অকারণে দাঁড়িয়ে আছে ২১৭ স্লুইচ গেট

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ঝালকাঠি
প্রকাশিত: ১২:৪৫ পিএম, ১৫ জানুয়ারি ২০২১

উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠিতে ৮৮ কিলোমিটার নদী সীমা ও ১৫৮ কিলোমিটার খাল সীমা রয়েছে। পাশাপাশি অসংখ্য ছোট খাল ও বেঁড়ের পানি কৃষির সেচ কাজে এ অঞ্চলের মানুষ ব্যবহার করে আসছে যুগ যুগ ধরে।

জলের এ উৎস থেকে কৃষিকাজে ব্যাপক সহায়তার জন্য দক্ষিণাঞ্চলে আশির দশকে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বরিশাল ইরিগেশন প্রজেক্ট (বিআইপি) নামের একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। যার অধীনে বরিশাল বিভাগের অন্য জেলাগুলোর মতো ঝালকাঠিতেও অনেক পাম্পহাউজ, স্লুইচ গেট, রেগুলেটর, ফ্লাশ ইনলেট ও ক্লোজার বসানো হয়। ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ড এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

Special Report Country

সরেজমিনে দেখা যায়, স্লুইচ গেটগুলো এখন আর কোনো কাজেই লাগছে না। খাল দখল করে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে যুগের পর যুগ। এগুলোর কারণে পানির স্বাভাবিক স্রোত কমে গিয়ে পলি জমে খাল অনেক জায়গায় সরু হয়ে আসছে।

কেউ কেউ আবার স্লুইচ গেটগুলোর ওপর কাঠ দিয়ে সাঁকো হিসেবে ব্যবহার করছে। দুর্ঘটনার ঝুঁকিও মানছেন না তারা।

ঝালকাঠি জেলা পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, জেলায় মোট ২১৭টি স্লুইচ গেট ও ২৮টি পাম্প হাউজ রয়েছে। এর মধ্যে ঝালকাঠি সদর উপজেলায় ১৪টি পাম্প হাউজে ১১২টি স্লুইচ গেট ও নলছিটি উপজেলায় ১৪টি পাম্প হাউজে ১০৫টি স্লুইচ গেট রয়েছে। যেগুলো বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো)’র বিআইপি পোল্ডারের অধীনে।

Special Report Country

কাটাখালী পোল্ডার বা উপ-প্রকল্পে আছে তিনটি রেগুলেটর। যেগুলো নলছিটির সুবিদপুর ইউনিয়নে স্থাপিত হয়েছে। এছাড়া ঝালকাঠির রাজাপুর ও কাঠালিয়া উপজেলা এবং পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া উপজেলায় পোল্ডার-৫ বা বিষখালী প্রকল্পে আটটি রেগুলেটর, দুইটি ফ্লাশ ইনলেট এবং একটি ক্লোজার আছে।

দীপক রঞ্জন দাশের দেয়া তথ্যে রাজাপুর ও কাঠালিয়া উপজেলায় কোনো স্লুইচ গেটের কথা উল্লেখ না থাকলেও সরজমিনে রাজাপুর উপজেলায় অনেকগুলো স্লুইচ গেট অকার্যকর অবস্থায় দেখা যায়।

নলছিটি উপজেলার শরীফ ওসমান জানান, বিভিন্ন ছোট খালে জন্মের পর থেকেই কিছু স্লুইচ গেট দেখছি। কিন্তু এগুলো কী কাজে লাগে তা জানি না।

কৃষক আবুল খায়ের মৃধা বলেন, ‘হুদাহদি হালাইয়া থুইছে শুইচ গেটটি, এয়া কি মোগো কোনো কামে লাগে? আরো খালগুলার পানি আইটকা পড়ে, ধানখ্যাতে পানি দেতে এয়া কোনো কামে লাগে না’।

Special Report Country

স্লুইচ গেটগুলো অপসারণ করা উচিত কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে জেলা পানি উন্নয়ন বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. সাজেদুল বারী জানান, বিষয়টি একাধিকবার উপর মহলকে জানানো হয়েছে। কিন্তু সরকার উদ্যোগ না নিলে বা বড় আকারের অর্থ বরাদ্দ না হলে ঝালকাঠিসহ বরিশাল অঞ্চলের ছোটো খালগুলোর এ স্লুইচ গেটগুলো অপসারণ করা সম্ভব না।

তিনি আরো জানান, প্রজেক্টটি সেচের জন্য করা হলেও এটি শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি। পাম্পিং করে পানি সংরক্ষণের কথা ছিল যখন পানির সংকট থাকবে। আবার সেচকাজ হয়ে গেলে গেট খুলে পানি ছেড়ে দেয়ার কথা। এখন দেখা যায় অনেক সময় পানি স্লুইচ গেট উপচে প্রবাহিত হয়।

একই প্রশ্ন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, চরাঞ্চলের স্লুইচ গেট আর ঝালকাঠির মতো উপকূলীয় জেলার স্লুইচ গেট অঞ্চলভেদে একই রকমের হওয়ার কথা না থাকলেও সব এক, যেটা অপ্রত্যাশিত। চরাঞ্চলে পলি আসে কেবল উজান থেকে আর ঝালকাঠিতে পলি আসে দুদিক থেকে উজান আর সাগর।

Special Report Country

শুধু জলের প্রবাহ রক্ষণাবেক্ষণই সমস্যা না, ল্যান্ড ফরমেশন প্রসেসও বাধাগ্রস্ত হয়। তাই ছোটো খালগুলোর স্লুইচ গেটগুলো অপসারণ করা উচিত।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)’র কেন্দ্রীয় সভাপতি আবু নাসের খান বলেন, যে পদ্ধতিতে এগুলো বানানো হয়েছিল, তা ভুল ছিল। এগুলো নষ্ট হওয়ারই কথা আবার সঠিকভাবে সংরক্ষণও করা হয় না। এগুলো অপসারণ করে প্রয়োজন হলে নতুনভাবে এমন কিছু করতে হবে যেন খালের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি না হয়।

সুজন’র ঝালকাঠি জেলা সভাপতি ও পরিবেশকর্মী ইলিয়াস সিকদার ফরহাদ জানান, এ অঞ্চলের খালগুলোর বোঝা এখন এ স্লুইচ গেটগুলো।

আতিকুর রহমান/এসএমএম/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।