স্ত্রী ও দুই মেয়েকে হত্যা: আত্মহত্যার চেষ্টাকালে সেই চিকিৎসক আটক

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি মানিকগঞ্জ
প্রকাশিত: ০১:৪১ পিএম, ০৮ মে ২০২২

মানিকগঞ্জের ঘিওরে স্ত্রীসহ দুই মেয়েকে গলা কেটে হত্যার অভিযোগে দন্ত চিকিৎসক আসাদুজ্জামান রুবেলকে (৪০) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন তিনি। ঋণগ্রস্ত হওয়ায় ও মানিসক হতাশা থেকে এই হত্যাকাণ্ড বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ঘিওর উপজেলার বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের আঙ্গুরপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। রোববার (৮ মে) সকালে পুলিশ মরদেহ তিনটি উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।

নিহতরা হলেন, আসাদুজ্জমান রুবেলের স্ত্রী লাভলী আক্তার (৩৫), বড় মেয়ে বানিয়াজুরী সরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছোঁয়া আক্তার (১৬) ও ছোট মেয়ে বানিয়াজুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী কথা আক্তার (১২)।

ঋণগ্রস্ত হওয়ার কারণে রুবেল স্ত্রী ও দুই মেয়েকে হত্যা করেছেন বলে দাবি প্রতিবেশী ও পুলিশের। ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

ঘিওর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বিপ্লব জানান, উপজেলার আঙ্গুরপাড়া গ্রামের আব্দুল বারেকের ছেলে আসাদুজ্জামান রুবেল রোববার ভোরে তার স্ত্রী ও দুই মেয়েকে গলা কেটে হত্যা করে। তিনি উপজেলার বানিয়াজুরী বাসস্ট্যান্ডে দন্ত চিকিৎসক হিসেবে হিসেবে দীর্ঘদিন যাবত কাজ করে আসছেন।

স্ত্রীসহ দুই মেয়েকে হত্যা: আত্মহত্যার সময় সেই চিকিৎসক আটক

রুবেলের প্রতিবেশী সোহেল হোসেন জানান, ২০ বছর আগে রুবেল ও লাভলী ভালোবেসে ঘর বাঁধেন। দীর্ঘদিন যাবত তারা সুখে শান্তিতে সংসার করে আসছিলেন। ১৫ বছর যাবত রুবেল আঙ্গুরপাড়ায় একই গ্রামে তার শ্বশুরবাড়ি থেকে পাওয়া জমিতে একটি ছাপড়া ঘরে বসবাস করে আসছিলেন। কিন্তু বেশ কিছুদিন যাবত তিনি ঋণগ্রস্ত হয়ে মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এ নিয়ে পারিবারিক কলহ বাড়তে থাকে। শনিবার রাতে তাদের মাঝে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে এমন ঘটনা ঘটতে পারে।

লাবনীর ভাতিজা সাইফুল ইসলাম জানান, রুবেল বানিয়াজুরী বাজারের দন্ত চিকিৎসক হিসেবে কাজ করতেন। সম্প্রতি একটি ভুল চিকিৎসায় তাকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। ওই জরিমানার টাকা আজ রোববার দেওয়ার কথা ছিলো। এ নিয়ে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। স্ত্রী ও দুই কন্যাকে হত্যা করে তিনি ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাটুরিয়া এলাকায় বাসের নিচে পড়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টাও করেছিলেন। তাকে আহত অবস্থায় পাটুরিয়া থেকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।

লাবনী আক্তারের মা হালিমা বেগম বলেন, সকালে প্রাতভ্রমণ শেষে মেয়ের বাড়িতে যাই। এ সময় ডাকাডাকি করেও কারো কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি। পরে ঘরের বাইরের ছিকল খুলে দেখি রক্ত। খাটে শুয়ে আছে মেয়ে লাবনী ও দুই নাতনি। তাদের ডাক দিলেও কোনো সাড়া না দেওয়ায় ধাক্কা দিয়ে দেখি তাদের গলা কাটা।

স্থানীয় বালিয়াখোড়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আওয়াল খান বলেন, রুবেল অনেক টাকা ঋণগ্রস্ত হয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। যার দরুন এমন ঘটনা ঘটতে পারে বলে তিনি ধারণা করেন।

স্ত্রীসহ দুই মেয়েকে হত্যা: আত্মহত্যার সময় সেই চিকিৎসক আটক

শিবালয় সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নুরজাহান লাবনী বলেন, স্থানীয়দের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে দেখতে পাওয়া যায় একটি ঘরে মা ও দুই মেয়েকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। যে দা দিয়ে গলা কাটা হয়েছে সেটিও ঘর থেকে উদ্ধার করা হয়।

ঘিওর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াজুদ্দিন আহমেদ বিপ্লব জানান, আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন অভিযুক্ত রুবেল। প্রথমে তার স্ত্রী ও পরে দুই সন্তানকে হত্যা করা হয়। নিজে আত্মহত্যা করলে স্ত্রী সন্তানদের ঋণের বোঝা বইতে হবে। এজন্য তাদেরকে নিয়েই পৃথিবী থেকে চলে যাবেন। এই ভাবনা থেকেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটান তিনি।

এ ঘটনায় নিহত লাবনী আক্তারের বাবা মো. শাহাজুদ্দিন বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়েরের প্রস্ততি নিচ্ছেন।

বি.এম খোরশেদ/এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।