ঝালকাঠির সর্বত্র স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। এ অবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ নানা ধরনের বিধিনিষেধ দিয়েছে সরকার। কিন্তু ঝালকাঠিতে সবখানেই স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত। গণপরিবহন থেকে শুরু করে মার্কেট, হাসপাতালে নেই স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা। মাস্ক ব্যবহারেও সচেতন হচ্ছে না জনসাধারণ।
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী কয়েক মাস আগেও বাসের জানালা-দরজায় ‘নো মাস্ক, নো এন্ট্রি’ এবং বিভিন্ন অফিস, আদালত ও মার্কেটের সামনে ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ লেখা থাকলেও অধিকাংশ জায়গায় এখন তা আর নেই।
গণপরিবহন ঘুরে দেখা গেছে, করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার মধ্যেও যাত্রীদের মধ্যে তেমন সচেতনতা নেই। যাত্রীদের অধিকাংশই মাস্ক পরছেন না, যারা পরছেন তারাও ঠিকঠাক পরছেন না। মাস্ক আটকিয়ে রাখছেন থুতনিতে। ঝালকাঠি বাস টার্মিনালে বরিশালগামী বাসে উঠে দেখা যায়, কোনো হেল্পারের মুখেই মাস্ক ছিল না। এছাড়া মাস্ক নেই এমন অনেক যাত্রী তুলছেন তারা। বেশিরভাগ বাসেই দাঁড়িয়ে যাত্রী নিতে দেখা যায়।
মাস্ক ছাড়া যাত্রী ওঠানোর বিষয়ে জানতে চাইলে বাসের হেল্পার মইনুল ইসলাম বলেন, যাত্রীরা মাস্ক পরতে চান না। আমরা তো চুক্তিতে বাসে চাকরি করি। দিনশেষে ভাড়ার টাকা মিলিয়ে মালিককে বুঝিয়ে দিতে হয়। আমরা না নিলে তো অন্য কোনো গাড়িতে ঠিকই যাবে। এজন্য কোনো যাত্রীকে না করতে পারি না।
হাসপাতাল ও শপিং সেন্টারগুলোতে (মার্কেট) গাদাগাদি করে কেনাকাটা করছে ক্রেতারা। শহরের কুমারপট্টি মার্কেট থেকে তিনজন বের হলেন। তাদের দুজনের মুখে মাস্ক নেই। আরেকজনের মাস্ক ঝুলছিল গলায়। তিনি বললেন, ‘বেশিক্ষণ মাস্ক পরে থাকতে পারি না। শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।’
করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের সংক্রমণ রোধে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কিছু বিধিনিষেধ দিয়েছে। বিধিনিষেধে মাস্কের ব্যবহার নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। রেস্তোরাঁয় বসে খাবার খেতে হলে দেখাতে হবে টিকার সনদ। এছাড়া নির্দেশনায় সক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করার কথা থাকলেও পরবর্তী সময়ের পরিবহন মালিকদের দাবির মুখে সরকার সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।
গণপরিবহনের মতোই বিধিনিষেধ উপেক্ষিত দেখা যায়, হোটেল, রেস্তোরাঁ, বাজার ও বিপণিবিতানে। একটি রেস্তোরাঁয় গিয়ে কথা হয় ব্যবস্থাপক মো. মাইনউদ্দিনের সঙ্গে। তিনি অকপটে স্বীকার করলেন খেতে আসা ব্যক্তিদের কাছে টিকা সনদ দেখতে চান না তারা। টিকার সনদ দেখাতে বললে অনেকে বিরক্ত হয়ে না খেয়ে চলে যান বলে জানান তিনি।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, মানুষের উপচেপড়া ভিড়। বিক্রেতাদের অধিকাংশের মুখে মাস্ক নেই। মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব। সবজি, ফল, মাছ ও মুরগির ২০টি দোকান ঘুরে একজন মাছ ও সবজি বিক্রেতার মুখে মাস্ক দেখা যায়।
সবজি বিক্রেতা আব্বাস শিকদার বলেন, সব সময় মাস্ক পরা হয় না। তবে ক্রেতা এলে তখন মুখে মাস্ক পরি। তার সঙ্গে কথা বলার সময় একজন ক্রেতা আসার পরে টাকা রাখার বাক্স থেকে মাস্ক বের করে কথা বলা শুরু করেন তিনি।
সদর হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, চিকিৎসা সেবাপ্রত্যাশীরা যখন ডাক্তারের রুমে যান তখন মাস্ক পরে প্রবেশ করেন। কিন্তু রুমে প্রবেশের আগে ও রুম থেকে বের হয়ে তাদের বেশিরভাগই মাস্ক ব্যবহার করছেন না।
স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা তৈরি না হওয়া প্রসঙ্গে সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. আমির হোসাইন বলেন, ‘প্রজ্ঞাপন জারি করে মাস্ক পরতে বলা হয়েছে। এসব কাজে মানুষের আচরণগত পরিবর্তন করতে হয়। সেখানে উদ্বুদ্ধ করতে হয়, বাধ্য করতে হয়। জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হয়। এ জায়গায় আমাদের দুর্বলতা আছে। সম্পৃক্ততার অভাবে মাস্কে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে পারিনি।’
তিনি বলেন, ‘মাস্ক পরার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে উৎসাহ দিতে হবে। অন্যদিকে মাস্ক পরাতে সবাইকে বাধ্য করতে হবে। পাশাপাশি পাড়া-মহল্লায় গণতদারকি কমিটি করে সবাইকে মাস্ক পরার কথা বলতে হবে, প্রয়োজনে বাধ্য করতে হবে।’
আতিকুর রহমান/এআরএ