সাবমেরিন ক্যাবলে ত্রুটি: এখনও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ভোলার দুই চর

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ভোলা
প্রকাশিত: ০৯:৫৪ পিএম, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২

ভোলার মেঘনা নদীতে সাবমেরিন ক্যাবলে ত্রুটির আড়াই মাসেও মেরামত না হওয়ায় এখনও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন দৌলতখান উপজেলার মদনপুর ইউনিয়ন ও সদরের কাচিয়া ইউনিয়নের মাঝের চরের বাসিন্দারা। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। দ্রুত সমস্যা সমাধানের জন্য সরকার ও বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে জোর অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, মুজিববর্ষে শতভাগ বিদ্যুৎতায়ন প্রকল্পের আওতায় প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার সাবমেরিন ক্যাবল লাইন টেনে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হয় ভোলার দৌলতখান উপজেলার মদনপুর ইউনিয়ন ও সদরের কাচিয়া ইউনিয়নের মাঝের চরে। ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাস থেকেই বিদ্যুতের সুবিধা ভোগ করতে থাকেন চরের বাসিন্দারা। এতে বদলে যায় চরবাসীর জীবনযাত্রাও।

কিন্তু মাত্র ৭ মাসের মধ্যেই চলতি বছরের ২৩ জুন সাবমেরিন ক্যাবলের ত্রুটি দেখা দেয়। এতে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে ওই দুই চরের বাসিন্দারা। কিন্তু ক্যাবলের ত্রুটির আড়াই মাসেও সমাধান হয়নি বিদ্যুতের সমস্যার।

দৌলতখান উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. ইউনুছ ও মো. ফিরোজ বলেন, আমাদের চরে বিদ্যুৎ আসার পর চর পুরো টাউনের (শহর) মতো হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘ দিন চরে বিদ্যুৎ না থাকায় চর এখন আবারও আগের মতো হয়ে গেছে।

jagonews24

তারা আরো জানান, চরে রোদের কারণে প্রচণ্ড গরম। তেমন গাছ পালা না থাকায় আমরা বিপাকে রয়েছি।

একই এলাকার বাসিন্দা মো. আকবর হোসেন ও মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, আমাদের ইউনিয়নে বিদ্যুৎ আসার পর টাকা খরচ করে আমরা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়েছি। ফ্যান, লাইট ও ফ্রিজ কিনেছি। কিন্তু এখন আড়াই মাস ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় আমাদের ঘরের ফ্যান, লাইট ও ফ্রিজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এগুলো যদি পুরো নষ্ট হয়ে যায় তাহলে আমরাতো অনেক ক্ষতির মধ্যে পড়বো। আমাদের ক্ষতিতো কেউ পূরণ করবে না।

সদর উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের মাঝের চরের বাসিন্দা মো. আব্দুল হান্নান মিয়া ও আসমা বেগম বলেন, বিদ্যুৎ আসার পর আমাদের সন্তানরা বিদ্যুতের আলোয় অনেক রাত পর্যন্ত পড়াশুনা করতো। এছাড়াও ফ্যানের বাতাসে বিকেল ও রাতে ঘুমাতো। কিন্তু এখন বিদ্যুৎ সমস্যার কারণে সন্তানরা কূপির আলোতে পড়াশুনা করতে চায় না। এমনকি প্রচণ্ড গরমের কারণে ঘরে ঘুমাতেও পারে না।

স্কুল শিক্ষার্থী জান্নাত বেগম ও সুরমা বেগম জানায়, সামনে আমাদের পরীক্ষা। সন্ধ্যার পর আমরা কূপি জ্বালিয়ে পড়তে বসলে আমাদের মাথাব্যথা করে। বেশি সময় পড়তে পারি না। বিদ্যুৎ না থাকার কারণে আমাদের পড়াশুনার অনেক ক্ষতি হচ্ছে।

jagonews24

ব্যবসায়ী মো. আজিজ ও হারুন জানান, বিদ্যুৎ আসার পর আমাদের ব্যবসা বাণিজ্য জমজমাট হয়ে উঠেছিল। অনেক রাত পর্যন্ত আমরা দোকান-পাট খোলা রেখে বেচা-বিক্রি করেছি। কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকার কারণে আমরা ব্যবসায়ীরা অনেক ক্ষতির মধ্যে পড়েছি। আমাদের দোকানের ফ্রিজ ও টিভি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমরা সরকার ও বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে জোর অনুরোধ করছি দ্রুত আমাদের এই সমস্যা সমাধান করার জন্য।

ভোলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মো. আলতাপ হোসেন জানান, ভোলা সদর উপজেলার তুলাতুলি এলাকার মেঘনা নদীতে অতিরিক্ত জাহাজ নোঙর করে রাখার জন্য সাবমেরিন ক্যাবলে ত্রুটি দেখা দেয়। ক্যাবল মেরামতের জন্য তিনটি ডুবুরি দল নামলেও নদী উত্তাল ও গভীরতার জন্য তারা ব্যর্থ হয়েছে।

তিনি আরো জানান, ঢাকা থেকে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কয়েকজন কর্মকতা এসে পরিদর্শন করেছেন। তাদের সিদ্ধান্ত মতে আমরা পরবর্তীতে কাজ শুরু করবো। আশা করি দ্রুত এই সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।

ভোলার দৌলতখান উপজেলার মদনপুর ইউনিয়ন ও সদর উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের মাঝের চরে সাত মাসে প্রায় ৮ শতাধিক বিদ্যুৎ গ্রাহক রয়েছে।

জুয়েল সাহা বিকাশ/এমআরআর/এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।