যৌতুক না পেয়ে স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ প্যানেল মেয়রের বিরুদ্ধে
যৌতুকের দশ লাখ টাকা না দেওয়ায় স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ঝালকাঠির নলছিটি পৌরসভার প্যানেল মেয়র পলাশ তালুকদার ও তার ভাই সোহাগ তালুকদারের বিরুদ্ধে। দুই ভাইয়ের নির্যাতনের শিকার রেশমা বেগম (৩৫) বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি রয়েছেন। এ ঘটনায় তিনি স্বামী ও দেবরের বিরুদ্ধে নলছিটি থানায় অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগে জানা যায়, ১৩ বছর আগে পারিবারিকভাবে নারায়গঞ্জের কাইয়ুমপুর এলাকার মো. আলী আশাবের মেয়ে রেশমা বেগমের সঙ্গে ঝালকাঠির নলছিটি পৌরসভার বর্তমান এক নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র পলাশ তালুকদারের বিয়ে হয়। তাদের ঘরে দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। বিয়ের পর থেকেই পলাশ তালুকদারের বিভিন্ন সময় শ্বশুরবাড়ি থেকে টাকা আনতেন। এ পর্যন্ত শ্বশুরের কাছ থেকে ধার হিসেবে ১৮ লাখ টাকা নিয়েছেন পলাশ। কিন্তু এক টাকাও পরিশোধ করেনি।
নতুন করে আবার স্ত্রীর কাছে ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন তিনি। বাবার কাছ থেকে টাকা এনে দিতে না পারলে তাকে মেরে ফেলার হুমকিও দেন পলাশ। এ নিয়ে প্রায়ই স্ত্রীকে মারধর করতেন তিনি। এমনকি স্ত্রী রেশমাকে বেশ কয়েকবার ঘর থেকে বের করে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।
সম্প্রতি রেশমা স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পারেন তার স্বামীর অন্য এক নারীর সঙ্গে পরকীয়ার সম্পর্ক রয়েছে। এজন্যই তাকে প্রায়ই নির্যাতন করতেন পলাশ। এসব ঘটনা নিয়ে ঈদের কিছু দিন আগে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এ সময় পলাশ স্ত্রীকে ১০ লাখ টাকা নিয়ে আসতে বলেন। অন্যথায় বাবার বাড়ি চলে যেতে বলেন। মারধর করে সন্তানদের রেখে রেশমাকে ঘর থেকে বের করে দেন পলাশ। উপায়ান্তর না পেয়ে রেশমা নারায়ণগঞ্জে বাবার বাড়িতে চলে যান।
সন্তানদের মায়ায় ঈদের একদিন আগে পলাশের বাড়িতে আসেন রেমশা। রাতে তাকে পরিকল্পিতভাবে বেধড়ক মারধর করেন পলাশ ও তার ভাই সোহাগ। পরে স্থানীয়রা রেশমাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করলে চিকিৎসকরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।
বর্তমানে রেশমা শেবাচিম হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি) ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন। খবর পেয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে রেশমার বাবা, মা ও ভাই বরিশাল আসেন। তারাই রেশমার চিকিৎসা করাচ্ছেন।
রেশমা অভিযোগ করেন, পরকীয়ার কথা জানার পর তার স্বামী পলাশ তালুকদার ও দেবর সোহাগ তালুকদার প্রায়ই আমাকে নির্যাতন করতেন। বিভিন্ন সময় বাবার বাড়ি থেকে ১৮ লাখ টাকা যৌতুক এনে দিয়েছি। এতেও তাদের মন ভরেনি। এখন ১০ লাখ টাকা যৌতুক এনে দিতে বলেছে। টাকা না দিলে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় তারা। আমাকে মেরে গুম করার চেষ্টা করেছিল। প্রতিবেশীরা আমার চিৎকার শুনে প্রাণে রক্ষা করেছে। আমার সন্তানদের ফিরে পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
রেশমার বাবা মো. আলী আশাব বলেন, আমার মেয়েকে মারধর করার কারণ হলো তাকে তালাক দিয়ে পলাশ দ্বিতীয় বিয়ে করার চেষ্টা করছে। তাই রেশমার ওপর নির্যাতন করে সন্তানদের রেখে দেয়। আমরা এ ঘটনার বিচার দাবি করছি।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত নলছিটি পৌরসভার প্যানেল মেয়র পলাশ তালুকদার বলেন, পারিবারিকভাবে আমার স্ত্রীর সঙ্গে বিরোধ চলছে। কয়েক বছর আগে আমার স্ত্রীর অত্যাচারে আমার বাবা স্ট্রোক করে মৃত্যুবরণ করেন। আমার মা তাদের বাড়িতে বেড়াতে গেলে তাকেও অপমান করে বের করে দেন আমার স্ত্রী রেশমা। এনিয়েই আমাদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। আমি কোনো যৌতুকের জন্য আমার স্ত্রীকে নির্যাতন করিনি এবং তাকে মারধরও করিনি। আমার প্রতিপক্ষরা ষড়যন্ত্র করে আমার স্ত্রীর সঙ্গে মিলে আমার ক্ষতিসাধন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) দায়িত্বরত পুলিশের এসআই আব্দুল জলিল বলেন, আমি পলাশ তালুকদারকে ফোন করেছিলাম বিষয়টি নিষ্পত্তি করার জন্য, কিন্তু পলাশ আমাকে জানিয়ে দিয়েছেন তার স্ত্রীকে তালাক দেওয়া হয়েছে। এখন আর তিনি রেশমার সঙ্গে সংসার করবেন না।
এ ব্যাপারে নলছিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতাউর রহমান বলেন, অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আতিকুর রহমান/এফএ/এএসএম