থিয়েটারের কল্যাণে মদ ছাড়ছেন চা শ্রমিকরা

সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন
সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন
প্রকাশিত: ০৫:০৩ পিএম, ২০ মে ২০২১

কথার পরিবর্তে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মানুষকে সহজেই বোঝানো সম্ভব। এ বিশ্বাস থেকেই থিয়েটার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কাজ শুরু করেন হবিগঞ্জের চা শ্রমিকরা। সেই বিশ্বাসের ফলও মিলছে। পাশাপাশি শিক্ষায় অগ্রসর হচ্ছে চা শ্রমিকদের পরবর্তী প্রজন্ম।

আদিবাসী চা শ্রমিকদের নিয়ে দেশের একমাত্র সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতীক থিয়েটার। এটি ১৯৮৬ সালের ১৪ এপ্রিল হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার দেউন্দি চা বাগানে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতীক থিয়েটারের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন পল্লী চিকিৎসক আদিবাসী চা শ্রমিক সুনীল বিশ্বাস।

jagonews24

তিনি জানান, প্রতীক থিয়েটার পিছিয়ে পড়া চা জনগোষ্ঠীর সুখ, দুঃখ ও বৈষম্যের কথা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতেই প্রতিষ্ঠা করা হয়। মুখে বলে করা সম্ভব নয়, থিয়েটারের মাধ্যমে তুলে ধরলে তা সহজেই সম্ভব। একসময় ছিল চা শ্রমিক মানের সে মদপান করবে। কিন্তু প্রতীক সে ধারণা পাল্টে দিয়েছে। প্রতীকের কারণে চা শ্রমিকরা মদপান ছাড়ছেন। নতুন প্রজন্ম শিক্ষায় অগ্রসর হচ্ছে। অনেকেই সরকারি বেসরকারি চাকরি করছেন। আমরা বিশ্বাস করি প্রতীক আরও পরিবর্তন আনবে।

jagonews24

সরেজমিনে জানা যায়, হবিগঞ্জে ২৪টি চা বাগান রয়েছে। এগুলোতে খাসিয়া, মণিপুরি, টিপরা, সাঁওতাল, মুণ্ডাসহ চা বাগানে কর্মরত একাধিক ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জনগোষ্ঠীর লোক রয়েছেন। এছাড়াও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে আরও নানা জাতিগোষ্ঠীর মানুষ। আদিবাসী সম্প্রদায়ের একটি বিশাল অংশ নেশাগ্রস্ত। শিক্ষায়ও অনেক পিছিয়ে তারা। তাদের পরিবর্তনের লক্ষ্য নিয়েই দেউন্দি চা বাগানে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রতীক থিয়েটার।

jagonews24

আদিবাসি চা শ্রমিক কন্যা পপি বাউরী জানান, পাঁচ বছর বয়স থেকেই নাচ, গান, আবৃত্তি, নাটকে সম্পৃক্ত। এখন পড়ছেন এইচএসসিতে। বাবার হাত ধরেই থিয়েটারে পা রাখেন।

তিনি বলেন, আমাদের ঐতিহ্যকে তুলে ধরতেই থিয়েটার করা। প্রতীক থিয়েটারের সব সদস্যই আদিবাসী চা শ্রমিক ও তাদের সন্তান।

jagonews24

আরেক আদিবাসী চা শ্রমিক কন্যা মিলি ভূমিজ জানান, থিয়েটারের মাধ্যমে মানুষের কাছে না বলা কথাগুলো সহজেই পৌঁছানো যায়। এর মাধ্যমে সমাজে পরিবর্তন আনা সম্ভব।

চুনারুঘাট উপজেলার পাইকপাড়া ইউপি সদস্য চা শ্রমিক কার্তিক চন্দ্র বাক্তি জানান, দেউন্দি চা বাগানে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার লোক বাস করেন। প্রতীক থিয়েটার প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে অনেক ঝড় পোহাতে হয়েছে। আদিবাসী চা শ্রমিকদের এ দলটি এখন অনেক প্রতিষ্ঠিত। মূলত চা শ্রমিকদের জীবন, দুঃখ, দুর্দশা তুলে ধরতেই এ থিয়েটার প্রতিষ্ঠা হয়েছে।

jagonews24

আদিবাসীদের নিয়ে কাজ করা সাংস্কৃতিক সংগঠক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, এ অঞ্চলে খাসিয়া, মণিপুরি, টিপরা, সাঁওতালসহ চা বাগানে কর্মরত বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জনগোষ্ঠীর মানুষ রয়েছেন। তাদের রয়েছে নিজস্ব সংস্কৃতিও। ইতিহাস ঐতিহ্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ। অনেক বঞ্চনা, লাঞ্ছনার মধ্যেও তারা বসবাস করছেন। শিক্ষার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা নেই। সংস্কৃতি চর্চার জন্য নেই পর্যাপ্ত পৃষ্ঠপোষকতা। তবুও তারা এগিয়ে চলছেন। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে পরিবর্তন ঘটাচ্ছেন।

এএইচ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।