কুয়াকাটায় ‘চর বিজয়ে’ বাড়ছে পর্যটন সম্ভাবনা

আসাদুজ্জামান মিরাজ আসাদুজ্জামান মিরাজ , উপজেলা প্রতিনিধি, কলাপাড়া (পটুয়াখালী)
প্রকাশিত: ০৫:০৩ পিএম, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২

অডিও শুনুন

বছরের পর বছর জেলেরা যেখানে মাছ শিকারের জন্য জাল ফেলতো, সেই স্থানেই সাগরের বুক চিরে জেগে উঠেছে দ্বীপ। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের ৪০ কিলোমিটার গভীরে জেগে ওঠা এ দ্বীপকে ঘিরে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

সাগরকন্যা কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব কোণে বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠা এ চরের সন্ধান মেলে ২০১৭ সালের ৪ ডিসেম্বর। বিজয়ের মাস হওয়ায় দ্বীপের নাম রাখা হয় ‘চর বিজয়’।

এ চরে প্রথম পা রাখা ১৩ জনের একটি টিমের অন্যতম জল তরনী ট্যুরিজমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চিত্র সাংবাদিক আরিফুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে প্রথম এই চরে আমরা যাই। ১৩ জনের একটি টিম ডিসেম্বরে এটির সন্ধান পাওয়ায় স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপ করে নামকরণ করা হয় চর বিজয়। যদিও সবার আগে এ চরের সন্ধান দেন জেলেরা।

jagonews24

‘এরপর থেকেই কুয়াকাটায় আগত পর্যটক, স্থানীয় ব্যাবসায়ীসহ বিভিন্ন মানুষ চর বিজয়ে যান। তবে সরকার যদি এই দ্বীপকে ঘিরে পর্যটকদের জন্য বিশেষভাবে উদ্যোগ নেয় তবে এটি কুয়াকাটার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে বিশ্বে পরিচিতি লাভ করবে’- বলেন তিনি।

জানা গেছে, বর্ষার ছয়মাস পানিতে ডুবে থাকে আবার শীতে ধু-ধু বালুচরের এই দ্বীপে দখল নিয়ে থাকে লাল কাঁকড়া ও নানা প্রজাতির পরিযায়ী পাখি। আট পায়ে ভর করে চলা লাল কাঁকড়ার দল খণ্ড খণ্ডভাবে পুরো দ্বীপ লাল করে রাখে। গাঙচিল, চ্যাগা, বালি হাঁসসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখিরা কখনো পানিতে আবার কখনও পুরো দ্বীপ আকাশে বিচরণে ব্যস্ত থাকে।

jagonews24

চরটি পুরোপুরি জেগে উঠার আগে জেলেরা এটাকে ডুবোচর নামে চিনতো, আবার অনেক জেলে এখনও ‘হাইড়ের চর’ নামেও চেনে। কুয়াকাটায় ঘুরতে আসা পর্যটকরা কোলাহলমুক্ত পরিবেশের সময় কাটাতে আসেন এই চরে। চারদিকে সমুদ্র তার মাঝে দ্বীপ-বিষয়টা অনেকেই প্রাণ ভরে উপভোগ করেন।

চর বিজয়ে ঘুরতে এসে সেলফি তুলতে ব্যস্ত পর্যটক মারুফ জানান, চারপাশে সমুদ্র, তার মাঝে দাঁড়িয়ে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিচ্ছি। লাল কাঁকড়া ও পাখির সৌন্দর্য মুগ্ধ করছে প্রতিটি মুহূর্ত। ট্যুরের সবচেয়ে প্রশান্তি এখানেই খুঁজে পেয়েছি।

jagonews24

চর বিজয়ের পাশে মাছ ধরতে থাকা জেলে রুস্তম আলী জানান, চরের যেখানে দাঁড়িয়ে রয়েছি আগে এখানেই মাছ ধরতাম। এখন মাঝে মাঝে এখানে বিশ্রাম নেই। অনেক লোক এই চর দেখতে আসেন।

আন্ধার মানিক ট্যুরিজমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এম বাচ্চু জাগো নিউজকে জানান, কুয়াকাটায় দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম চর বিজয়। এখানে অসংখ্য লাল কাঁকড়া ও পরিযায়ী পাখির দেখা মেলে। পর্যটকদের বোটের মাধ্যমে এ চরে ট্যুর করানো হয়।

jagonews24

পটুয়াখালীর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল-মামুন জাগো নিউজকে বলেন, ইতিমধ্যে চর বিজয়ে ১০০ হেক্টর জমিতে বনায়নের কাজ শুরু হয়েছে। আপাতত কেওড়া গাছ রোপণ চলছে। এ মাসেই আরও বড় ধরনের পরিকল্পনা নেওয়া হবে।

কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদুল হক জাগো নিউজকে জানান, চর বিজয় একটি অপার সম্ভাবনা। এখানে যদি আধুনিক মানের পর্যটন কেন্দ্র করতে চাই তাহলে সর্বপ্রথম এটাকে রক্ষা করতে হবে। সেজন্য সবার আগে প্রয়োজন এখানকার পরিবেশ রক্ষা করা। চর বিজয়টা মূলত পরিযায়ী পাখি, লাল কাঁকড়া ও কচ্ছপের অভয়াশ্রম হিসাবে দেখা হচ্ছে। তাই আপাতত কোনো পর্যটক যেন সেখানে না যায় সেজন্য প্রশাসন থেকে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। সবার সহযোগিতায় এখানে নতুন সম্ভাবনাময় স্পষ্ট করা সম্ভব।

jagonews24

ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা জোন সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল খালেক জাগো নিউজকে জানান, চর বিজয় কুয়াকাটার অন্যতম ভ্রমণ স্পট। অনেক পর্যটক প্রতিনিয়ত সেখানে যায়। তবে আমরা চর বিজয়ে নামতে নিষেধ করি। একান্তই দেখতে চাইলে বোট নিয়ে চরের পাশ থেকে ঘুরে দেখার কথা বলি। সেজন্য আমাদের টহল টিম সার্বক্ষণিক তদারকি করছে।

এএইচ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।