শিক্ষক হারানোর বেদনা নিয়েই খুলছে পাবনার ইসলামিয়া মাদরাসা
এ যেন এক দীর্ঘ অপেক্ষার সমাপ্তি। এক বছর পাঁচ মাস ২৪ দিন বন্ধ থাকার পর সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) থেকে খুলছে পাবনা ইসলামিয়া মাদরাসাও।
এ লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। তবে একজনের শূন্যতা অনুভব করছে প্রতিষ্ঠানটি। তিনি এ প্রতিষ্ঠানেরই একজন দক্ষ শিক্ষক ছিলেন। ছিলেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রিয়। চাকরি করেছেন দীর্ঘ দু’দশকেরও বেশি সময়। সেই প্রিয় শিক্ষক নজরুল ইসলাম বেঁচে নেই পৃথিবীতে। ৫ মে প্রাণঘাতী করোনা কেড়ে নেয় তার প্রাণ।
নজরুল ইসলাম পাবনা শহরের পৌরসভার সিংগা এলাকার মাজহারুল ইসলামের ছেলে। তিনি পাবনা ইসলামিয়া মাদরাসার সিনিয়র শিক্ষক ছিলেন। মৃত্যুকালে বাবা-মা, স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলেসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার মৃত্যুতে পরিবারসহ সহকর্মীরা এখনো শোকাহত। সহকর্মীর স্মৃতি ভুলতে পারছেন না তারা।
মাদরাসার শিক্ষক রফিকুল ইসলাম রঞ্জু বলেন, ওই সময়ে ছয়-সাত দিন দেখা না পেয়ে খোঁজ নিলে নজরুল ইসলামের পরিবার থেকে জানানো হয় তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এরপর করোনা শনাক্ত হয়। পাবনায় কয়েকদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর তাকে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি না ফেরার দেশে চলে যান। তার পরিবারটি শোকাহত। আমরাও তার শূন্যতা অনুভব করছি। প্রতিষ্ঠানের সবাই আজও তার শোকে কাতর।
আরেক সহকর্মী শরিফুল ইসলাম আজাদ বলেন, তার সঙ্গে দীর্ঘ কয়েক বছর চাকরি করেছি। তার সঙ্গে কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার খবরে তার কথা আরও বেশি মনে পড়ছে।
মাদরাসার দশম (দাখিল) শ্রেণির ছাত্র মোতালেব হোসেন ও শামসুর রহমান জানায়, তারা পঞ্চম শ্রেণি থেকে ওই শিক্ষকের সান্নিধ্য লাভ করে। দীর্ঘ দেড় বছরের বেশি সময় পর মাদরাসা খুললেও তারা তাদের প্রিয় শিক্ষকের দেখা পাবে না। এ মনে করলেই তাদের কান্না আসে।
মাদরাসাটির অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইকবাল হুসাইন বলেন, মাদরাসার ভালো ফলাফলের জন্য অভিভাবকদের সচেতনতা এবং শিক্ষকদের বিরাট অবদান রয়েছে। শিক্ষকদের দক্ষতা ও আন্তরিকতায় প্রতিষ্ঠানটি আজ পাবনা জেলা তথা দেশের অন্যতম সেরা একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। তাদেরই একজন ছিলেন নজরুল ইসলাম। তিনি ৫ মে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
তিনি আরও বলেন, নজরুল ইসলামের মৃত্যুতে মাদরাসার সবাই আজও বেদনাহত। তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। মাদরাসা থেকে তার ভবিষ্যৎ তহবিলের সব পাওনাও পরিশোধ করা হয়েছে। তবে সরকারিভাবে পাওনাদি যেন তার পরিবারের সদস্যরা দ্রুত পান সে চেষ্টাও করা হচ্ছে।
অধ্যক্ষ বলেন, প্রতিষ্ঠান খুলছে। এ ক্ষেত্রে সরকারি নির্দেশনা মেনে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে ক্লাস চলবে। শিক্ষার্থীদের মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। শিক্ষকরাও শ্রেণিকক্ষে মাস্ক পরে যাবেন। প্রতি সপ্তাহের পরিস্থিতি মনিটরিং করা হবে।
আমিন ইসলাম জুয়েল/এসজে/এএসএম