প্রাণ ফিরেছে মরা খালে

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি পটুয়াখালী
প্রকাশিত: ০৮:৩৫ এএম, ২৯ জানুয়ারি ২০২২

পটুয়াখালীতে পরিত্যক্ত জলাশয় খনন করে মাছচাষের আওতায় এনেছে মৎস্য বিভাগ। এর ফলে এলাকার বেকার যুবকদের যেমন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে তেমনি অভ্যন্তরীণ উৎস্যগুলোতে মাছের উৎপাদনও বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এতে করে এখন শুষ্ক মৌসুমে এসব জলাশয়ের পানি ব্যবহার করে চাষাবাদ করা সম্ভব হচ্ছে। ফলে কৃষি ব্যবস্থাপনায় অনেকেরই কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

পটুয়াখালীসহ দক্ষিণ উপকূলে জালের মত ছড়িয়ে ছিটিয়ে আঠে খাল ও জলাশয়। তবে দীর্ঘদিন খনন না করায় মাটি ভরাট হয়েছে অধিকাংশ জলাশয়। সম্প্রতি মৎস্য বিভাগের মাধ্যমে পরিত্যক্ত এসব জলাশয় খনন করার উদ্যোগ নেয় সরকার। মৎস্য বিভাগের জলাশয় সংস্কারের মাধ্যমে মৎস্য চাষ সম্প্রসারণ প্রকল্পের মাধ্যমে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে ২৬টি খাল এবং পুকুর পুনঃখনন করা হয়েছে। যার আয়তন ৩০ হেক্টরেন বেশি।

fish1

বর্তমানে এসব জলাশয়ে স্থানীয়দের অংশিদারিত্বের ভিত্তিতে চলছে মাছচাষ। আর খালের পাড়ে চলছে বিভিন্ন শাক সবজির চাষাবাদ। ফলে করোনা মহামারিতে কাজ হারানো অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

পটুয়াখালীর কমলাপুর এলাকার কৃষক আব্দুল বারেক মৃধা বলেন, আমাদের গ্রামের কেওয়াবুনিয়া খালটি গত বছর খনন করা হয়েছে। আগে শুকনো মৌসুমে আমাগো গরু-বাছুর গোসল করাইতে কষ্ট হইতো। খালে পানি থাকতো না। কিন্তু মৎস্য বিভাগ খাল খনন করায় এখন সব সময় খালে পানি থাহে, আমরা গরু-মহিষ গোসল করাইতে পারি। খালে পানি না থাকায় অনেকে হাঁস পালা বন্ধ করে দিছিলো। এখন খাল পাড়ের সবাই হাঁস পালতেছে। আমরা সরকারকে ধন্যবাদ জানাই।

একই এলাকার সমাজসেবক লতিফ আকন জানান, বর্ষা মৌসুমে অনেক জমি জলাবদ্ধ থাকতো আবার শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে অনেক জমিতে ফসল ফলানো যেত না। এখন আর সে সমস্যা হচ্ছে না। সব সময় পানি থাকায় সবাই চাষাবাদ করতে পারছে। আর খালের পাড়গুলোতে সবাই শাক সবজি চাষ করছেন।

fish1

পটুয়াখালী মৎস্য বিভাগের জেলা কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্যাহ জানান, ভরাট হয়ে যাওয়া জলাধারগুলোতে আবারও পানির যোগান নিশ্চিত করার পাশপাশি স্থানীয় মানুষকে মাছচাষে উৎসাহী করতেই সরকার এমন একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। জলাশয়গুলো খননের পাশপাশি সেটিকে কিভাবে মানুষের ব্যবহার উপযোগী করা যায় সে বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া জলাশয়গুলোতে যাতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মাছচাষ করা যায় সেজন্য খাল পাড়ের মানুষদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মৎস্য বিভাগের জলাশয় সংস্কারের মাধ্যমে মৎস্যচাষ সম্প্রসারণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আলিমুজ্জামান চৌধুরী বলেন, পুনঃখনন হওয়া খাল ও জলাশয়গুলো যাতে মাছচাষের পাশপাশি কৃষি ও মানুষের দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করা যায় সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এতে করে মাছ উৎপাদনের পাশাপাশি কৃষি ব্যবস্থাপনা এবং স্থানীয়দের জীবন জীবিকায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব হয়েছে। পটুয়াখালীসহ দক্ষিণ উপকূলের এসব খাল পুনঃখনন করে পানি প্রবাহ সচল করতে পারলে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধির পাশপাশি এক ফসলি জমিকে দুই ফসলি এবং দুই ফসলি জমিকে তিন ফসলি জমিতে রূপান্তর করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

আব্দুস সালাম আরিফ/এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।