‘পাখির ডাকে ঘুমিয়ে পড়ে পাখির ডাকে জেগে’

আব্দুল আজিজ
আব্দুল আজিজ আব্দুল আজিজ , মৌলভীবাজার
প্রকাশিত: ০৬:১৬ পিএম, ০৩ আগস্ট ২০২১

মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার রাজনগর বালাগঞ্জ সড়কের পাশে একটি গ্রামের নাম কেওলা। ওই গ্রামের সিরাজুল ইসলাম ছানা মিয়ার বাড়ি যেন পাখিদের অভয়াশ্রম। বাড়ির আঙিনায় ঢুকতেই কানে আসে পাখির কিচিরমিচির শব্দ। আর মাথা উঁচু করে একটু তাকাতেই চোখে পড়ে গাছের ডালে ডালে বসে আছে হরেক রকমের পাখি। কিছু উড়ে যাচ্ছে তো আবার কিছু গাছে এসে বসছে। 

কথা হয় বাড়ির গৃহিণী মির্জা আবদে জহুরা বাবলীর সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘মৃত্যুর আগে শ্বশুর বলে গিয়েছিলেন আমরা যেন বাড়ি থেকে পাখি না তাড়াই। তাই পাখিরা এখানে নিরাপদে আছে। রাতদিন কিচিরমিচির করে। পাখির ডাকেই আমাদের ঘুম ভাঙে। এরা সকাল হলে উড়ে যায়। আবার সন্ধ্যা হলে ফিরে আসে।’

jagonews24

বাড়ির মালিক সিরাজুল ইসলাম ছানা বলেন, কিছু পাখি সারাদিন বাসায় থাকে। প্রতিটি বাঁশে ছয় থেকে সাতটি বাসা রয়েছে। এর মধ্যে দু’দফা বাচ্চা দিয়েছে। পাখিরা প্রতিবেশীর মতো ঘরের আশপাশে চলাফেরা করে।’

সোমবার (২ আগস্ট) সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির পশ্চিম পাশে বাঁশবাগান। বাঁশঝাড়ের সবুজ পাতার নিচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে পাখিগুলো। মাঝে মাঝে কালো রঙের পানকৌড়িও বাঁশঝাড়ের চূড়ায় বসছে। বেলা যত পড়ছে পাখিরা কাছের মাঠ থেকে উড়ে এসে নীড়ে ফিরছে। আর বাসায় থাকা বাচ্চাগুলোর কিচিরমিচির বাড়ছে। কোনোটি ডানা ঝাপটিয়ে বাচ্চাদের মুখে খাবার দিচ্ছে।

jagonews24

ওই বাড়ির সদস্য রুকন আহমেদ বলেন, ১৫-২০ বছর ধরে পাখিরা এখানে আশ্রয় নিয়েছে। যদিও গাছপালার ক্ষতি হয় তবুও আমরা পাখি তাড়াই না। আমাদের বাড়িতে সারা বছরই পাখি থাকে। তবে বৈশাখ মাস থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি আসে। এসময় পাখিগুলো বাসা বুনে বাচ্চা ফোটায়। বাচ্চাগুলো উড়াল দেয়া শিখে ফেললে আশ্বিনে আস্তে আস্তে চলে যায়। বক ছাড়াও আছে পানকৌড়ি, শালিক, ঘুঘুসহ বিভিন্ন জাতের দেশি পাখি সেখানে রয়েছে বলে তিনি জানান।

গৃহিণী শেলী বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা পাখিদের বিরক্ত করি না। কেউ শিকার করতে আসলে বাড়ির সবাই মিলে বাধা দিই। শিকারির উৎপাত আছে, আমরা প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়ে রেখেছি।’

jagonews24

বাবর মিয়া নামের একজন বললেন, প্রতিদিন বিকেলে এসে একবার পাখিগুলো দেখে যাই, ভালো লাগে। পথচারী লিটন মিয়া বলেন, আসা-যাওয়ার পথে পাখি দেখে আনন্দ পাই।

রাজনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পিয়াংকা পাল জাগো নিউজকে বলেন, আমি যাওয়ার পথে পাখিবাড়িটি দেখেছি। সেখানে পাখিদের থাকা নিয়ে কোনো সমস্যা হলে সহযোগিতা করা হবে।

আব্দুল আজিজ/এসআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।