ভালোবাসার টানে কারাগার থেকে সঙ্গে এলো কবুতর

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ঝিনাইদহ
প্রকাশিত: ০৩:৪৬ পিএম, ১৭ জুন ২০২২

মাঝে মধ্যে শোনা যায় ভালোবাসার টানে শত শত মাইল পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন তরুণ-তরুণীরা। এমন ঘটনার সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত। তবে এবার ঘঠেছে এক ব্যতিক্রমী ঘটনা। এবার তরুণ-তরুণী নয়, ভালোবাসার টানে কয়েকদিন আগে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বাকড়ি গ্রামের মিজানুর রহমানের বাড়িতে চলে এসেছে এক জোড়া কবুতর।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হত্যা মামলায় রায় হওয়ার সময় আসামি মিজানুর রহমানের বয়স ছিল ২৫ বছর। এরপর দীর্ঘ ২২ বছর ১০ মাস পর গত ২ জুন তিনি মুক্তি পেয়েছেন। কারাজীবনে তিনি ঝিনাইদহ, যশোর ও ঢাকা কারাগারে থেকেছেন। সর্বশেষ ছিলেন যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে। এ কারাগারে থাকার সময় মিজানুরের সঙ্গী ছিল এক ঝাঁক কবুতর। তিনি তাদের খাবার দিতেন। এদের মধ্যে দুটি কবুতরের সঙ্গে বন্তুত্ব গড়ে ওঠে তার।

মিজানুর তাদের নাম দেন ‘রাজা’ আর ‘যাদব’। এই রাজা আর যাদবের জন্ম হয় যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের মধ্যে। ৪৭ বছর বয়সে মিজানুর যখন মুক্তি পেয়ে বাড়ি ফিরলেন, তখন তার সঙ্গে রাজা আর যাদবও চলে এলো মিজানুরের বাড়িতে।

মিজানুর রহমান জানান, কারাগারে নিজে কম খেয়ে কবুতরকে খাবার দিয়েছেন। তবে রাজা আর যাদবের প্রতি ছিল আলাদা মায়া। কবুতরগুলোও সারাক্ষণ আশপাশে ঘুরে বেড়াতো। একপর্যায়ে কবুতর দুটি কাঁধে উঠতে শুরু করে। ২ জুন মিজানুরের মুক্তির দিন ধার্য ছিল। তবে এর আগে থেকেই ওই দুই কবুতরের জন্য মিজানুরের চিন্তা শুরু হয়।

jagonews24

মিজানুর জাগো নিউজকে বলেন, ‘কারাগারে দুই কবুতরকে কার কাছে রেখে যাবো ভাবছিলাম। তবে কোনো উপায় না পেয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলি। অবশেষে ২ জুন সন্ধ্যা ৬টায় যখন কারাগার থেকে বের হলাম, তখন রাজা আর যাদবও আমার সঙ্গে চলে এলো।’

এরপর থেকে দুই কবুতর নিয়ে মিজানুর রহমানের নতুন জীবন শুরু হয়। তিনি যে ঘরে ঘুমান, সে ঘরেই কবুতরগুলো থাকতো। তবে ৭ জুন যাদব ঘরের ফ্যানের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এতে কবুতরটি মারা যায়। যাববের মৃত্যুতে খুব কষ্ট পান মিজানুর। সঙ্গীর মৃত্যুতে রাজাও দুদিন কিছু খায়নি।

মিজানুর রহমানের স্ত্রী ফাতেমা খাতুন জাগো নিউজকে বলেন, তার বাড়িতে আরও কবুতর আছে। তবে নতুন কবুতর জোড়া মিজানুরের ঘরে থাকতো। এর মধ্যে একটা মারা গেলেও আরেকটিকে তারা আগলে রেখেছেন।

মিজানুর রহমানের মা রিজিয়া খাতুন বলেন, কবুতরটি সবসময় হাতের ওপর থাকে। রাতে বিছানায় ঘুমায়। এমনকী হাতে করে খাবার না দিলে খায় না। ছেলে যখন সাইকেল নিয়ে বাইরে যায় তখন কবুতরটি তার ঘাড়ে বসে থাকে।

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ কারাগারের সুপার আনোয়ার হোসেন বলেন, সাজা শেষে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসার সময় মিজানুর কবুতর জোড়া বাড়িতে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। এক্ষেত্রে যেহেতু কোনো আইনগত বাধা নেই তাই তাকে কবুতর নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

আব্দুল্লাহ আল মাসুদ/এসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।