জাজিরায় আবারও পদ্মায় ভাঙন

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি শরীয়তপুর
প্রকাশিত: ১০:৩৪ এএম, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২

নদীঘেঁষা কাথুরিয়া গ্রাম। গ্রামের কৃষক মুজিবর হাওলাদারের (৭০) চার একর জমি ছিল। সেই জমি চাষ করে তিনি সংসার চালিয়েছেন। কিন্তু বছর বছর নদী ভাঙনে তার সব জমি ও বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

কৃষক মুজিবর হাওলাদারের বাড়ি শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার পালেরচর ইউনিয়নের কাথুরিয়া গ্রামে। তার ছয় মেয়ে, এক ছেলে। পাঁচ মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন তিনি। নদীভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে চোখের জল ছাড়া তার আর কিছুই নেই।

আলাপকালে মুজিবর হাওলাদার বলেন, ‘আমার চাইর একর জমি ছিল। একযুগ ধইরা নদী ভাঙনে আমার সব শেষ হইয়া গেছে। বাপ-দাদার বসতভিটা ভাইঙা যাওয়ার পরে আমি কাজিরহাট গেছিলাম সেইখানে আমারে একজন আশ্রয় দিছিল। পরে তারা আর থাকতে দেয় নাই। আবার গেছি পাশের গ্রাম হামিদ মাদবরের চরে। ওই চরও ভাইঙা গেছে, থাকার কোনো কায়দা নাই। পরে একজনে জায়গা দিছে তাই আইছি কাথুরিয়া। এইখানে দশটাকা দরশিকি দিয়া ঘর উঠাইয়া থাকতাম। আবার এহন একহপ্তা (সপ্তাহ) ধইরা এইহানেও নদী ভাইঙা যাইতাছে। তাই ঘরদোয়ার ভাঙতাছি। স্ত্রী সন্তান নিয়ে যে কোথায় যাই কইতে পারি না।’

ভাঙন কবলিত এলাকা ঘুরে জানা যায়, হঠাৎ পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জাজিরা উপজেলার পালেরচর ইউনিয়নের কাথুরিয়া গ্রামের প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভাঙন শুরু হয়েছে। দিন অথবা রাতে হঠাৎ করেই থেমে থেমে ভাঙছে পদ্মার পাড়। গত এক সপ্তাহে কাথুরিয়া গ্রামে অন্তত ২০টি ঘর অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। পদ্মা নদীর গর্ভে চলে গেছে কয়েক একর ফসলি জমি, গাছপালা ও অন্যান্য স্থাপনা। নিজেদের সব হারিয়ে অন্যের ভিটে ভাড়া নিয়ে থাকছে অনেক পরিবার।

জাজিরায় আবারও পদ্মায় ভাঙন

যেভাবে ভাঙতে শুরু করেছে দ্রুত ভাঙন রোধে ব্যবস্থা না নিলে আবারও স্থানান্তর হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে ওই গ্রামটির ২০০ পরিবারের। তাই খাওয়া-দাওয়া না করে ঘর সরাতে ব্যস্ত ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষ। সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে এলাকার বিদ্যুতের খুঁটি। কিন্তু ভাঙন রোধে এখনও কোনো কাজ শুরু করেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড।

পালেরচর ইউনিয়ন পরিষদ সচিব মোহাম্মদ লিটন বলেন, আবার কাথুরিয়া এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। জাজিরা উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ পরবারের প্রত্যেককে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত থাকবে।

শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম আহসান হাবীব বলেন, বর্তমানে পদ্মা নদীতে পানি বাড়ায় জাজিরা উপজেলার পালেরচর ও বড়কান্দি ইউনিয়ন পদ্মা তীরবর্তী অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন রোধ করতে চেষ্টা করছি।

ছগির হোসেন/এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।