ঈদযাত্রায় ভোগান্তি হতে পারে বিআরটি প্রকল্পের টঙ্গী-গাজীপুর অংশে

আমিনুল ইসলাম
আমিনুল ইসলাম আমিনুল ইসলাম , জেলা প্রতিনিধি, গাজীপুর গাজীপুর
প্রকাশিত: ০৫:১৭ পিএম, ২১ এপ্রিল ২০২২
বিআরটি প্রকল্পের টঙ্গী-গাজীপুর অংশে চলমান কাজে ঈদযাত্রায় ভোগান্তির শঙ্কা

এবার যারা ঈদের ছুটিতে রাজধানী থেকে দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে যাবেন তাদের জন্য যানজটে দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়াবে টঙ্গী থেকে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের ১২ কিলোমিটার সড়ক। নির্মাণাধীন এ প্রকল্পের প্রায় ৭৩ ভাগ কাজ সম্পন্ন হলেও দুর্ভোগ কমছে না যাত্রীদের। এমনিতেই প্রতিদিন ওই সড়কে যানজট লেগেই থাকে তারপর ঈদে অতিরিক্ত যাত্রী ও যানবাহনের চাপে তৈরি হবে এক হ-য-ব-র-ল অবস্থা। এমন আশঙ্কা করছেন এ সড়কে চলাচলকারী যাত্রী, পরিবহন মালিক-শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্টরা।

তবে টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত এ সড়কটি ঈদের সময় সচল রাখতে বিআরটি কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নানা পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। বিআরটি কর্তৃপক্ষ বলছে, রাস্তার তিনটি অংশের মধ্যে মাঝখানের অংশটি বিআরটির নির্ধারিত গাড়ির জন্য রাখা হয়েছে। সেটির নির্মাণকাজ এখনো চলমান।  পূর্ব ও পশ্চিম পাশে দুটি সড়ক দিয়ে সব ধরনের যান চলাচলের জন্য এরই মধ্যে পিচ ও সিসি ঢালাই দিয়ে নির্মাণ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। টঙ্গীতে কিছু অংশে নির্মাণকাজ চলমান। ঈদের আগে রাস্তাটি পুরোপুরি সচল রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার মহাসড়কের মধ্যে বর্তমানে টঙ্গী থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার সড়কে খানাখন্দ ও ভাঙাচোরা থাকলেও বাকি অংশে তা নেই। ওই সড়কে কয়েক বছর ধরে বিআরটি প্রকল্পের কাজ চলমান। যার কারণে ১২ কিলোমিটার সড়ক অতিক্রম করতে এখন সময় লাগে ৫-৬ ঘণ্টা। কখনো কখনো এর চেয়েও বেশি। করোনার বিধিনিষেধ এবার না থাকায় গত বছরের তুলনায় কয়েকগুণ মানুষ এবার ঈদে গ্রামের বাড়ি যাবেন। তাই ঈদযাত্রায় এবার চরম ভোগান্তির আশঙ্কা করছেন ওই পথে চলাচলকারীরা।

তবে বিআরটি প্রকল্পের কর্মকর্তারা বলছেন, এখন সড়কের কিছু অংশ ভাঙাচোরা। বাকি অংশে কার্পেটিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। ঈদ মাথায় রেখে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের ৭৩ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিআরটি প্রকল্পের সড়কের ওপরে উড়ালসড়ক এবং নিচে কার্পেটিং এখনো অনেক জায়গায় শেষ হয়নি। কাজ চলমান থাকায় মহাসড়কের কোথাও তিন লেন কোথাও, কোথাও দুই লেনে পরিণত হয়েছে। এতে ওই পথে যানবাহন খুবই ধীরগতিতে চলছে। যার কারণে সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের।

গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় যানবাহনের বেশ জটলা লেগে আছে। সেখানেও বিআরটি প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রকল্পের কাজের কারণেই যানবাহনগুলো তাদের স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারছে না। যে কারণে দুদিক থেকে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এরপর ভোগড়া বাইপাস মোড়ে সড়কের দুই পাশ দিয়ে এখন স্বাভাবিক গতিতে যানবাহন চললেও গাড়ি চাপ বেড়ে গেলে তখন সংকুচিত সড়কে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এরপর গাছা, মালেকের বাড়ি, বোর্ডবাজার, কুনিয়া বড়বাড়ি এলাকায় বিআরটি প্রকল্পের স্টেশন তৈরির কাজ চলমান থাকায় সেখানে যানবাহন স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারছে না। গাজীপুরা এলাকায় সড়কের মাঝে উড়াল সড়ক তৈরির ব্লক রেখে দেওয়ায় দুই পাশে সংকুচিত সড়ক দিয়ে থেকে থেমে যানবাহন চলছে।

jagonews24

গাজীপুর এলাকার বাসিন্দা ও স্থানীয় ব্যবসায়ী রমজান আলী বলেন, দীর্ঘদিন হয়ে গেছে সড়কের মাঝে উড়াল সড়ক তৈরির ব্লক রাখা হয়েছে। এতে দুই পাশের সড়ক ছোট হয়ে যাওয়ায় প্রায়ই এখানে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। তাই ঈদের আগে ব্লকগুলো সরিয়ে দেওয়া হলে যানবাহন স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারবে।

