কোটিপতি ছাত্রলীগ নেতা রেজাউল করিম গ্রেফতার
গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীতে বহুল আলোচিত কোটিপতি ছাত্রলীগ নেতা মো. রেজাউল করিমকে (৩২) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাত সোয়া একটার দিকে মাদক ও চাঁদাবাজী মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ দক্ষিণ) ইলতুৎমিশ বিষিয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ওই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, টঙ্গী পূর্ব থানার একটি মামলায় রিমান্ডে থাকা আসামি জাকির হোসেনের স্বীকারোক্তি মতে টঙ্গী পূর্ব থানাধীন হিমারদীঘি আমতলী কেরানীরটেক এলাকায় তার নিজ বাসার আলমারি থেকে পাঁচশ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। পরে অভিযানকালে জাকির হোসেনের ভাই মো. নবীন হোসেনের কাছ থেকে ২৯৪ পুরিয়া গাঁজা উদ্ধার করা হয়। এ সময় পুলিশ নবীন হোসেনকেও গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃত জাকির হোসেন পুলিশকে জানান, টঙ্গীর নোয়াগাঁও হিমারদিঘী এলাকার হোসেন আলীর ছেলে ছাত্রলীগ নেতা রেজাউল করিমের সরবরাহ করা ইয়াবা জাকির হোসেন দীর্ঘদিন যাবৎ ক্রয়-বিক্রয় করে আসছেন। ইয়াবা বিক্রির লভ্যাংশ তারা আনুপাতিক হারে ভাগ করে নেন।
পরে মঙ্গলবার দায়ের করা একটি চাঁদাবাজী মামলায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে টঙ্গীর নোয়াগাঁও এলাকার বাসা থেকে ছাত্রলীগ নেতা রেজাউল করিমকে গ্রেফতার করে।
স্থানীয়রা জানায়, গাজীপুর মহানগরের আলোচিত ছাত্রলীগ নেতা মো. রেজাউল করিম। কক্সবাজার থেকে মাদক এনে টঙ্গীর বিভিন্ন কারবারিদের হাতে পৌঁছে দিতেন তিনি। সম্প্রতি সাজ্জাদুল ইসলাম মনির নামে এক ব্যবসায়ীর কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন ছাত্রলীগের এই নেতা। ভুক্তভোগীর স্ত্রী শিল্পী আক্তার এ ঘটনায় বাদী হয়ে টঙ্গী পশ্চিম থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। সেই মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে রেজাউল করিমকে।
সম্প্রতি গণমাধ্যমে ছাত্রলীগ নেতা রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের পর থেকেই ওই ছাত্রলীগ নেতার বিষয়ে ব্যাপক অনুসন্ধানে নামে পুলিশ। তারই জেরে ইয়াবা কারবারে রেজাউলের সম্পৃক্ততা পায় পুলিশ।
স্থানীয়রা জানায়, রেজাউল করিম গাজীপুরের টঙ্গীর হিমারদিঘী নোয়াগাঁও এলাকার হোসেন আলীর ছেলে। রেজাউলের বাবা আগে টঙ্গী রেলস্টেশনের পাশে কাপড় সেলাইয়ের কাজ করতেন। চার ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট রেজাউল পুবাইল আদর্শ কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ২০০৭ সালে টঙ্গী সরকারি কলেজে ডিগ্রিতে ভর্তি হওয়ার পর পড়ালেখার খরচ জোগাতে রেজাউল করিম বাসের টিকিট কাউন্টারে কাজ নেন। পড়াশোনা চালিয়ে যেতে রেজাউলের এই সংগ্রাম অনেকেরই নজর কেড়েছিল।
কিন্তু তখনই মাদক ব্যবসায় যুক্ত হন রেজাউল। টিকিট বিক্রির পাশাপাশি ফেনসিডিলও বিক্রি শুরু করেন। হাতে টাকা আসতে থাকলে একের পর এক ভ্যাগের চাকা ঘুরতে থাকে।
স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতারা জানান, পাঁচ বছর আগে বিয়ে করেন তিনি। একটি মেয়েও রয়েছে। ছাত্রত্ব নেই অনেক দিন। তবু ছাত্রলীগের পদে আছেন। ২০১৬ সালে রেজাউল ছাত্রলীগের পদ পাওয়ার পর ফেনসিডিল ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে শুরু করেন ইয়াবা ব্যবসা। টেকনাফ ও কক্সবাজার থেকে নিজের পরিচয় ও নিজের গাড়ি দিয়ে তিনি ইয়াবা নিয়ে আসতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। মাত্র চার বছরে মাদক ব্যবসা করে কোটিপতি বনে গেছেন রেজাউল।
আমিনুল ইসলাম/এফএ/এএসএম