেড় লাখ টাকায় পাঁচ হাজার ১০০টি মাস্ক, এক লাখ ৩৫ হাজার ৫০০ টাকায় তিন হাজার ৯৩০টি গ্লাভস, দুই লাখ ১০ হাজার টাকায় ৬০টি ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই), দুই লাখ ৭৭ হাজার ৫৫০ টাকায় ৯০টি গগলস, ৩০০টি ক্যাপ, ১৬০ জোড়া সু-কাভার, ১০০টি ফেস কাভার, ২০ জোড়া গামবুট, ৫০টি স্যানিটাইজার, ৩৩টি অ্যাপ্রন, ছয়টি রেইনকোট, ১০০টি হ্যান্ড স্প্রে, এক হাজার ২০০টি ভেকুয়াম টিউব, এক হাজার ২০০টি সপস্টিক, চারটি থার্মোমিটার, ৫০টি ওটি গাউন ও ছয়টি স্প্রে মেশিন এবং তিন লাখ ৪৭ হাজার ৩০৮ টাকায় ২৬টি বেসিন ও সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট ও ৪ শতাংশ কর মিলিয়ে এসবে মোট খরচ দেখানো হয়েছে ১২ লাখ ৮৭ হাজার ৭২৫ দশমিক ২৩ টাকা। এসব কেনার তালিকায় বিভিন্ন সামগ্রীর পরিমাণ ও টাকার মিল নেই।
কাগজ-কলমে ২৬টি বেসিন নির্মাণের কথা উল্লেখ থাকলেও উপজেলায় ব্যবহার উপযোগী ১৫টি বেসিন পাওয়া গেছে। নিম্নমানের কাজের জন্য বাকি বেসিনগুলো ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
তালিকার নথি ঘেঁটে দেখা যায়, গত ১৩ মার্চ করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষা পেতে এসব সুরক্ষা সামগ্রী কেনার হিসাব করা হয়। ওই বিলে ১৫ মার্চ ইউএনও, উপজেলা স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ ও সার্ভেয়ার জহুরুল ইসলাম স্বাক্ষর করেন। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কাসেম ভূঁইয়া স্বাক্ষর করলেও কোনো তারিখ উল্লেখ করেননি। তাদের স্বাক্ষরযুক্ত ওই তালিকায় এসব প্রকল্প প্রস্তুতির তারিখ উল্লেখ রয়েছে ২৭ মে।
২৬ মার্চ দেশে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। তখনও আখাউড়ায় করোনা রোগী শনাক্ত হয়নি। আখাউড়ায় ৯ এপ্রিল প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়।
এতো টাকার সুরক্ষা সামগ্রী কোথায় বিতরণ করা হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আদৌ এসব কেনা হয়েছে কি-না অথবা বিতরণ হয়েছে কি-না সেটি নিয়েও তৈরি হয়েছে সন্দেহ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আখাউড়া উপজেলা প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, একই ভবনে থাকা সত্ত্বেও আমরা কোনো সুরক্ষা সামগ্রী পাইনি।
আখাউড়া উপজেলার মনিয়ন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল ভূঁইয়া বলেন, আমাকে কিছু ব্লিচিং পাউডার দেয়া হয়েছে। এছাড়া অন্য কিছু পাইনি।
আখাউড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন বেগ শাপলু বলেন, প্রশাসনকে কোথাও সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করতে দেখিনি। আমি নিজেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছি। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাকেও কোনো সুরক্ষা সামগ্রী দেয়া হয়নি।
আখাউড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাসেম ভূঁইয়া বলেন, কাগজপত্র দেখেই স্বাক্ষর করেছি। যদি কোনো গরমিল থাকে তাহলে আমি বলতো পারব না। এসব কেনাকাটা ইউএনও করেছেন।
অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মাস্ক ও পিপিসহ অন্যান্য সামগ্রী বেশি দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদে এবং সাধারণ মানুষের মাঝে মাস্ক, স্যানিটাইজার ও হ্যান্ড গ্লাভস বিতরণ করা হয়েছে। অনিয়ম করা হয়নি।
আজিজুল সঞ্চয়/এএম/এমকেএইচ