ভাঙ্গা-যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক চার লেনের কাজ শুরু হবে কবে
ভাঙ্গা-যশোর-বেনাপোল ১৩০ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার জন্য ১১ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। তবে অর্থায়নের অভাবে থেমে আছে প্রকল্পের কাজ। কবে নাগাদ কাজ শুরু হবে সে বিষয়ে কিছু জানাতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। তবে ভারত সরকারের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা চলছে বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভারত সরকার এ প্রকল্পে ১০০ মিলিয়ন ডলার দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আমরা চেয়েছি এক হাজার মিলিয়ন। অর্থের বিষয়টি নিশ্চিত হলে দ্রুত এ কাজ শুরু হবে।’
স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালুর পর রাজধানী থেকে বেনাপোল স্থলবন্দর হয়ে সড়ক পথে কলকাতা যাওয়ার পথ অনেকটা সহজ হয়েছে। তবে ভাঙ্গা-যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত না হওয়ায় খুলনা ঘুরে ৮৬ কিলোমিটার পথ বেশি পাড়ি দিয়ে রাজধানী থেকে বেনাপোল বন্দর হয়ে কলকাতা যেতে হচ্ছে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষকে। এতে সময় ও অর্থ দুটিই ব্যয় হচ্ছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করা হলে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বেনাপোল স্থলবন্দরের দূরত্ব কমবে ৮৬ কিলোমিটার।

সওজ সূত্রে জানা যায়, ভাঙ্গা-যশোর-বেনাপোল জাতীয় মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করতে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ভূমির মৌজাভিত্তিক দর, অধিগ্রহণ ব্যয় ও অবকাঠামো, গাছপালা ইত্যাদির ক্ষতিপূরণ ব্যয় প্রাক্কলন পাঠানো প্রসঙ্গে চার জেলার প্রশাসককে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সওজের সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক রিয়াজ আহমদ জাবের সই করা এ-সংক্রান্ত চিঠি ২০২০ সালের ১ অক্টোবর ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, নড়াইল ও যশোর জেলা প্রশাসককে দেওয়া হয়েছে।
নড়াইল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কর্মকর্তা জেলা কানুনগো সিরাজুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, ভাঙ্গা-যশোর-বেনাপোল জাতীয় মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীতকরণের জন্য নড়াইল অংশে ৩২টি মৌজায় ২৭৪ একর জমির সম্ভাব্য ব্যয় প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করে ২০২০ সালের ২০ ডিসেম্বর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। পরে ২০২১ সালের ১৮ নভেম্বর সড়ক ভবন থেকে অনাপত্তিপত্র চেয়ে চিঠি আসে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে। চিঠি আসার সাতদিন পর ওই মাসের ২৭ তারিখে অনাপত্তিপত্র দেওয়া হয়েছে। পরে এ বিষয়ে আর কোনো অগ্রগতি নেই।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে বেনাপোল পর্যন্ত ১৩০ কিলোমিটার ভাঙ্গা-যশোর-বেনাপোল জাতীয় মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীতকরণে মোট ১১ হাজার কোটি টাকার ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) প্রণয়নের কাজ শেষ হয়েছে। মহাসড়কের নকশার কাজ শেষ অনেক আগেই শেষ হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি ফ্লাইওভার এবং নড়াইল ও যশোর অংশে দুটি বাইপাস রয়েছে।

সওজ ও পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বেনাপোল-ঢাকার দূরত্ব ৮৬ কিলোমিটার কমবে। তখন রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বেনাপোল স্থলবন্দরের দূরত্ব হবে ২০০ কিলোমিটার এবং ভারতের কলকাতার দূরত্ব হবে মাত্র ২৮৪ কিলোমিটার। সড়কটি ব্যবহার করতে পারলে পরিবহনযোগে রাজধানী থেকে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছানো যাবে বেনাপোলে। বেনাপোল আর কলকাতা যেতে সময় লাগবে ৪-৫ ঘণ্টা। একইভাবে ঢাকার সঙ্গে যশোরের শিল্প ও বাণিজ্যিক শহর নওয়াপাড়া এবং মোংলা বন্দর, সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্য জেলার দূরত্বও কমে যাবে।
ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে বেনাপোলের দূরত্ব (ভায়া নড়াইল) মাত্র ২০০ কিলোমিটার। যার মধ্যে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে নড়াইল হয়ে বেনাপোল স্থলবন্দর পর্যন্ত সড়কটির দৈর্ঘ্য ১৩০ কিলোমিটার। ব্যস্ততম এ সড়কের প্রশস্ত মাত্র ১৮-২৪ ফুট। এ সড়ক দিয়ে ঢাকা বিভাগের ফরিদপুরের একাংশ, গোপালগঞ্জ এবং খুলনা বিভাগের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ মোট ১১ জেলার যানবাহন চলাচল করে।
পরিবহন চালক টিপু সুলতান জাগো নিউজকে বলেন, ‘বেনাপোল থেকে খুলনা হয়ে ঢাকার দূরত্ব ২৮৬ কিলোমিটার। ভাঙ্গা-যশোর-বেনাপোল জাতীয় মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীতি করলে তখন এ সড়ক দিয়ে বেনাপোল থেকে ঢাকার দূরত্ব হবে মাত্র ২০০ কিলোমিটার। সড়কটি ব্যবহার করতে পারলে ৮৬ কিলোমিটার পথ কমে যাবে।’

আরেক চালক মো. আলিম বলেন, ভাঙ্গা থেকে বেনাপোল পর্যন্ত পুরোনো এ সড়কটি মাত্র ১৮-২৪ ফুট প্রশস্ত। এ সড়কে ঝুঁকিপূর্ণ কয়েকটি ১০-১৪ ফুট প্রশস্ত সেতু রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এসব সেতু দিয়ে পাঁচ টনের বেশি ওজনের যানবাহন চলাচল সরকারিভাবেই নিষেধ। এত পুরোনো ও কম প্রশস্ত সড়কে দুর্ঘটনার আশঙ্কায় তারা সড়কটি ব্যবহার না করে খুলনা ঘুরে বেনাপোল থেকে ঢাকা যাতায়াত করেন।
এ বিষয়ে সওজ নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর ভাঙ্গা-যশোর-বেনাপোল জাতীয় মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীতকরণ জরুরি হয়ে পড়েছে। প্রকল্পের কাজ চলমান। বিষয়টি সরকার অনেক গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকেই ভাঙ্গা-যশোর-বেনাপোল সড়কে গাড়ির চাপ অনেক বেড়ে গেছে। চার লেনের কাজটি শেষ হলে বেনাপোলের গাড়িগুলোকে আর খুলনা ঘুরে যেতে হবে না। বেনাপোলের সঙ্গে ঢাকার দূরত্ব অনেক কমে যাবে। তখন পদ্মা সেতুর পুরোপুরি সুফল পাবেন এলাকাবাসী।
হাফিজুল নিলু/এসআর/এএসএম