বিয়ে করতে বরের বাড়ি হাজির কনে

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ঝিনাইদহ
প্রকাশিত: ০৭:২৩ পিএম, ১৩ জুলাই ২০২২

বরযাত্রী নিয়ে কনের বাড়ি যাবে বর। বিয়ে করে নতুন বউ নিয়ে ফিরবে বাড়ি। আমাদের দেশে সচরাচর এমনটাই হয়। কিন্তু বিয়ের প্রচলিত প্রথা ভেঙে বুধবার (১৩ জুলাই) ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার মনোহরপুর গ্রামে ঘটলো এর উল্টো ঘটনা। কনেযাত্রী নিয়ে বরের বাড়িতে হাজির হন কনে। তবে বিয়ের পর বরের বাড়িতেই থাকেন তিনি।

কনে সংস্কৃতিকর্মী ইতি সেলিনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) গাড়িচালক আব্দুল কাদেরের মেয়ে। আর বর একই উপজেলার সামসুদ্দিন লস্করের ছেলে এম এ মালেক শান্ত। তিনি পেশায় বেসরকারি একটি টেলিভিশনের সাংবাদিক।

জানা যায়, বুধবার দুপুরে কয়েকটি প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসে করে ৪০-৫০ কনেযাত্রী নিয়ে একই উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের এম এ মালেক শান্তর বাড়িতে হাজির হন কনে। প্রথাগতভাবে বিয়ের অনুষ্ঠানস্থলের প্রবেশমুখে যেভাবে বরকে বরণ করা হয়, তেমনি এই বিয়েতেও কনেকে ফুলের মালা পরিয়ে, মিষ্টি মুখ করে বরণ করে নেন বরপক্ষের আত্মীয়-স্বজনরা। এরপর বর-কনে আসনে বসে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন। সব অতিথিদের আপ্যায়ন করানো হয় এবং কনে থেকে যান বরের বাড়িতে। কনেযাত্রীর মধ্যে ছিলেন ইউএনও কানিজ ফাতেমা লিজা, এসি ল্যান্ড বনি আমিন, কনের বাবা আব্দুল কাদেরসহ অন্য আত্মীয়-স্বজনরা।

ব্যতিক্রমধর্মী এই বিয়ের অনুষ্ঠানকে ঘিরে স্থানীয়দের মধ্যে উৎসাহের কমতি ছিল না। বিয়ের অনুষ্ঠান দেখতে বরের বাড়িতে যেমন উৎসাহী লোকজনের ভিড় ছিল তেমনি কনের বাড়িতেও অনেক মানুষ জড়ো হন। আর এই প্রথার বাইরের বিয়ের প্রস্তাবটি আসে মূলত বর শান্তর পক্ষ থেকে। তিনি চেয়েছেন এই বিয়ের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর করার একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে।

বিয়ে করতে বরের বাড়ি হাজির কনে

কনের বাবা আব্দুল কাদের জানান, বরের বাড়িতে তার মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে কনেযাত্রী হিসেবে তিনি সহ পরিবারের সদস্যরা এসেছেন। ব্যতিক্রমী এ বিয়েতে আসতে পেরে তিনি অত্যন্ত খুশি।

এ বিষয়ে কনে ইতি সেলিনা বলেন, ছেলেরা যদি পারে মেয়েদেরকে বিয়ে করে নিয়ে আসতে তাহলে মেয়েরা কেন পারবে না। কনেযাত্রীদের বরের বাড়িতে নিয়ে বিয়ে করতে পেরে আমি অনেক খুশি।

তিনি আরও বলেন, প্রথমে ভেবেছিলাম এভাবে বিয়ে করবো, ঠিক হবে কি না। কিন্তু পরে আমি রাজি হই। শুরুতে দুই পরিবারের আত্মীয়-স্বজন এবং পাড়া-প্রতিবেশী আপত্তি জানালেও পরে তারা রাজি হন।

ব্যতিক্রমী এ বিয়ে নিয়ে বর এম এ মালেক শান্ত বলেন, এই বিয়ের মাধ্যমে সমাজে একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলো। আমরা চেয়েছিলাম বিয়ের একটি নতুন ধারা তৈরি করতে। এতে সমাজে নারী-পুরুষের বৈষম্য একটু হলেও কমবে।

তিনি জানান, এই বিয়ে দুই পরিবারের সম্মতিতে হয়েছে। কনে তার পূর্বপরিচিত। পাঁচ লাখ টাকা দেনমোহরে এ বিয়ে সম্পন্ন হয়।

শৈলকুপার ইউএনও কানিজ ফাতেমা লিজা জানান, ব্যতিক্রমী এ বিয়ের কনে ইতি সেলিনা তার গাড়িচালকের মেয়ে। বিয়ের অনুষ্ঠানে কনেযাত্রী হিসেবে তিনিও উপস্থিত ছিলেন।

আব্দুল্লাহ আল মাসুদ/এমআরআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।