নান্দনিকতা ছড়াচ্ছে চা শ্রমিকদের টাকায় গড়া মসজিদটি
চা শ্রমিকদের ঘাম ঝরানো অর্থ দিয়ে তৈরি এক সময়ের দোচালা মসজিদটি এখন দৃষ্টিনন্দন ঐতিহ্যের স্মারক। মৌলভীবাজার জেলায় ৯২টি চা বাগান থাকলেও এত বড় মসজিদ কোনো বাগানে নেই। দোতলা বিশাল এ মসজিদটি রয়েছে জেলার রাজনগর উপজেলার ইটা চা বাগানে। ৬নং রসুলপুর সেকশনে ২ বিঘা জমির ওপর ইটা বাগান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের অবস্থান।
মসজিদ সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ৭০ বছরের পুরানো এই মসজিদটি কোটি টাকা ব্যয় করে আধুনিক ডিজাইনে দৃষ্টিনন্দন করে তোলা হয়েছে। মসজিদে রয়েছে ৫টি গুম্বুজ। ২০০০ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারেন এই মসজিদে। আধুনিক টাইল্স লাগিয়ে দৃষ্টিনন্দন করে তোলা হয়েছে মসজিদটি।
ইটা চা বাগানের শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাগানে প্রায় ১২ হাজার মুসলিম শ্রমিকের বসবাস। এদের আগমন ঘটে ভারতের হায়দারাবাদ থেকে। আসার পর তারা বাগানের জুম্মা টিলায় দো’চালার একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। এরপর প্রয়োজনের তাগিদে মসজিদটি স্থানান্তর করা হয়।
চা বাগানে কথা হয় মসজিদের সহ-সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আব্দুল জাব্বারের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, বৃটিশ আমলে আমরা ভারতের হায়দারাবাদ থেকে এখানে এসেছিলাম। ষাটের দশকের শুরুর দিকে বাগান পঞ্চায়েত ইটা মসজিদটি জুম্মা টিলা নামক স্থানে ছনের চালা দিয়ে নির্মাণ করেন আমাদের পূর্বপুরুষরা। নামকরণ করা হয় বায়তুন নাজাত।

বর্তমানে এর নাম পরিবর্তন করে ইটা চা বাগান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ নাম দেওয়া হয়েছে। প্রথম ইমাম ছিলেন জেলার বড়লেখা উপজেলার সাগরনালের এক হুজুর। তার নাম এখন আর কারো মনে নেই। তিনি টানা ২১ বছর এখানে ইমামতি করেছেন।
অর্থ সম্পাদক হাসানুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, ইটা চা বাগানের ৬নং রসুলপুর সেকশনে অবস্থিত ৭০ বছরের ঐতিহ্যবাহী মসজিদ ইটা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ। ঈদ ও রমজানে ২০০০ হাজার মুসল্লির সমাগম ঘটে এখানে। সাধারণত প্রতি ওয়াক্তে ৫ থেকে ৭০০ মানুষ নামাজ আদায় করে থাকেন।
মসজিদের সাধারণ সম্পাদক মো. ইসরাফিল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, চা শ্রমিকের সাপ্তাহিক মজুরি থেকে প্রতিজনে ১৫ টাকা চাঁদা আদায় ও প্রবাসী শ্রমিকদের অনুদান নিয়ে আমাদের ৭০ বছরের ঐতিহ্যবাহী মসজিদ এগিয়ে চলছে।
ইটা চা বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি নাছিম আহমদ জাগো নিউজকে বলেন, ইটা চা বাগান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ চা শ্রমিকদের শ্রমের ঘামের টাকা দিয়ে তিলে তিলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মসজিদটিকে আরো আধুনিকায়ন করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ পর্যন্ত এক কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।
আব্দুল আজিজ/এফএ/এমএস