হেলেদুলে চলছে লোহালিয়া সেতুর নির্মাণকাজ

আব্দুস সালাম আরিফ আব্দুস সালাম আরিফ , জেলা প্রতিনিধি, পটুয়াখালী
প্রকাশিত: ০৭:২২ পিএম, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২২

পটুয়াখালী জেলা সদরের সঙ্গে চার উপজেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনে ২০১২ সালে শুরু হয় লোহালিয়া নদীর ওপর সেতু নির্মাণকাজ। চলতি বছরের জুনে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। নদীর মাঝখানে স্টিল কাঠামো তৈরিতে নৌযান চলাচল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে এই জটিলতা তৈরি হয়। ফলে ৫৭৬.২৫ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৭.৩২ মিটার প্রস্তের এই সেতুর নির্মাণকাজ নিয়ে আবারও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১২ সালে ৪৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে লোহালিয়া নদীর ওপর একটি গার্ডার সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি)। ওই সময়ে সেতুর হরিজেন্টাল ক্লিয়ারেন্স ছিল ৩৫ মিটার এবং ভার্টিকাল ক্লিয়ারেন্স ৭.৩ মিটার। সেতুর ৫৪ শতাংশ কাজ চলমান থাকা অবস্থায় ২০১৪ সালে পায়রা সমুদ্রবন্দর কর্তৃপক্ষ সেতু নির্মাণকাজে আপত্তি জানায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ১ অক্টোবর আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে সেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর নির্মাণকাজের আর অগ্রগতি হয়নি।

দীর্ঘ কয়েক বছর কাজ বন্ধ থাকার পর পুনরায় সেতুটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ। ২০১৯ সালের আগস্টে সেতুর হরিজেন্টাল ক্লিয়ারেন্স ৭০ মিটার এবং ভার্টিকাল ক্লিয়ারেন্স ১৩.৫০ মিটার রেখে নতুন একটি প্রকল্পের মাধ্যমে অসমাপ্ত কাজ শুরু করা হয়, যা ২০২০ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসসহ বৈশ্বিক বিভিন্ন কারণে কয়েক দফা সেতুটির নির্মাণকাজের মেয়াদ ও খরচ বাড়ানো হয়। আর এ বছরের জুনে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি।

হেলেদুলে চলছে লোহালিয়া সেতুর নির্মাণকাজ

লোহালিয়া সেতুর দুই পাশের কংক্রিটের কাঠামো ও অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণকাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নবারুন ট্রেডার্স এবং মেসার্স আবুল কালাম আজাদের (জেভি) প্রতিনিধি হাফিজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘সর্বশেষ সময় অনুযায়ী আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করেছি। তবে এখন কিছু ছোটখাটো কাজ রয়েছে। আশা করছি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তা শেষ হবে। তবে সেতুর মাঝখানে স্প্যান বসানো নিয়ে জটিলতা রয়েছে। সেটি অন্য একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাস্তবায়ন করবে।’

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুটি ধাপে লোহালিয়া সেতুর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হচ্ছে। সেতুর দুই পাশে কংক্রিটের কাঠামো থাকলেও নদীর মাঝখানে একটি স্টিলের কাঠামো থাকবে। ১০৭ মিটার দৈর্ঘ্যের স্টিল কাঠামোটি চীনের একটি প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছে। তবে স্টিলের কাঠামো স্থাপনের জন্য পটুয়াখালী-গলাচিপা নৌপথটি সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ রাখা প্রয়োজন। এ বিষয়ে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মধ্যে জটিলতা তৈরি হওয়ায় গত কয়েক মাাস এটির নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে।

হেলেদুলে চলছে লোহালিয়া সেতুর নির্মাণকাজ

এদিকে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে সেতুটির নির্মাণকাজ নিয়ে একের পর এক জটিলতা তৈরি হওয়ায় ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা। সেতুর অভাবে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষকে খেয়া নৌকায় পার হয়ে জেলা শহরে আসা-যাওয়া করতে হয়।

সেতুর দক্ষিণ পাড়ের বাসিন্দা অ্যাডভোকেট সৈয়দ সোহেল জাগো নিউজকে বলেন, ‘সেতুটি হলে এই অঞ্চলের মানুষ সহজেই তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য, মাছ, গবাদিপশুসহ অন্যান্য সামগ্রী জেলা শহরের বাজারে কিংবা ঢাকার বাজারে নিয়ে যেতে পারতেন। শুধু তাই নয়, এলাকার কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। ঝড়বৃষ্টির দিনে ভোগান্তি নিয়ে নৌকায় পারাপার করতে হয়। আমরা চাই যত দ্রুত সম্ভব সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হোক।’

জানতে চাইলে পটুয়াখালী স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জি এম শাহাবুদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরে আবারও নির্মাণকাজ শুরু করতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। ওই সময় লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে।’

এসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।