বিধিনিষেধে গরু বিক্রি নিয়ে শঙ্কায় নড়াইলের খামারিরা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নড়াইল
প্রকাশিত: ১১:০৭ এএম, ১২ জুলাই ২০২১

ঈদুল আজহার বাকি আর মাত্র ৯ দিন। কিন্তু করোনা রোধে চলমান বিধিনিষেধে নড়াইলে বন্ধ রয়েছে গরুর হাট। খামার থেকেই গরু বিক্রি করতে হচ্ছে। ব্যাপারীরা আসতে না পারায় গরুর তেমন চাহিদা নেই। এলাকায় মাঝারি আকারের গরুর কিছুটা চাহিদা থাকলেও বড় আকৃতির গরুর প্রতি আগ্রহ নেই। এ অবস্থায় গরু বিক্রি ও ন্যায্যমূল্য নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন খামারিরা।

একাধিক খামারির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনলাইন ও ফেসবুকে ছবি দিয়ে গরু বিক্রির চেষ্টা করলেও তেমন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে পুঁজি হারানোর আশঙ্কা করছেন অধিকাংশ খামারিরা।

নড়াইল সদর উপজেলার মাইজপাড়া গ্রামের গরু খামারি আব্দুল কাদের। তার খামারে আটটি গরু রয়েছে। তবে এবার তিনি একটি গরু বিক্রি করবেন। ৩৫ মণ ওজনের বিশাল আকৃতির ষাঁড়টির দাম হাঁকছেন ১৮ লাখ টাকা। তবে করোনার কারণে এখনও কোনো ক্রেতা পাননি। ষাঁড়টিকে লালন-পালন করতে অনেক টাকার খাবার খাওয়ালেও এখন আসল টাকা উঠবে কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।

খামারি আব্দুল কাদের বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। আমার খামার থেকে এই প্রথম একটি ষাঁড় বিক্রি করব। দেশীয় খাবার খাইয়ে পালন করা আমার ষাঁড়ের ওজন হবে ৩৫ মণ। আদর করে ষাঁড়টির নাম রেখেছি ‘রাজাবাবু’। কিন্তু এই করোনার কারণে হাট বসছে না। যার কারণে বাড়িতে কোনো ক্রেতাও আসছে না। যানবাহন বন্ধ থাকায় জেলার বাইরের ব্যাপারীরা আসতে পারছে না। ফলে ষাঁড়টি বিক্রি করতে পারব কি-না তা নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় পড়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাজাবাবুকে বিক্রি না করতে পারলে আমি লোকসানে পড়ব। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে গরুর হাট বসানোর জোর দাবি জানাচ্ছি। সরকার যেন বিশেষ ব্যবস্থায় রাজধানী ঢাকাসহ বড় বড় শহরের গরুর ব্যাপারীদের আসার সুযোগ করে দেয়।’

কালিয়া উপজেলার বড়দিয়া কলেজপাড়া বাসিন্দা জামাল সরদার তার খামারে ফ্রিজিয়ান জাতের একটি ষাঁড়ের দাম হাঁকছেন ৪ লাখ টাকা।

jagonews24

খামারি জামাল সরদার বলেন, ‘সম্পূর্ণ দেশীয় খাবার দিয়ে পালন করা ষাঁড়টির নাম রেখেছি ‘কালা বাবু’। গরুটির মাংস হবে আনুমানিক ১৪ মণ। দাম চেয়েছি ৪ লাখ টাকা। তবে হাট না বসার কারণে ফেসবুকে ছবি দিয়েছি। আমার মোবাইল নম্বর দিয়ে দিয়েছি। এখনও তেমন ক্রেতা আসেনি। অপেক্ষায় রয়েছি। ক্রেতা পেলে আলোচনা সাপেক্ষে গরুটি বিক্রি করে দিতে হবে।’

কালিয়া উপজেলার পুরুলিয়া ইউপির চাঁদপুর গ্রামের খামারি রেজাউল ফকির তার একটি ষাঁড় বিক্রির জন্য ফেসবুকে ছবি পোস্ট করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘গদাইবাবুর ওজন ১৮ মণ। মূল্য ৫ লাখ টাকা। তবে আলোচনা সাপেক্ষে বিক্রি করা হবে।’

লোহাগড়া উপজেলার নোয়াগ্রাম ইউপির চরব্রাহ্মণডাঙ্গা গ্রামের সাজ্জাদুল ইসলাম উলফাৎ ফেসবুকে একটি গরুর ছবি পোস্ট করে দাম চেয়েছেন ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। তবে আলোচনা সাপেক্ষে তিনি বিক্রি করতে চান।

সাজ্জাদুল জানান, করোনার কারণে ক্রেতা তেমন পাওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া অনেকেই এ বছর করোনায় আর্থিক অনটনের কারণে কোরবানি দিচ্ছেন না। যার ফলে কাঙ্ক্ষিত মূল্য পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না।

জেলা প্রাণি সম্পদ বিভাগের তথ্যমতে, নড়াইল জেলায় এ বছর কোরবানির জন্য গরু, ছাগল ও ভেড়ার উৎপাদন হয়েছে ৩৪ হাজার ৮৫৮টি। জেলায় কোরবানির জন্য চাহিদা রয়েছে ২৪ হাজার ৪৩৭টি। উদ্বৃত্ত থাকবে ১০ হাজার ৪২১টি। জেলায় গরু উৎপাদন হয়েছে ২০ হাজার ৯৯২টি। চাহিদা রয়েছে ১৫ হাজার ৭২টি। চাহিদা পূরণ শেষে উদ্বৃত্ত রয়েছে ৫ হাজার ৭৩০টি গরু। অতিরিক্ত এসব গরু জেলার বাইরে বিক্রি করতে হবে। জেলায় ছাগল প্রস্তুত রয়েছে ১৩ হাজার ৯৭৩টি। চাহিদা রয়েছে ৯ হাজার ৭৫টি। উদ্বৃত্ত রয়েছে ৪ হাজার ৫৯৮টি।

jagonews24

এদিকে, জেলার বিভিন্ন স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশুর হাট বসানোর জন্য প্রস্তুতি নিয়ে আছেন স্থানীয় ইজারাদাররা। সরকারিভাবে নির্দেশনা পেলেই হাট বসানো হবে বলে জানান তারা।

জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মারুফ হাসান বলেন, ‘করোনার কারণে খামারিদের গরুর ছবি, ওজন ও দাম কয়েকটি অনলাইনে দেয়া হয়েছে। অনলাইনে বিক্রির পর ক্রেতাদের বাড়িতে গরু পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে জেলায় ৯টি গরুর হাট বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো নির্দেশনা আসেনি আশা করি আগামী ১৪ জুলাইয়ের পর নির্দেশনা আসতে পারে। নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রস্তাবনা আসলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাট বসানো হবে। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে গরুর খামারিরা তাদের পশু বিক্রি করে ন্যায্য মূল্য পাবেন এবং নড়াইল জেলার খামারগুলো আরও এগিয়ে যাবে।’

হাফিজুল নীলু/এসজে/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।