মামলায় সড়কের সংস্কার কাজ বন্ধ, লাখো মানুষের দুর্ভোগ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি মেহেরপুর
প্রকাশিত: ০১:৩৮ পিএম, ০৭ অক্টোবর ২০২০

খানাখন্দ আর বিভিন্ন স্থানে গর্তের কারণে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার তিনটি সড়ক। টেন্ডার হওয়ার প্রায় আড়াই বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারদের মামলা সংক্রান্ত জটিলতায় শুরু হয়নি সড়কের সংস্কার কাজ। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে উপজেলার লাখো মানুষ।

ঠিকাদাররা বলছেন- কাজ পাওয়ার পরও ওয়ার্ক ওর্ডার না পাওয়ায় তারা আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন।

জানা গেছে, মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বামুন্দী-কাজিপুর সড়কে ঝুঁকি নিয়েই চলছে যানবাহন। মাঝে মধ্যেই ঘটছে দুর্ঘটনা। বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। মালামাল আনা নেয়া করতে ব্যবসায়ীদের বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে। উৎপাদিত পণ্যও সঠিক সময়ে বিক্রি করতে পারছেন না কৃষকরা।

একই অবস্থা উপজেলার কাথুলী-কাজিরপুর ও মোহাম্মদপুর-চরগোয়ালগ্রাম সড়কের। অথচ ২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর মেহেরপুরের ৯টি সড়ক সংস্কারে দরপত্র আহ্বান করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর।

jagonews24

লটারির মাধ্যমে তিনটি সড়কের কাজ পায় চুয়াডাঙ্গার জাকাউল্লাহ অ্যান্ড ব্রাদার্স, কুষ্টিয়ার সৈকত এন্টারপ্রাইজ ও সায়েদা বেগম বিশ্বাস এন্টারপ্রাইজ নামে তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সড়ক সংস্কারে ব্যয় ধরা হয় পাঁচ কোটি ৬০ লাখ টাকা। বাকি ছয়টির কাজ পান স্থানীয় ঠিকাদার।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মেহেরপুরের উত্তরপূর্বে একটি বড় অংশের কয়েক লাখ মানুষের চলাচল এ তিনটি সড়ক দিয়ে। পাশাপাশি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার সঙ্গে সংযোগ রয়েছে। ফলে এই সড়কগুলো গাংনী উপজেলা ও কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার মানুষের চলাচলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় সড়কগুলোর বিভিন্ন স্থানে ভেঙে-চুরে গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। ধীরে ধীরে রাস্তার খোয়া আর বিটুমিন উঠে গর্তের সংখ্যা বাড়ছে। সঙ্গে বাড়ছে জনদুর্ভোগ।

ভাঙাচোরা সড়কগুলোতে প্রায়ই আটকে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রকার যানবহান। আর দুর্ঘটনা যেন নিত্যসঙ্গী। তিনটি সড়কের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা বামন্দী-নওদাপাড়া সড়কের বালিয়াঘাট গ্রামে। আমেনা ভ্যারাইটি স্টোরের সামনে প্রায় দুইশ ফুট এলাকা দেখলে মনে হবে একটি পুকুর।

সড়কে দুর্ভোগের বিষয়ে আমেনা ভ্যারাইটি স্টোরের মালিক জুবায়েদুর রশিদ বলেন, এখানে প্রতিনিয়তই যানবাহন আটকে যায়। অনেক যাত্রী পানির মধ্যে পড়ে আহত হন। প্রায় সময়ই আমরা তাদেরকে উদ্ধার করি।

মঠমুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল আহম্মেদ জানান, স্থানীয় ঠিকাদারদের ছয়টি কাজ শুরু হলেও বাইরের ঠিকাদারের কাজগুলো এখনও শুরু হয়নি। বার বার এলজিইডিতে ধরনা দিয়েও মেলেনি কোনো সমাধান। ফলে সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

বামন্দীর বাসিন্দা বাসচালক আলী হোসেন বলেন, বামন্দী-কাজিপুর সড়ক দিয়ে কিছু বাস দৌলতপুর হয়ে ঢাকায় চলাচল করে। রাস্তার এ বেহাল অবস্থার কারণে বাসগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে।

jagonews24

বালিয়াঘাট গ্রামের বাসিন্দা শান্তি খাতুন বলেন, রাস্তার পাশ দিয়ে ছেলে-মেয়েরা চলাচল করতে পারে না। এ পানিতে ডুবে শিশুরা মারা যেতে পারে। অপরদিকে ভাঙা রাস্তার কারণে আমাদের বাড়িসহ রাস্তার আশপাশের বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

ঠিকাদার জাকাউল্লাহ জানান, এলজিইডি কর্তৃপক্ষ কোনো কারণ ছাড়াই তাদের কাজ বাতিল করেছে। এ জন্য আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন তারা।

এলজিইডির গাংনী উপজেলা প্রকৌশলী গোলাপ আলী শেখ বলেন, মামলার কারণে অন্য কোনো প্রকল্প থেকে সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে বন্যা পরবর্তী রাস্তা সংস্কার প্রকল্পে রাস্তা তিনটির নাম দেয়া হয়েছে। এই মুহূর্তে যদি মামলা নিষ্পত্তি অথবা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মামলা তুলে নেয় তাহলে সংস্কার কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেহেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকন বলেন, গত সপ্তাহে ঢাকায় গিয়েও আমি রাস্তা তিনটি সম্পর্কে মন্ত্রীকে জানিয়ে এসেছি। তবে আমরা কেউ আদালতের ঊর্ধ্বে নই। ঠিকাদার ও এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলীকে একসঙ্গে বসে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে। উচ্চ আদালতের কার্যক্রম চালু হলে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির মাধ্যমে সংস্কার কাজ শুরু হবে।

আসিফ ইকবাল/আরএআর/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।