মৌচাকের অর্ধেক মধু শাহ আলমের মজুরি

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ঝালকাঠি
প্রকাশিত: ১২:০১ পিএম, ১১ মে ২০২২
ঘুরে ঘুরে মজুরি হিসাবে নেওয়া মধু বিক্রি করছেন শাহ আলম

শাহ আলম, বয়স ৫৫ বছর। সুন্দরবনের মৌয়াল না হলেও মধু সংগ্রহে জানেন বিশেষ কৌশল। তাই এলাকাবাসীও মৌচাক ভাঙতে খোঁজেন তাকে। ডাক পেলে ছুটে যান শাহ আলমও। মৌচাকের অর্ধেক মধু গাছ মালিককে দিয়ে বাকি অর্ধেক নেন মজুরি হিসেবে। সে মধু বিক্রি করেই চলে তার সংসার।

শাহ আলম ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের বাসিন্দা। তার চার মেয়ে। তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন আর ছোট মেয়ে মনোহরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী। মজুরি হিসেবে পাওয়া মধু বিক্রি করে চলে তার সংসার।

সাংগর গ্রামের মোদাচ্ছের বলেন, আমাদের বাড়ির আমগাছে মাঝারি ধরনের একটা মৌমাছির বাসা ছিলো। আমরা তা কাটতে ভয় পাচ্ছিলাম যদি মৌমাছি হুল ফুটায়। তাই শাহ আলমকে খবর দিই। শাহ আলম এসে মৌচাক থেকে ৬কেজি মধু সংগ্রহ করে। আমাদের অর্ধেক দেয় বাকিটা সে নেয়।

প্রতিটি মৌচাক তেকে গৃহস্থালির লোকজন যে পরিমাণ মধু সংগ্রহ করতে পারেন তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি মধু পান শাহ আলম। মৌচাক জমলেই এলাকাবাসীও খোঁজেন তাকে।

মৌচাকের অর্ধেক মধু শাহ আলমের মজুরি

শুক্তাগড় গ্রামের আবুল হোসেন বলেন, ‘নারিকেল গাছের খোড়লে মৌমাছি বাসা বানায়। সেখান থেকে মৌমাছি ঢুকে ও বের হতে দেখি মাসখানেক ধরে। বাসায় মধু আছে তা ভেবে শাহ আলমকে খবর দিই। সে এসে বিশেষ পোশাক পরে মধু সংগ্রহ করে। সেখান থেকে তিন কেজির মতো মধু পাই। আমাদের অর্ধেক দিয়ে বাকি অর্ধেক সে নেয়। এজন্য তাকে আলাদা কোনো মজুরি দিতে হয়নি।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের গ্রামের শাহ আলম মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করেন। তাতে যা উপার্জন হয় কোনোমতে সংসার চালায়। আমাদের এলাকার মধ্যে সে ব্যতিক্রমী শ্রমজীবী মানুষ। আমরাও তার কাছ থেকে খাঁটি মধু কিনে নিই।

মৌচাকের অর্ধেক মধু শাহ আলমের মজুরি

শাহ আলম জানান, অভাবী সংসারে জন্ম নেওয়ায় পড়াশোনার সুযোগ পাননি তিনি। প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পরই শুরু করেন দিনমজুরির কাজ। একসময় বরিশালের মৌয়ালদের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। কোথাও মৌচাকের সন্ধান পেলেই তাকেও ডাকতে মৌয়ালরা। এক বছরের মধ্যেই আয়ত্ত করে নেন মৌচাক মধু সংগ্রহের কৌশল। এরপর নিজেই পেশাদার মৌয়াল হিসেবে সাত-আট বছর ধরে মধু সংগ্রহ এবং বিক্রি করছেন।

শাহ আলম বলেন, প্রতিটি মৌচাক থেকে কম হলেও তিন থেকে ছয় কেজি মধু পাওয়া যায়। অর্ধেক পরিমাণ মধু মজুরি হিসাবে নেই। প্রতি কেজি মধু ৮০০ টাকা দরে বিক্রি করি। প্রতিদিন মৌচাকের সন্ধান পাওয়া যায় না। মাঝেমধ্যে যখন পাই তখন উপার্জন বেশ ভালোই হয়। যখন মধু সংগ্রহের কাজ থাকে না তখন দিনমজুরের কাজ করি।

আতিকুর রহমান/এসজে/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।