আতঙ্ক নিয়েই পাঠদান চলছে ৫৩ বিদ্যালয়ে
একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত সুন্দরবন সংলগ্ন খুলনার কয়রা উপজেলার ৫৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ওই ভবনগুলোতেই পাঠদান চলছে। ফলে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে অভিভাবকদের।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তর সম্প্রতি উপজেলার ১৪২টি বিদ্যালয় থেকে এই ৫৩টি বিদ্যালয়কে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
সরেজমিনে বিদ্যালয়গুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, বছরের পর বছর ধরে সংস্কারের অভাবে এসব বিদ্যালয় ভবনের ছাদের পলেস্তারা খসে রড বেরিয়ে গেছে। দরজা-জানালা খুলে পড়ে গেছে অনেক আগেই। কোথাও কোথাও ছাদের বিমেও দেখা দিয়েছে বড় বড় ফাটল। বর্ষাকালে ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। যেকোনো মুহূর্তে ভবন ধসে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। এরপরও পাঠদান কার্যক্রম চলছে এসব বিদ্যালয়ে।
কোনো কোনো বিদ্যালয়ে অস্থায়ী টিনের শেড তৈরি করে পাঠদান করা হচ্ছে। এছাড়া বিদ্যালয়গুলোতে বেঞ্চ ও অন্যান্য উপকণেরও অভাব রয়েছে।
অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রয়েছে বগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মদিনাবাদ মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তালবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লোকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শ্রীরামপুর কালনা অন্তাবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গাঙেরখি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্বচৌকুনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ডাক্তারাবাদ বনরাণী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বামিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ছোট আংটিহারা সুন্দরবন আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঘুগরাকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মদিনাবাদ কলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ মহারাজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাটনিখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর কালিকাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ ঘুগরাকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ হড্ডা পল্লীউন্নয়ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাতিয়ার ডাঙ্গা পশ্চিমচক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুমারখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব মহেশ্বরীপুর শাপলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর ক্ষেপনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ ভাগবা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গীলাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জোড়শিং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হরিহরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ উপজেলার ৫৩ প্রাথমিক বিদ্যালয়। কক্ষ স্বল্পতা ও অস্থায়ী শেডে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা হচ্ছে এসব বিদ্যালয়ে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে আলাপ করলে তারা জানায়, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ক্লাস করতে তাদের ভয় লাগে। পরীক্ষার সময় তাদের খুব কষ্ট হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রধান শিক্ষক বলেন, ঝুঁকির মধ্যে পাঠদানে মন বসে না। কারণ পরিবেশের সঙ্গে পাঠদান কার্যক্রমের একটি নিবিড় সম্পর্ক আছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষা উপকরণ ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র সংরক্ষণে রাখতে বেগ পেতে হয়। এই অবস্থায় কোনো রকমে প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া যেকোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।
তালবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অমন কৃষ্ণ বাইন বলেন, বর্তমানে বিদ্যালয়ের ভবন অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। যেকারণে ভয়ে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসতে চায় না। জরুরি সংস্কার করে শিক্ষার মৌলিক সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা না গেলে শিশুরা আরও স্কুল বিমুখ হবে এবং ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়তেই থাকবে।
উপজেলার মদিনাবাদ মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল্লাহ জানান, তার বিদ্যালয়ে একটিমাত্র ভবন। সেই ভবনই ঝুঁকিপূর্ণ। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকার কারণে ওই ভবনেই শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিতে হয়।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান বলেন, পরিত্যক্ত ও জরাজীর্ণ বিদ্যালয় ভবনের তালিকা করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে। নতুন বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া বিকল্প উপায়ে পাঠদানের ব্যবস্থা করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিছু কিছু বিদ্যালয়ে ইতোমধ্যে অস্থায়ী শেড করা হয়েছে পাঠদানের জন্য।
আলমগীর হান্নান/এফএ/জেআইএম