টেলিস্কোপ তৈরি করে সাড়া ফেলেছেন ভোলার জাহিদ
শৈশব থেকেই মহাকাশ বিষয়ে জানার তীব্র আকর্ষণ। স্বপ্ন ছিল একটি টেলিস্কোপ কিনে মহাকাশ পর্যবেক্ষণ করবেন। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে মহাকাশ বিষয়ে কিছু ধারণাও নেন। কিন্তু টেলিস্কোপের দাম তার সাধ্যের বাইরে হওয়ায় কিনতে পারেননি। পরে নিজেই টেলিস্কোপ তৈরির উদ্যোগ নেন।
অবশেষে সেই স্বপ্ন সত্যি হয়েছে। মাত্র চার মাস গবেষণা করে টেলিস্কোপ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। শুধু তৈরি করেই থেমে থাকেননি, অনলাইনে অর্ডার নিয়ে টেলিস্কোপ বিক্রিও করছেন ভোলা পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মুসলিমপাড়ার বাসিন্দা নাজমুল আহসান জাহিদ নামের এক যুবক।
জাহিদ ওই এলাকার সেনাবাহিনীর সাবেক ওয়ারেন্ট কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূরন্নবীর ছেলে। তিনি ২০০১ সালে এসএসসি, ২০০৩ সালে এইচএসসি এবং নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে বি ফার্মা ও ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক থেকে এম ফার্মা সম্পন্ন করেন। পরে ২০১১ সালে একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি শুরু করেন।

জাহিদুল ইসলাম জাহিদ জাগো নিউজকে জানান, তিনি ছোটবেলা থেকেই মহাকাশ সম্পর্কে আগ্রহী ছিলেন। টেলিস্কোপ তৈরি করার ইচ্ছে জাগে ২০১৬ সালের দিকে। তখন তিনি একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করতেন। কিন্তু চাকরি করার কারণে টেলিস্কোপ তৈরিরর সময় হয়নি তার। পরে ২০২০ সালের দিকে করোনাকালীন লকডাউনে টেলিস্কোপ তৈরির স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করেন।
তবে লকডাউনের কারণে টেলিস্কোপ তৈরির সরঞ্জাম সংগ্রহ করতে পারেননি। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে টেলিস্কোপ তৈরিতে পুরোদমে লেগে পড়েন। মাত্র চার মাসের চেষ্টায় সফলভাবে তৈরি করেন একটি টেলিস্কোপ। এরপর বাণিজ্যিকভাবে বিক্রির জন্য আরও পাঁচটি অ্যাস্ট্রোনমি গ্রেডের নিউনিয়ান টাইপ ডবসোনিয়ান বেস টেলিস্কোপ তৈরি করেন।
জাহিদ তার টেলিস্কোপের নাম দিয়েছেন ‘ইন্টারস্টেলার’ (interstellar)। টেলিস্কোপগুলো বিক্রির ২০ দিন আগে interstellar bd নামে ফেসবুকে একটি পেজ খুলে বিজ্ঞাপন দেন। এরপর মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই পাঁটটি টেলিস্কোপ বিক্রি হয়। বর্তমানে সারাদেশের বিভিন্ন জেলা ও ঢাকার বিভিন্ন ব্যবসায়ীর টেলিস্কোপের অর্ডান নিচ্ছেন জাহিদ। শিগগির আরও বেশি পরিমাণ টেলিস্কোপ তৈরি করতে পারবেন বলে দাবি করেন তিনি।

জাহিদের তৈরি টেলিস্কোপ অ্যাপারচার (ব্যাসার্ধ) ১৫০ মিলিমিটার (৬ ইঞ্চি) এবং ফোকাল লেনথ ৫৪৬-৭৫০ মিলিমিটার। বর্তমানে এমন হাই কোয়ালিটির বিদেশি টেলিস্কোপ দেশের বাজারে ৬০-৭০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। কিন্তু জাহিদ বিজ্ঞানচর্চাকে সর্বস্তরে ছড়িয়ে দিতে তার তৈরি টেলিস্কোপ বিক্রি করছেন মাত্র ৩০-৩৫ হাজার টাকায়।
নাজমুল আহসান জাহিদের তৈরি করা টেলিস্কোপের কথা আশপাশে ছড়িয়ে পড়েছে। তার টেলিস্কোপ দিয়ে চন্দ্রগ্রহণ, নক্ষত্র দেখতে তার বাড়িতে প্রতিদিনই ভিড় জমাচ্ছেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।

জাহিদের তৈরি টেলিস্কোপ দেখতে আসা মো. রাহাদ খান ও জাবায়েদ ইসলাম নাহিদ জানান, তারা শুনেছেন মুসলিম পাড়ার নাজমুল আহসান জাহিদ নামের এক যুবক একটি টেলিস্কোপ তৈরি করেছেন। সেটি শুনে তারা দেখার জন্য ছুটে এসেছেন। এই টেলিস্কোপের মাধ্যমে তারা জীবনে প্রথমবারের মতো মহাকাশের চাঁদ, গ্রহ ও নক্ষত্র দেখেছেন।
মুসলিমপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী মনির হোসেন তুহিন জাগো নিউজকে বলেন, তিনি শুনেছেন জাহিদ বাসা বসে কিছু একটা তৈরি করছেন। কিন্তু আসলে কী তৈরি করছেন সেটা তিনি তখন বুঝতে পারেননি। পরে পুরো টেলিস্কোপ তৈরি শেষ হলে তিনি এটি দিয়ে খুব কাছ থেকেই মহাকাশ দেখতে পেরেছেন।

মনির হোসেন বলেন, ‘জাহিদের টেলিস্কোপ সারাদেশে সারা জাগিয়েছে। সে আমাদের ভোলা জেলার গর্ব।’
মো. আক্তার হোসেন নামের একজন জানান, তিনি জাহিদের তৈরি টেলিস্কোপ দিয়ে চাঁদ দেখতে পেরেছেন। চাঁদের গর্তও দেখা গেছে।
এ বিষয়ে ভোলা সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, বিষয়টি তার জানা ছিল না। তিনি খোঁজখবর নেবেন। সরকারিভাবে কোনো সুযোগ থাকলে জাহিদকে সহযোগিতার আশ্বাসও দেন তিনি।
এসআর/এএসএম