গাজীপুরা অতিক্রম করে চেরাগআলী আফতাব সিএনজি স্টেশনের সামনে এবং ট্রাকস্ট্যান্ডের সামনের এলাকায় থেমে থেমে যানবাহন চলাচল করছে। টঙ্গীর মিলগেট এলাকা থেকে টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার সড়কের কার্পেটিং না করায় সেখানে সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দ। এর মধ্যেই যানবাহনগুলো হেলেদুলে চলছে। বৃষ্টি হলে সেখানকার অবস্থা আরও ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

টঙ্গীর মিলগেট এলাকায় জামান মোটরসের সামনে কাজ করছেন বিআরটি প্রকল্পের শ্রমিকরা। সেখানে কথা হয় হানিফ শেখ নামে এক শ্রমিকের সঙ্গে। তিনি বলেন, এখানে স্টেশন নির্মাণ ও ওভারপাস তৈরি করা হবে। এজন্য করা পাইলিং ভাঙার কাজ চলছে। এতে যানবাহন চলাচলে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।

গাজীপুর পরিবহন শ্রমিক নেতা সুলতান সরকার জানান, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা ও ভোগড়া বাইপাস সড়ক ঢাকার অত্যন্ত ব্যস্ততম ও গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক দিয়ে অনেকগুলো জেলার মানুষ রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াত করেন। প্রতিদিন সড়কটি দিয়ে হাজার হাজার যাত্রীবাহী বাসসহ পণ্যবাহী ট্রাক, লরি চলাচল করে। গত দুই বছরের চেয়ে এবার কয়েকগুণ বেশি মানুষ ঈদে গ্রামের বাড়ি যাবেন। তাই এবার মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেশ বাড়বে। যার কারণে এখন থেকেই মানুষ শঙ্কার মধ্যে আছেন।

এলাকাবাসী জানান, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বড় একটি সমস্যা সড়কে পানি জমে থাকা। বৈশাখের শুরু থেকে বৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেই হিসেবে ঈদের আগেও বৃষ্টি হতে পারে। বৃষ্টি হলে টঙ্গী থেকে চেরাগআলী পর্যন্ত চরম ভোগান্তি পোহাতে হবে বলে আশঙ্কা করছেন যাত্রীরা। অল্প বৃষ্টিতেই ওইসব এলাকায় সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। জলাবদ্ধতা হলে যানজট বেড়ে যায় কয়েকগুণ।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এক জরিপে দেখা গেছে- ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক দিয়ে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ৬০ হাজার যানবাহন চলাচল করে। ঈদের আগে এই সংখ্যা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। ঈদ উপলক্ষে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে অতিরিক্ত ১০০ পুলিশ সদস্য নিয়োজিত করা হবে। যারা পালা করে দায়িত্ব পালন করবেন।

বিআরটি প্রকল্পের পরিচালক এ এস এম ইলিয়াস শাহ বলেন, পুরো প্রকল্পের এখন পর্যন্ত ৭৩ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। ঈদযাত্রাকে প্রাধান্য দিয়ে কাজের গতি আরও বাড়ানো হয়েছে। ঈদের আগে সড়কে নিচের যে অংশে কার্পেটিং বাকি রয়েছে সেগুলো শেষ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আশা করি, ঈদ যাত্রার আগেই সড়কটি পুরোপুরি চলাচলের উপযোগী করে তোলা হবে।

ঢাকার জন্য ২০০৫ সালে করা ২০ বছরের পরিবহন পরিকল্পনার (এসটিপি) আওতায় বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়কে বাসের আলাদা লেন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এটাই বিআরটি প্রকল্প, যা ২০১২ সালের ১ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন পায়। প্রকল্প শুরুর পর থেকেই সড়কটিতে গর্ত-খানাখন্দে মানুষজন ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। প্রকল্পের আওতায় গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত চার কিলোমিটার উড়ালপথ, ছয়টি উড়াল সড়ক, ২৫টি বিআরটি স্টেশনসহ নির্মাণ করা হবে সাড়ে ২০ কিলোমিটার করিডোর। এর মধ্যে দুটি বিআরটি লেন, চারটি মিক্সড ট্রাফিক লেন, দুটি অযান্ত্রিক লেন, পথচারীর জন্য পাতালপথসহ সড়কের উভয় পাশে থাকবে ৬৫টি সংযোগ সড়কসহ অন্যান্য সুবিধা। চারটি সংস্থাকে ভাগ করে দেওয়া মোট কাজের ৭৩ শতাংশ শেষ হয়েছে।

এমআরআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।