মামুনুল হকের বিরুদ্ধে যে সাক্ষ্য দিলেন দুই পুলিশ সদস্য

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৮:৪৮ পিএম, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২

আদালতে দেওয়া পুলিশের সাক্ষ্যের বরাত দিয়ে হেফাজতে ইসলামের সাবেক নেতা মামুনুল হকের আইনজীবী একেএম ওমর ফারুক নয়ন বলেছেন, সোনারগাঁয়ে মামুনুল হককে গ্রেফতার করার মতো কোনো কারণ ছিল না। তাই তাকে গ্রেফতার করা হয়নি।

রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানায় করা ধর্ষণ মামলায় ষষ্ঠ দফায় হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব মামুনুল হকের বিরুদ্ধে দুই পুলিশ কর্মকর্তার সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। সাক্ষ্যদাতারা হলেন সোনারগাঁ থানার পুলিশ পরিদর্শক তবিদুর রহমান ও সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) রাকিবুল ইসলাম উজ্জল।

দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মুন্সি মশিয়ার রহমানের আদালতে তাদের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত আগামী ৩ অক্টোবর পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন।

সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত থেকে বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন আইনজীবী ওমর ফারুক নয়ন।

তিনি বলেন, ‘মামুনুল হককে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ও তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে দ্বিতীয় স্ত্রী ঝর্ণাকে দিয়ে এই মামলা সাজানো হয়েছে। মিথ্যা মামলায় জেল কাটানো হচ্ছে। সাক্ষীদের জবানবন্দিতে একজনের সঙ্গে আরেকজনের কোনো মিল খুঁজে পাচ্ছি না আমরা।’

আসামিপক্ষের এ আইনজীবী আরও বলেন, ‘আজ মামুনুল হকের বিরুদ্ধে দুজন পুলিশ সাক্ষ্য দিয়েছেন। এই দুইজনকে আমরা জেরা করেছি। এই জেরায় আমরা অনেক কিছুই এলোমেলো কথা পেয়েছি। আমরা মনে করি এই মামলা একটি সাজানো মামলা। দেশবাসী মনে করে এটা একটি মিথ্যা মামলা। সাক্ষীদের মাধ্যমে আরও প্রমাণিত হলাম।’

‘আজ প্রথম সাক্ষী পুলিশ পরিদর্শক তবিদুর রহমান বলেছেন, সেখানে (সোনারগাঁ রিসোর্ট) মামুনুল হককে গ্রেফতার করার মতো কোনো কারণ ছিল না। সেজন্য আমরা গ্রেফতার করিনি। দ্বিতীয় সাক্ষী এএসআই রাকিবুল হাসান উজ্জল বলেছেন, (সেখানে) ছাত্রলীগ-যুবলীগ প্রবেশ করেছিল। প্রথম সাক্ষী তবিদুর রহমানও বলেছেন, সেখানে সরকারদলীয় নেতাকর্মী প্রবেশ করেছিল’, যোগ করেন আইনজীবী ওমর ফারুক নয়ন।

অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক বলেন, ‘মামুনুল হক মুসলিম শরিয়াহ মোতাবেক জান্নাত আরা ঝর্ণাকে বিয়ে করেছেন। তিনি তার দ্বিতীয় স্ত্রী। আমরা এটা প্রমাণ করবো। প্রথম দিন এই মামলার বাদী সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। আদালতে তিনি সাক্ষ্য দেওয়ার সময় দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলেন না। তিনি স্বাভাবিক ছিলেন না। বোঝা যাচ্ছিল প্রভাবিত করে সাক্ষ্য দেওয়া হয়েছে। আজ পর্যন্ত বাদী কোথায় আছে কার জিম্মায় আছে কেউ জানে না। এখানে তৃতীয় পক্ষের হাত আছে। তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে সাক্ষী হচ্ছে।’

তবে আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) রকিব উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আজ মামুনুল হকের বিরুদ্ধে দুজন পুলিশ সাক্ষ্য দিয়েছেন। তারা বলেছেন, তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে মামুনুল হককে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি এলোপাতাড়ি উত্তর দেন। সেইঙ্গে ঝর্ণাকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন আমাকে আসামি মামুনুল হক বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে রিসোর্টে আনছেন এবং ধর্ষণ করেছেন।’

এরআগে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্য দিয়ে কাশিমপুর কারাগার থেকে নারায়ণগঞ্জের আদালতে আনা হয় মামুনুল হককে। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে তাকে আবার কাশিমপুর কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

এই মামলায় এখন পর্যন্ত ১৪ জনের সাক্ষ্য নেওয়া। মামলার অভিযোগপত্রে সাক্ষী হিসেবে রয়েছেন ৪০ জন।

আদালত সূত্র জানায়, গত ১৭ জুলাই মামুনুল হকের বিরুদ্ধে পঞ্চম দফায় সাক্ষ্য দিয়েছিলেন ১১ নম্বর সাক্ষী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সোহাগ রনি ও ১২ নম্বর সাক্ষী রতন মিয়া। গত ৯ মে চতুর্থ দফায় সাক্ষ্য দেন ৯ ও ১০ নম্বর সাক্ষী যথাক্রমে নাজমুল হাসান শান্ত ও মো. শফিকুল ইসলাম। গত ২৫ জানুয়ারি তৃতীয় দফায় সাক্ষ্য দিয়েছিলেন সোনারগাঁ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু, রিসোর্টের আনসার গার্ড ইসমাঈল ও রিসিপশন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান।

তারআগে গত ১৩ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দফায় মামুনুলের বিরুদ্ধে রয়েল রিসোর্টের সুপারভাইজার আব্দুল আজিজ, রিসিপশন কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম অনিক ও আনসার গার্ড রতন বড়াল সাক্ষ্য দিয়েছিলেন।

২০২১ সালের ২৪ নভেম্বর প্রথম দফায় মামুনুল হকের উপস্থিতিতে কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণা সাক্ষ্য নেন আদালতে। একই সঙ্গে ওই বছরের ৩ নভেম্বর মামুনুল হকের বিরুদ্ধে করা ধর্ষণ মামলায় বিচারকাজ শুরুর আদেশ দেওয়া হয়।

২০২১ সালের ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রয়েল রিসোর্টে এক নারীর সঙ্গে অবস্থান করছিলেন মামুনুল হক। ওই সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এসে তাকে ঘেরাও করেন। পরে স্থানীয় হেফাজতের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা এসে রিসোর্টে ব্যাপক ভাঙচুর করেন এবং তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যান।

ঘটনার পর থেকেই মামুনুল হক মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসায় অবস্থান করে আসছিলেন। এ সময় পুলিশ তাকে নজরদারির মধ্যে রাখে। এরপর গত ১৮ এপ্রিল মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসা থেকে গ্রেফতার করা হয় মামুনুলকে।

পরে এই ঘটনায় ৩০ এপ্রিল সোনারগাঁ থানায় মামুনুল হকের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ মামলা করেন ওই নারী। তবে ওই নারীকে তার দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করে আসছেন মামুনুল হক।

মোবাশ্বির শ্রাবণ/এসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।