সমাজসেবা কর্মকর্তা কাদেরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি মেহেরপুর
প্রকাশিত: ১২:২০ পিএম, ০৯ নভেম্বর ২০২০

মেহেরপুর সমাজসেবা অফিসের উপ-পরিচালক আব্দুল কাদেরের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের প্রশিক্ষণের জন্য বরাদ্দ টাকাও তিনি আত্মসাৎ করেছেন। সরকারি গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছেন।

জানা গেছে, সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুল কাদের বৃহস্পতিবার আসলেই অফিসের গাড়ি নিয়ে রওনা দেন নিজ বাড়ি পাবনার উদ্দেশ্যে। এজন্য একজন ব্যক্তিগত গাড়িচালকও রেখেছেন। গেল চার মাসে তেল খরচ বাবদ অফিস থেকে ৪৮ হাজার টাকা উত্তোলন করেছেন। অথচ জেলার ভেতরে তেমন কোনো অনুষ্ঠানই ছিল না। আর অফিসে থেকেও বাড়ি ভাড়া বাবদ উত্তোলন করেছেন প্রায় এক লাখ টাকা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তার সাফ জবাব- সরকারি চাকরি হিসেবে সব কিছুই করার অধিকার আছে তার। করোনাকালে তিনি প্রতি বৃহস্পতিবার বাড়ি গেছেন বলেও জানান।

গাড়িচালক মিলন হোসেন জানান, মাসের অন্য সময়ে বাস চালালেও প্রতি সপ্তাহে বৃহস্পতিবার থেকে রোববার জেলা সমাজসেবা উপ-পরিচালকের বাড়ি পাবনায় যাতায়াত করেন। মাসে ছয় হাজার টাকা বেতন পান।

শুধু অফিস নয়, তার চোখ পড়েছে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের জন্য বরাদ্দ টাকার ওপরও। হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন শীর্ষক ১২ দিনের প্রশিক্ষণে উপস্থিতি থাকার কথা ৩০ জনের। অথচ অফিসের ফাইল ঘেটে ১৪ জনের উপস্থিতি দেখা গেছে ।

এ বিষয়ে হিজরা সীমার সঙ্গে কথা হয়। তিনি অভিযোগ করেন, প্রতিদিন নাস্তা দেয়া হয়নি, খাবারের মানও ছিল খুবই নিম্নমানের। ভেন্যু ভাড়া বাবদ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও অফিসের গ্যারেজে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।

এদিকে রোববার (৮ নভেম্বর) দুপুরে সমাজসেবা অফিসে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গেলে উপ-পরিচালকসহ অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা মিলে সাংবাদিকদের মারধর করেন। ক্যামেরা ভেঙে দেন।

মারধরের শিকার ডিবিসির জেলা প্রতিনিধি আবু আক্তার করণ ও বাংলাদেশ রয়টার্সের জেলা প্রতিনিধি জাকির হোসেন জানান, তারা সংবাদ সংগ্রহের জন্য জেলা সমাজসেবা অফিসে যান। পরে সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুল কাদের গোপন কক্ষে নিয়ে তাদের আটকে রাখেন। এরপর আব্দুল কাদের, একই অফিসের প্রবেশন অফিসার সাজ্জাদ হোসেন ও আব্দুল কাদেরের ব্যক্তিগত ড্রাইভার মিলনসহ বেশ কয়েকজন তাদের মারধর করেন। পরে তাদের ক্যামেরা ভেঙে ফেলেন তারা। এ ঘটনায় উপ-পরিচালকসহ চারজনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে কোনো সদুত্তর নেই জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আব্দুল কাদেরের। তিনি বলেন, সরকারি চাকরি হিসেবে সব কিছুই করার অধিকার আছে আমার।

সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ দারা খাঁন জানান, সাংবাদিকদের মারধরের অভিযোগে থানায় জেলা সমাজসেবা উপ-পরিচালকের নামে একটি জিডি করা হয়েছে। যেহেতু তিনি সরকারি চাকরি করেন তাই তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক ড. মনসুর আলম জানান, এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তুষার কুমারকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া বিষয়টি প্রতিমন্ত্রী, সমাজসেবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও বিভাগীয় কমিশনারকে অবহিত করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট হাতে পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আসিফ ইকবাল/আরএআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।