কর্মচারীর ভুলে মৃত ব্যক্তিকে জরিমানা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি মাদারীপুর
প্রকাশিত: ০৫:২৭ পিএম, ০৪ জুলাই ২০২১

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চলমান লকডাউন কার্যকরে সারাদেশে কঠোর অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন। বিনা কারণে ঘর থেকে বের হলে বা দোকানপাট খোলা রাখলেই শাস্তিস্বরূপ গুনতে হচ্ছে জরিমানা। কিন্তু কঠোর বিধিনিষেধের নিয়ম ভঙ্গ করায় এবার ‘অফিস কমর্চারীর ভুলে’ (স্টেনো টাইপিস্ট) ১৯৭০ সালে মারা যাওয়া ব্যক্তিটিও ছাড় পাননি। মারা যাওয়া ব্যক্তি হলেন যাকে জরিমানা করা হয়েছে তার বাবা।

এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে মাদারীপুরে কালকিনি উপজেলায় ডাসার এলাকায়। নির্দেশনা অমান্য করে দোকান খোলা রাখার দায়ে এক সিঙাড়া দোকানিকে তার মৃত বাবার নামে গুনতে হয়েছে ১০০ টাকা জরিমানা।

ভ্রাম্যমাণ আদালত ও স্থানীয় সূত্র জানায়, লকডাউনে কঠোর বিধিনিষেধ কার্যকরে শনিবার (৩ জুলাই) সকালে কালকিনি উপজেলার ডাসার বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহেদী হাসান। এসময় বিধিনিষেধের আওতামুক্ত দোকান ছাড়াও বেশ কিছু দোকানপাট খোলা রাখা ও বিনা কারণে ঘর থেকে বের হওয়ায় কয়েকজনকে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে জরিমানা আদায় করেন ইউএনও। এসময় ছালাম সরদার সিঙাড়ার দোকান খোলা রাখায় তাকে সংক্রমণ রোগ নিয়ন্ত্রণ, প্রতিরোধ ও দমন আইনে ১০০ টাকা আর্থিক জরিমানা করা হয়।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানার রসিদে দোষী ব্যক্তির নামের জায়গায় লেখা আছে তার মৃত বাবার নাম—এরফান সরদার। পরে মৃত বাবার হয়েই ১০০ টাকা জরিমানা দেন ছালাম সরদার।

৬৬ বছর বয়সী ছালাম সরদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘খুব খারাপ অবস্থায় আছি। ঘরে চাল-ডাল নাই। বাধ্য হয়ে দোকানে কিছু সিঙাড়া বিক্রি করার চিন্তায় খুলি। কিছু কেনাবেচাও করি। হঠাৎ স্যারেরা আইসা আমারে হুটহাট করে জরিমানা করে দিলেন। পরে দেখি তারা আমার নামের পরিবর্তে আমার বাবার নামে জরিমানা করেছেন। খুব কষ্ট পাইছি। ১০০ টাকা কামাইতে পারি না অথচ জরিমানা দিতে হবে। বোঝেন কত কষ্ট!’

ছালাম সরদার বলেন, তার বাবা এরফান সরদার ১৯৭০ সালে মারা যান। তবুও ভ্রাম্যমাণ আদালত এমনটা কেন করলেন, তিনি সেটা জানেন না। প্রশাসনের ভয়ে তিনি ১০০ টাকা জরিমানা পরিশোধ করেন।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের নিয়ম অনুযায়ী জরিমানা রসিদের প্রসিকিউটরের নামের জায়গায় ইউএনও বা রাষ্ট্র লেখার বিধান রয়েছে। অথচ সেখানে লেখা হয়েছে এরফান সরদারের ছেলে ছালাম সরদারের নাম।

ইউএনও মেহেদী হাসান বলেন, ‘উপজেলার বেশ কয়েকটি স্থানে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) যৌথ অভিযানে ১৯টি মামলায় ১৬ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন।’

ডাসার বাজারে মৃত ব্যক্তির নামে জরিমানা আদায়ের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘প্রশাসন দেখলে লোকজন দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দেয়। ভয়ে অনেকে নিজের নাম না দিয়ে তার বাবার নামও বলে দেন। তাই হয়তো জরিমানার রসিদ কাটার সময় ভুল হতে পারে।’

প্রসিকিউটরের নামের জায়গায় ছালামের নাম কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ইউএনও বলেন, ‘এখানে রাষ্ট্র বা ইউএনও নাম লিখতে হয়। না লিখলেও সমস্যা নেই। তবে ছালামের নাম লেখাটা ভুল করে হয়তো ওপরে উঠে গেছে। অফিস কমর্চারীর ভুলে (স্টেনো টাইপিস্ট) হয়তো এমনটা হয়েছে।’

একে এম নাসিরুল হক/এসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।