দেশের নাম উজ্জ্বল করলো বিরামপুরের মোস্তাকিম

উপজেলা প্রতিনিধি উপজেলা প্রতিনিধি হিলি দিনাজপুর
প্রকাশিত: ০৭:২৭ এএম, ০৮ অক্টোবর ২০২২
ছবি: সংগৃহীত

প্রবাদে আছে ‌‘গোবরেও পদ্মফুল ফোটে’। আর সঠিক মানুষের সাহচার্য ও অনুপ্রেরণা পেলে পাড়া-গাঁয়ের ওই অখ্যাত শিশুটিও একদিন বিখ্যাত হতে পারে। ঠিক সেই গল্পেরই উপাখ্যান রচনা করে ফেলেছে দিনাজপুর জেলার বিরামপুর উপজেলার পৌর শহরের পুর্বপাড়ার ছেলে মোস্তাকিম হোসেন।

মোস্তাকিম সাউথ এশিয়া রিজিওনাল জুনিয়র ইন্টারন্যাশনাল ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট- ২০২২ (অনুর্ধ্ব-১৫) গৌহাটি, আসাম, ইন্ডিয়াতে ডাবলসে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ১০টি দেশের প্রতিযোগীরা এ খেলায় অংশ নিয়েছিল। মোস্তাকিমরা শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও
ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে গত শনিবার ১ অক্টোবর চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। খেলায় তার সহযোগী গালিব।

ব্যাডমিন্টন তার প্রাণের স্পন্দন। কিন্তু সমস্যা হলো সাংসারিক টানা-পোড়েন। গরিব ঘরে জন্ম হলেও ব্যাডমিন্টন খেলায় দারুণ পারদর্শী সে। স্বপ্ন ছিল একজন নামকরা ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় হবে। কিন্তু নড়বড়ে সাংসারিক অবস্থা তার সেই স্বপ্নের পথে কাঁটার দেয়াল হয়ে দাঁড়ায়।

মোস্তাকিমের বাবা পেশায় রিকশাচালক, মা সংসারের কাজ সামলানোর পাশাপাশি বাইরে টুকটাক কাজ করে সামান্য টাকা আয় করে। সংসারে অভাব অনটন লেগে থাকলেও সুযোগ পেলেই ব্যাডমিন্টন খেলতে ছুটে যেতো মোস্তাকিম বিরামপুর ব্যাডমিন্টন একাডেমির মাঠে। সেখানে সিনিয়র খেলোয়াড়দের সঙ্গে মোস্তাকিম অনুশীলন করতো।

jagonews24

এভাবেই একদিন খেলতে গিয়ে বিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পরিমল কুমার সরকারের নজরে পড়ে। আর ছেলেটির প্রতিভার আগুন আঁচ করতে পারেন অত্যন্ত নিরহংকার ও মানবিক ইউএনও খ্যাত উপজেলা নির্বাহী অফিসার পরিমল কুমার
সরকার। তিনি মোস্তাকিমকে এগিয়ে যাওয়ার রাস্তা দেখান। সেই সঙ্গে আর্থিক সহযোগিতাসহ মাথার ওপর অনুপ্রেরণার ছায়া হয়ে দাঁড়ান তিনি। আর এই অনুপ্রেরণার শক্তিতেই স্বপ্ন জয়ের যুদ্ধে অগ্রগামী পথিক হয়ে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে মোস্তাকিম।

এদিকে মোস্তাকিমের এই এগিয়ে যাওয়া এবং অনন্য প্রাপ্তিতে দারুণ উচ্ছ্বসিত ইউএনও পরিমল কুমার সরকার। মোস্তাকিম শুধু দেশের নামই নয়, বিরামপুরের নামও উজ্জ্বল করেছে। তাই এই খুশির খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইউএনও পরিমল কুমার সরকার মোস্তাকিমকে বিরামপুর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিনন্দন এবং শুভেচ্ছা জানিয়ে তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি আনন্দঘন পোস্ট শেয়ার করেছেন। সেই সঙ্গে মোস্তাকিম যেন আরও অনেকদূর এগিয়ে যায় সেই প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেছেন।

মোস্তাকিমকে সবধরনের সহযোগিতা ও ঢাকায় অনুশীলনের অনুপ্রেরণা দিয়েছে বিরামপুর ব্যাডমিন্টন অ্যাকাডেমির সদস্য সভাপতি সাহিনুর আলম শানু ও সাধারণ সম্পাদক রোকনুজামান দুলালসহ সদস্যরা।

মোস্তাকিমের বাবা মুন্নার হাতে ইউএনও পরিমল কুমার সরকার ১০ হাজার টাকা সহায়তা করে বলেন, চ্যাম্পিয়ন হওয়ার খবর শুনে আমি খুশি হয়েছি। ইউএনও হিসেবে অনেক মানুষের মাঝেই সরকারি সহায়তা দিয়েছি, কিন্তু ওই আমার চাকরি জীবনের অন্যতম সেরা অর্জন হিসেবেই মনে করছি। মোস্তাকিমের মতো ছেলেরা সামান্য সুযোগ পেলেই নিজের দেশের লাল-সবুজ পতাকা বিদেশের মাটিতে সাফল্যের সঙ্গে উড়াতে পারে।

মো. মাহাবুর রহমান/এমআরএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।