ঝালকাঠিতে পান সঙ্কট, আনতে হচ্ছে রাজশাহী থেকে
সামাজিক অনুষ্ঠানে আপ্যায়ন পূর্ণতা পায় পান-সুপারির মাধ্যমে। এছাড়া, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ নিয়মিত পান খেয়ে থাকেন। তবে বর্তমানে বাজারে পানের দাম চড়া। ঝালকাঠি জেলার বিভিন্ন হাটবাজারে ৮০টি (স্থানীয়ভাবে ‘এক বিরা’ হিসেবে পরিচিত) পান ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ মাসখানেক আগেও বাজারে যা ছিল ১৮০ থেকে ২২০ টাকার মধ্যে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদন না হওয়ায় ঘাটতি মেটাচ্ছে রাজশাহীর পান।
সম্প্রতি পান বাজারে ঘুরে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা রাজশাহী থেকে আনা পানই বিক্রি করছেন। একটু পুরু ধরনের এসব পানের রং স্বাভাবিকের চেয়ে একটু লালচে।
বিক্রেতা হামিদুর রহমান ও মো. ওসমান জাগো নিউজকে জানান, এক মাসে আগেও চাষিরা পানের দাম পাননি। তবে এখন বাজারে পানের দাম বাড়ছে। উৎপাদন কম হওয়ায় দাম বাড়ছে বলে মনে করছেন তারা।
সদর উপজেলার ছত্রকান্দা গ্রামের চাষি সাব্বির আহমদ জানান, ৬০ শতক জমিতে পান চাষে সব মিলিয়ে তার প্রায় দুই লাখ টাকা খরচ হয়েছে। বরজে পানের উৎপাদন প্রথমদিকে ভালো হলেও শীত মৌসুম আসার সঙ্গে সঙ্গেই উৎপাদন অনেকটাই কমে যায়। আবহাওয়া বদলাতে শুরু করলে আবার নতুন পানের ফলন শুরু হবে। তখনও এমন দাম থাকলে ভালো মুনাফা হবে বলে তার আশা।

চাষিরা জানান, প্রতি একর জমিতে পাঁচ-ছয়টি পানের বরজ করা যায়। এক একর জমিতে পান চাষ করতে খরচ লাগে আড়াই থেকে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা। বছরে প্রতি একর জমিতে উৎপাদিত পান বিক্রি হয় গড়ে প্রায় ২০ লাখ টাকায়। এতে খরচ বাদ দিয়ে চাষিদের ১২ থেকে ১৬ লাখ টাকার মতো মুনাফা থাকে। কিন্তু গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে উৎপাদন না থাকায় তাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। বর্তমান বাজারের দাম অব্যাহত থাকলে তারা প্রচুর লাভ করতে পারবেন।
এদিকে, ঝালকাঠি জেলার পানচাষিরা পড়েছেন আরেক বিপর্যয়ের মুখে। অজ্ঞাত রোগ এবং শীত দীর্ঘায়িত হওয়ায় পানের পাতা ঝরে যাচ্ছে। পুরো দক্ষিণাঞ্চলের পানচাষিদেরই এমন অবস্থা বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। ফলে চলতি মৌসুমে জেলার চাষিরা হেক্টর প্রতি ৫ থেকে ৬ লাখ টাকারও বেশি লোকসান দিয়েছেন।
কৃষি বিভাগের পরামর্শ মতো কীটনাশক দেয়ার পরেও পাতা ঝরা এই অজ্ঞাত রোগ থেকে পানের বরজ রক্ষা করা যাচ্ছে না। চাষিদের দাবি, এই রোগে ঘূর্ণিঝড় সিডরের চেয়েও বেশি ক্ষতি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঝালকাঠি জেলায় বর্তমানে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে পানের চাষ হচ্ছে এবং প্রতিনিয়তই তা সম্প্রসারিত হচ্ছে। চার মাস আগেও ঝালকাঠির পান দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর চাহিদা পূরণ করে রাজধানী এবং উত্তরাঞ্চলে সরবরাহ করা হতো। কিন্তু পরিস্থিতি বদলে যাওয়ায় এখন উল্টো রাজশাহী থেকে চড়া দামে কিনে আনতে হচ্ছে। এ কারণে পানের বাজারেও আগুন লাগার মতো অবস্থা হয়েছে।
মো. আতিকুর রহমান/এসএস