ঝালকাঠির ১২৩ মাদরাসায় নেই শহীদ মিনার
যে ভাষার জন্য বুকের তাজা রক্ত ঢেলে শহীদ হয়েছেন বাংলার দামাল ছেলেরা, সেই মাতৃভাষা বাংলা এখনও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে উপেক্ষিত মাদরাসাগুলোতে। বিশেষ করে বেসরকারিভাবে পরিচালিত কওমি মাদরাসাগুলোয় বাংলা ভাষার চর্চা একেবারেই সীমিত।
আর তাই ভাষা দিবসে দেশের বিদ্যালয়গুলোতে নানা আয়োজন থাকলেও মাদরাসায় নেই কোনো আয়োজন। শুধু রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষিত ছুটি পালিত হয় এসব মাদরাসায়।
ঝালকাঠি জেলার আলিয়া এবং কওমীর কোনো মাদরাসাতেই নেই শহীদ মিনার।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের আলিয়া মাদরাসাগুলো সরকার নিয়ন্ত্রিত মাদরাসা বোর্ডের অধীনে পরিচালিত হয়। এসব মাদরাসার পাঠ্যক্রম সরকার অনুমোদিত। সরকারের বাধ্যবাধকতা থাকায় ছোট আকারে পালিত হয় একুশে ফেব্রুয়ারি বা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।
সরকারের স্বীকৃতির বাইরে থাকা বেসরকারিভাবে পরিচালিত কওমি মাদরাসাগুলোতে একুশে ফেব্রুয়ারিতে কোনো আয়োজন থাকে না। সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় শহীদদের স্মরণে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর রীতিকে ‘গুনাহের কাজ’ বলে জানে এসব কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীরা।
এক্ষেত্রে শিক্ষকদের নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে কঠোরভাবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষিত দিবসগুলো পালনে সরকারের বাধ্যবাধকতা থাকায় কিছু আলিয়া এবং কওমি মাদরাসায় শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া-মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। আবার কিছু মাদরাসায় একুশে ফেব্রুয়ারি নিয়ে দেয়ালিকাও প্রকাশিত হয়।
ঝালকাঠি এনএস কামিল মাদরাসা, ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসা, কুতুবনগর আযিযীয়া আলিম মাদরাসাসহ বেশিকিছু মাদরাসা ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় সবগুলোই বন্ধ। কোনো মাদরাসা অঙ্গনেই স্থায়ী বা অস্থায়ী কোনো শহীদ মিনার নেই।
ঝালকাঠি জেলায় কামিল মাদরাসা রয়েছে ১টি, ফাজিল মাদরাসা ১৯টি, আলিম মাদরাসা ১৬টি, দাখিল মাদরাসা রয়েছে ৮৭টি বলে জেলা শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়। তবে জেলায় কতটি কওমী মাদরাসা আছে তার কোনো পরিসংখ্যান নেই কোনো দফতরেই।
জানা গেছে, ব্রিটিশদের ইংরেজ শিক্ষা ব্যবস্থাকে প্রতিহত করে ইসলামভিত্তিক শিক্ষার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ১৮৬৬ সালে মাওলানা কাসেম নানুতবীর ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। এই মাদরাসাটিই কওমি মাদ্রাসা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়।
এসব মাদ্রাসায় ৯টি শ্রেণি (স্তর) তাইসির, মিজান, নাহুমির, হেদায়াতুন নাহু, কাফিয়া, শরহে জামি, জালালাইন, মেশকাত, বুখারি শরিফ নামে পরিচিত। এই শ্রেণিগুলোর মধ্যে তিনস্তরে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে বাংলা পড়ানো হয়। এরপর শুধুই আরবি, ফার্সি, উর্দু ভাষায় পাঠদান করা হয়।
নুরানি মক্তব এবং হেফজতে শুধু কোরআন শিক্ষার জন্য পড়ানো হয়। তাইসির, মিজান, নাহুমির জামাতে (শ্রেণি) বাংলা পড়ানো হয়। তবে শুধু তাইসিরে বাংলা সাহিত্যের সঙ্গে পড়ানো হয় ব্যাকরণ।
মিজান, নাহুমির জামাতে বাংলায় পড়ানো হয় ভূগোল ও সামাজিক বিজ্ঞান। এরপরের শ্রেণিগুলোতে বাংলা নেই। তবে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র আরবি-ফার্সি-উর্দু হলেও বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই উত্তর দেয় বাংলায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঝালকাঠি এন এস কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা গাজী মুহাম্মদ শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘আগে মাদরাসাগুলোতে শহীদ দিবস পালন করা হতো না। এখন অনেক মাদরাসায় সীমিত আকারে হলেও পালন করা হচ্ছে। আর রাষ্ট্রীয় দিবস পালন করা সবার উচিত। দেশের বিধান মানতে ধর্মে কোনো বাধা নেই’।
ঝালকাঠি জেলা শিক্ষা অফিসার মো. সিদ্দিকুর রহমান জানান, সরকারিভাবে মাদরাসাগুলোতে জাতীয় দিবস উদযাপনের নির্দেশনা রয়েছে। অনেক মাদরাসা দিবসটি পালনও করে। কিন্তু শহীদ মিনার নির্মাণে কোনো বরাদ্দ না থাকায় মিনার স্থাপন করছেন না মাদরাসা কর্তৃপক্ষ।
আতিকুর রহমান/এসএমএম/এমএস