বড় পশুরহাট সাতমাইল বন্ধ থাকায় দুশ্চিন্তায় ব্যবসায়ী-খামারিরা
করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে দেশের সবচেয়ে বড় পশুরহাট যশোরের শার্শার বাগআঁচড়ার সাতমাইল বন্ধ করে দেয় জেলা প্রশাসন। এরপরই পাল্টে গেছে জমজমাট বিশাল এই হাটের চেহারা।
প্রতি বছর যশোর এবং সাতক্ষীরা অঞ্চলের গরু ব্যবসায়ী ও খামারিরা অপেক্ষায় থাকেন কোরবানি এই সময়টার দিকে। সাতমাইলের হাট থেকে গরু কিনে ব্যবসায়ীরা সারাদেশে গরুর প্রায় অর্ধেক চাহিদা পূরণ করে থাকেন।
সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবার প্রতিদিন গড়ে কমপক্ষে ৫ হাজার গরু কেনাবেচা হয়ে থাকে এ হাটে। কোরবানির সময়ে এই সংখ্যা তিনগুণ পর্যন্ত বেড়ে যায়। গরু ও ক্রেতার অভাবে সাতমাইল হাট এখন খাঁ খাঁ করছে। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খামারি ও গরু ব্যবসায়ীরা।
দেশে করোনার এ ভয়াবহ সংক্রমণের মধ্যে ২৩ জুন সীমান্তবর্তী কয়েকটি জেলার পশুরহাট বন্ধ করা হলেও স্বাস্থ্যবিধি শতভাগ মেনে চলার শর্তে সাতমাইল গরুহাট পরিচালনার অনুমতি বহাল রাখে প্রশাসন। কিন্তু হাটের দিন হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে কোনোভাবে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা সম্ভব হচ্ছিল না। উপজেলায় করোনায় আক্রান্ত ও মুত্যুর সংখ্যাও বাড়তে থাকে। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হলে, অবশেষে ২৬ জুন জেলা প্রশাসনের নির্দেশে গরুর হাটটি বন্ধ করে দেয়া হয়।
স্থানীয় বাগআঁচড়া ইউপি মেম্বার আছাদুল ইসলাম বলেন, ‘এই হাটটি এর আগে প্রায় ১০ বছর ইজারা নিয়ে চালিয়েছে এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইলিয়াছ কবির বকুল। তিনি দীর্ঘ সময় ধরে বিভিন্ন অনিয়মের মধ্যে হাট পরিচালনা করেছে। চলতি বছর হাটের ইজারা না পেয়ে করোনা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ মানছে না এমন গুজব ছড়িয়ে দেয়। এর ফলে হাটটি বন্ধ হয়ে যায়।’
সাতমাইল হাটের ইজারাদার আব্দুল খালেক খতিব ধাবক বলেন, ‘৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা দিয়ে হাটটি ইজারা নিয়েছি। এর শেয়ার রয়েছে ৩ হাজার। প্রায় ১২০ জন লোক নিয়ে প্রতি হাট স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিচালনা করা হচ্ছিল। করোনা জীবাণু যাতে হাটে প্রবেশ করতে না পারে তার জন্য প্রবেশদ্বারে রয়েছে স্বয়ংক্রিয় স্প্রে মেশিন। রয়েছে শতাধিক স্প্রে বোতল।’
তার দাবি, ‘আজ পর্যন্ত এই হাট থেকে একজন লোকও করোনায় আক্রান্তও হননি এবং মারাও যায়নি। এখন হাট বন্ধ করে দেয়ায় কীভাবে সরকারের রাজস্বের ৬ কোটি টাকা পরিশোধ করব ভাবছি।’
গরুর ব্যাপারী সুজন বলেন, ‘আমি ১৯৯৬ সাল থেকে এই হাটের সঙ্গে জড়িত। এখানে গরু কেনাবেচা করি। এবার এই কোরবানি ঈদে হাটটি বন্ধ করে দেয়ায় আমরা হতাশায় ভুগছি। কারণ সারাবছর ধরে গরু খামারের গরু লালন-পালন করে এখন মাথায় হাত দেয়ার উপক্রম হয়েছে। বাইরে থেকে ব্যাপারী না এলে আমাদের গরু লোকসানে বেচাকেনা করতে হবে।’
ইউপি চেয়ারম্যান ইলিয়াস কবীর আরও বলেন, ‘খুলনা বিভাগসহ এ অঞ্চলে করোনা আক্রান্তের হার দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। মানুষকে করোনা সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে হলে যতদিন শার্শাবাসীকে টিকার আওতায় না আনা যাবে ততদিন সাতমাইল পশুহাট বন্ধ রাখা দরকার। প্রতি হাটে গিজগিজ করে মানুষ আর পশু। স্বাস্থ্যবিধির বালাই ছিল না হাটে। বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে মানুষ আসতেন সাতমাইল পশুরহাটে। হাট বন্ধ হওয়ায় এ অঞ্চলের সাধারণ জনগণ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে।’
শার্শার নির্বাহী কর্মকর্তার মীর আলীফ রেজা বলেন, ‘সীমান্তে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় সাতমাইল গরুর হাট বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে সরকার গরু হাট চলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। ওই সিদ্ধান্ত থেকে স্পষ্ট হওয়া যাবে গবাদি পশুর হাট চলবে কি-না।’
মো. জামাল হোসেন/এসজে/জিকেএস