লকডাউন ঘোষণায় নওগাঁ ছাড়ার হিড়িক
করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় নওগাঁয় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এক সপ্তাহের বিশেষ লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। লকডাউন ঘোষণায় নওগাঁ ছাড়ছেন অনেকে। ফলে বাস কাউন্টারগুলোতে ভিড় বেড়েছে যাত্রীদের। ভিড় বাড়ায় টিকিট পাওয়া নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছেন ঢাকাগামী যাত্রীরা।
বুধবার (২জুন) রাত ১২টার পর থেকে লকডাউন কার্যকর হবে নওগাঁয়। দুপুরে জেলা প্রশাসক হারুন অর রশীদ সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। আগামী ৯ জুন রাত পর্যন্ত এ লকডাউন চলবে।
নওগাঁ পৌরসভা ও জেলার নিয়ামতপুর উপজেলায় করোনা সংক্রমণের হার বেড়েছে। নিয়ামতপুরের পাশের জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ। সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় সেখানে করোনা সংক্রমণের হার বেড়েছে। গত ৩০ মে জেলায় করোনা সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে এক স্মারকে নির্দেশনা দেয়া হয়। সেই নির্দেশনা মোতাবেক গত ১ জুন জেলার করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় করণীয় শীর্ষক এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্তক্রমে করোনা সংক্রমণ রোধকল্পে ১৫টি নির্দেশনা গ্রহণ করা হয়।
লকডাউনে নওগাঁ পৌরসভা এবং নিয়ামতপুর উপজেলায় সকল প্রকার গণপরিবহন (বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস, সিএনজি, অটোরিকশা, টমটম, রিকশা, মোটরসাইকেল ইত্যাদি) বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া জেলা শহরের সঙ্গে বাকি ১০ উপজেলায় যোগাযোগ থাকায় নওগাঁ পৌরসভাতেও সংক্রমণ বেড়েছে। এ কারণে জেলা শহরসহ অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। লকডাউনে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ করায় ঢাকা থেকে নওগাঁয় আসা অনেকেই নওগাঁ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। এতে ঢাকা বাসস্ট্যান্ডে টিকিট কাউন্টারগুলোতে ভিড় বেড়েছে। বাসে ডাবল সিট নেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকায় সিট সংখ্যা কমেছে। প্রতি সিটের ভাড়া ৭০০ টাকা। যাত্রী সংখ্যা সীমিত করায় টিকিটের চাহিদাও বেড়েছে। ঢাকাগামী যাত্রীরা টিকিট পাওয়া নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছেন। আর এ সুযোগে যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া নিচ্ছে কোনো কোনো পরিবহন।
ঢাকার একটি পত্রিকা অফিসে চাকরি করেন বিভা। ছুটিতে কয়েকদিন আগে গ্রামের বাড়ি বেড়াতে এসেছেন। বৃহস্পতিবার (৩ জুন) কর্মস্থলে ফেরার কথা তার। কিন্তু হঠাৎ করে দুপুরে জানতে পারেন নওগাঁ লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বিড়ম্বনায় পড়েন তিনি।
বিভা বলেন, ‘বৃহস্পতিবার কর্মস্থলে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ লকডাউনের সংবাদ পেয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছি। বাধ্য হয়ে তড়িঘড়ি করে সবকিছু গুছিয়ে ফিরতে হচ্ছে। আজ রাতেই নওগাঁ ছাড়তে না পারলে আগামী কয়েকদিন কোনো যানবাহন চলবে না। এতে দুর্ভোগ আরও বাড়তে পারে। এদিকে টিকিট সংগ্রহ করতে গিয়ে আরেক বিড়ম্বনা। কয়েকটি কাউন্টার ঘুরে অবশেষে শ্যামলি কাউন্টার থেকে রাত ১১টার টিকিট পেয়েছি।’
শহরের সুলতানপুর মহল্লার বাসীন্দা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকায় রিকশা চালাই। গত শনিবার বাড়ি এসেছি। আরও কয়েকদিন পর ঢাকায় যেতাম। কিন্তু লকডাউন ঘোষণার সংবাদ জানার পর রাতেই চলে যাচ্ছি। বাড়িতে বসে থাকলেতো আর পেট চলবে না। ঢাকায় গেলে কিছু আয় করতে পারবো। বাসের টিকিট অনেক কষ্ট করে সংগ্রহ করতে হলো। একেবারে পেছনে সিট পেয়েছি।’
হানিফ কাউন্টারের মাস্টার মিজানুর রহমান বলেন, ‘যাত্রীর চাপ স্বাভাবিক আছে। তার ওপর রাত পোহালেই লকডাউন। এ কারণে ঈদে যারা বাড়ি এসেছেন তারা লকডাউনের কথা শুনে নওগাঁ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ আগামী কয়েকদিন অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ থাকবে। কোনো যানবাহন চলাচল করবে না বিধায় যাত্রীরা কাউন্টারে টিকিট নিতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন।’
চাঁদনী ট্রাভেলের মালিক শাগীর বলেন, ‘হঠাৎ করে রাতে এতো যাত্রীর চাপ। বাধ্য হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্তে দুটি বাস ঢাকার উদ্দেশে দেয়া হয়।’
আব্বাস আলী/ইএ