দুই হাতে স্বামী-সন্তানকে জাপটে ধরে রেখেও বাঁচাতে পারলেন না আদুরি
মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার দোতরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে বসে কাঁদছিলেন ৩৫ বছর বয়সী আদুরি বেগম। শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌপথে স্পিডবোট দুর্ঘটনার প্রতক্ষদর্শী তিনি। দুর্ঘটনায় তার স্বামী আরজু মিয়া (৪০) ও দেড় বছর বয়সী ছেলে ইয়ামিন প্রাণ হারিয়েছেন।
আদুরির বাড়ি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার মাইগ্রো গ্রামে। স্বামী-সন্তান নিয়ে থাকতেন ঢাকার হাসনাবাদে।
রোববার রাতে আদুরির মা মনোয়ারা বেগম মারা যান। মায়ের লাশ দেখতে স্বামী সন্তান নিয়ে গ্রামে যাচ্ছিলেন তিনি। সকাল ৬টার দিকে অন্তত ৩২ যাত্রী নিয়ে স্পিডবোটটি শিমুলিয়া ঘাট থেকে শিবচরের বাংলাবাজারের উদ্দেশে ছেড়ে আসে। সাড়ে ৬টার দিকে বাংলাবাজার ঘাটে নোঙর করা একটি বালুবোঝাই বাল্কহেডে ধাক্কা দেয় স্পিডবোটটি। ঘটনাস্থলেই ২৬ যাত্রী প্রাণ হারান।
স্পিডবোটের জীবিত উদ্ধার হওয়া যাত্রী আদুরি বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘মায়ের লাশ দেখতে যাচ্ছিলাম। এখন স্বামী-সন্তানের লাশ নিয়ে আমাকে ফিরে যেতে হচ্ছে।’
কান্না করতে করতে বারবার মুর্ছা যাচ্ছিলেন আদুরি বেগম। তিনি বলেন, ‘লকডাউনের কারণে ঢাকায় আটকা পড়েছিলাম। মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে বিচলিত হয়ে গ্রামে ফিরছিলাম। দেড় বছরের সন্তান ইয়ামিন আমার কোলে ছিল। স্পিডবোট অতিরিক্ত গতিতে চলছিল। আমি এক হাতে ছেলে ও আরেক হাতে স্বামীকে জাপটে ধরেছিলাম। হঠাৎ সজোরে ধাক্কা খেয়ে সকলেই ছিটকে পড়ি। আমি জ্ঞান ফিরে দেখি হাসপাতালে। সঙ্গে সঙ্গে নদীর পাড়ে ফিরি। ততক্ষণে স্বামী-সন্তানের মৃত্যুর খবর পাই।’
মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া থেকে সোমবার (৩ মে) সকাল পৌনে ৭টায় ৩০ জন যাত্রী নিয়ে স্পিডবোটটি ছেড়ে আসে। এ সময় মাদারীপুর কাঁঠালবাড়ী বাংলাবাজার পুরোনো ঘাটে থেমে থাকা বালুবোঝাই একটি বাল্কহেডে ধাক্কা দিয়ে ডুবে যায় স্পিডবোটটি। এসময় সব যাত্রী পানিতে পড়ে যান। পরে নদী থেকে একে একে ২৪টি লাশ উদ্ধার করা হয়। ছয়জনকে জীবিত উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে আরও দুজনের মৃত্যু হয়। স্থানীয় ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা এ উদ্ধার কাজ পরিচালনা করে।
এ ঘটনায় মাদারীপুর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও উপ-পরিচালক স্থানীয় সরকার বিভাগ আজাহারুল ইসলামকে প্রধান করে ছয় সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, দুর্ঘটনাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। যারা দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন তাদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। মর্মান্তিক নৌ-দুর্ঘটনায় যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের প্রত্যেক পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে সহায়তা দেয়া হয়েছে।
এদিকে স্পিডবোট ডুবিতে নিহতের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সোমবার সকালে কাঁঠালবাড়ীর বাংলাবাজার পুরোনো ঘাটে পদ্মা নদীতে এ স্পিডবোট ডুবির ঘটনা ঘটে। মরদেহগুলো কাঠালবাড়ী হাজী ইয়াসিন মোল্লাকান্দি দোতারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাঙ্গণে রাখা আছে। সেখান থেকে স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।
এ কে এম নাসিরুল হক/এসআর/এমএস