মায়ের লাশ দেখতে গিয়ে স্বামী-সন্তান সব হারালেন আদুরি

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি মাদারীপুর
প্রকাশিত: ০৩:২৩ পিএম, ০৩ মে ২০২১

মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার দোতরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে বসে কাঁদছিলেন ৩৫ বছর বয়সী আদুরি বেগম। তাকে সান্ত্বনা দেয়ারও কেউ নেই। প্রিয় স্বজন হারানোর এ কান্না যেন থামছেই না। শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌপথে স্পিডবোট দুর্ঘটনার প্রতক্ষদর্শী তিনি। দুর্ঘটনায় তার স্বামী আরজু মিয়া (৪০) ও দেড় বছর বয়সী ছেলে ইয়ামিন প্রাণ হারিয়েছেন।

আদুরির বাড়ি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার মাইগ্রো গ্রামে। স্বামী-সন্তান নিয়ে থাকতেন ঢাকার হাসনাবাদে।

রোববার রাতে আদুরির মা মনোয়ারা বেগম মারা যান। মায়ের লাশ দেখতে স্বামী সন্তান নিয়ে গ্রামে যাচ্ছিলেন তিনি। সকাল ৬টার দিকে অন্তত ৩২ যাত্রী নিয়ে স্পিডবোটটি শিমুলিয়া ঘাট থেকে শিবচরের বাংলাবাজারের উদ্দেশে ছেড়ে আসে। সাড়ে ৬টার দিকে বাংলাবাজার ঘাটে নোঙর করা একটি বালুবোঝাই বাল্কহেডে ধাক্কা দেয় স্পিডবোটটি। ঘটনাস্থলেই ২৬ যাত্রী প্রাণ হারান।

স্থানীয়রা পাঁচ যাত্রীকে জীবিত উদ্ধার করে হাসপাতালে নেন। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা লাশ উদ্ধার করে কাঁঠালবাড়ীর ইয়াছিন মাদবরকান্দি গ্রামের দোতরা সরকারি প্রাথমিত বিদ্যালয়ে রাখেন।

সকাল ১০টার দিকে আদুরি স্বামী-সন্তানের খোঁজে ছুটে যান নদীর তীরে। সেখানে কাউকে না পেয়ে ছুটে আসেন দোতরা স্কুল মাঠে। ততক্ষণে জেনে যান প্রিয় স্বামী ও বুকের ধন আর নেই।

স্কুলমাঠে যখন আদুরি কাঁদছিলেন, তখন সেখানে একে একে হাজির হন তার দুই চাচা ও ফুফু। তারা লাশের সারি থেকে তার স্বামী ও সন্তানকে শনাক্ত করেন।

আদুরির চাচা বলেন, মায়ের লাশ দেখতে যাচ্ছিল মেয়েটি। এখন স্বামী-সন্তানের লাশ নিয়ে তাকে ফিরতে হচ্ছে। আমরা কী বলে সান্ত্বনা দেব তাকে? বাড়িতে একটি কবর খুড়ে রেখে এসেছি। ফোনে আরও দুটি কবর প্রস্তুত করতে বলেছি। বিধাতা কেন আমাদের পরিবারের সাথে এমন করলেন?

বারবার মুর্ছা যাচ্ছিলেন আদুরি। আহাজারি করে বলেন, লকডাউনের কারণে ঢাকায় আটকা পড়েছিলাম। মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে বিচলিত হয়ে গ্রামে ফিরছিলাম। দেড় বছরের সন্তান ইয়ামিন আমার কোলে ছিল। স্পিডবোট অতিরিক্ত গতিতে চলছিল। আমি এক হাতে ছেলে ও আরেক হাতে স্বামীকে জাপটে ধরেছিলাম। হঠাৎ সজোরে ধাক্কা। সকলেই ছিটকে পড়ি। আমি জ্ঞান ফিরে দেখি হাসপাতালে। সাথে সাথে নদীর পাড়ে ফিরি। ততক্ষণে স্বামী-সন্তানের মৃত্যুর খবর পাই।

ওই দুজন ছাড়াও এ দুঘর্টনায় মৃতদের মধ্যে পরিচয় মিলেছে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার পশারিবিনিয়া গ্রামের জনি অধিকারি, কুমিল্লার দাউদকান্দির আওসার ও রুহুল আমীনের।

নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক রহিমা খাতুন।

তিনি বলেন, ৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার কথা বলে হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নাসিরুল হক/এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।