কালার বার্ড মুরগি পালনে ঝুঁকছেন খামারিরা, লাভও বেশি

শেখ মহসীন
শেখ মহসীন শেখ মহসীন ঈশ্বরদী, পাবনা
প্রকাশিত: ০৫:৪৩ পিএম, ১৪ অক্টোবর ২০২২

পাবনার ঈশ্বরদীতে কালার বার্ড মুরগি পালন ও ডিম থেকে বাচ্চা উৎপাদন করে বেশ লাভবান হয়েছেন বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক প্রাপ্ত খামারি আকমল হোসেন। তিনি অন্য খামারিদেরও নতুন এ জাতের মুরগি পালনে উদ্বুদ্ধ করছেন। তার পরামর্শে ঈশ্বরদী ও পাবনা জেলার অনেক খামারি কালার বার্ড পালন শুরু করছেন। উৎপাদন খরচ তুলনামূলক কম ও লাভের পরিমাণ অনেক বেশি হওয়ায় খামারিরাও ঝুঁকছেন।

খামারিরা জানান, কালার বার্ড দেখতে হুবহু দেশি মুরগির মতো। বাহারি রঙের পালকের জন্য এ মুরগি দেখতে খুব সুন্দর। এ মুরগির মাংসও বেশ সুস্বাদু। যারা ব্রয়লারের মাংস খেতে অনাগ্রহী তাদের অনেকেই এখন কালার বার্ড মাংস পছন্দ করছেন। এ মুরগির মাংস দেশি মুরগির মাংসের মতো অতটা শক্ত নয়। আবার ব্রয়লারের মতো নরম নয়। সোনালি মুরগি ৭০ দিনে এক কেজি ওজন হয়। সেখানে কালার বার্ড মাত্র মাত্র ৪০ দিনেই এক কেজি হয়। এছাড়াও বাজারে মুরগির চাহিদা অন্য যে কোনো জাতের মুরগির চেয়ে বেশি।

তারা আরও জানান, বাণিজ্যিকভাবে কালার বার্ড পালন করতে অন্যান্য মুরগির তুলনায় পুঁজি কম লাগে। এ মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি ও মৃত্যুহার অনেক কম। কালার বার্ডের বাজারের চাহিদা বেশ ভালো। খামার থেকে মুরগি ব্যবসায়ীদের কাছে কেজিপ্রতি ২৪০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

রোকনপুর গ্রামের পোলট্রি খামারি শাহ-আলম জাগো নিউজকে বলেন, ব্রয়লার ও সোনালি মুরগি পালনের চেয়ে কালার বার্ড পালনে বেশি লাভবান হওয়া যায়। আমার খামারে এখন চার হাজার কালার বার্ড মুরগি রয়েছে। এক বছরে কালার বার্ড থেকে যে লাভ পেয়েছি তা অন্য মুরগি পালনে সম্ভব না।

এ মুরগির মাংসের চাহিদাও বেশ ভালো। এ জাতের মুরগি পালনের জন্য খামারি আকমল হোসেন আমাকে সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়েছিলেন। তার পরামর্শে আমার মতো অনেকেই কালার বার্ড পালন করে লাভবান হয়েছেন।

উপজেলার বড়ইচরা গ্রামের বিশ্বাস পোলট্রির স্বত্বাধিকারী আবু রায়হান বিশ্বাস বলেন, অন্য মুরগির তুলনায় এখন কালার বার্ড পালনে মোটামুটি লাভ ভালো হয়। এ মুরগির বাজার দর ভালো। রোগ কম হওয়ায় লোকসানের আশঙ্কাও কম। শুধু বাচ্চার দাম অন্য মুরগির তুলনায় বেশি। খামারিরা ব্রয়লার আর সোনালি পালন করে যখন লোকসান দিচ্ছে তখন কালার বার্ড কিছুটা হলেও লাভের সম্ভাবনা জাগিয়েছে।

সরেজমিনে উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়নের কামালপুর গ্রামে আকমল হোসেনের খামারে গিয়ে দেখা যায়, তার খামারে লেয়ার, সোনালি ও কালার বার্ডসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ২২ হাজার মুরগি রয়েছে। এর মধ্যে কালার বার্ড রয়েছে তিন হাজার।

নতুন জাতের এ মুরগি নিয়ে আকমল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ২০০৮ সালে মুরগির খামার শুরু করি। তখন এক পিস ডিম উৎপাদন খরচ হতো চার টাকা, বিক্রি হয়েছে পাঁচ থেকে ছয় টাকা। ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজিতে খরচ হতো ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা, আর বিক্রি হতো ৮০ থেকে ৯০ টাকা। খামার ব্যবসায়ীদের তখন স্বর্ণালী সময় ছিল। গত কয়েক বছর ধরে এ ব্যবসায় ধস নেমেছে।

তিনি বলেন, অনেক খামারি পুঁজি হারিয়ে খামার বন্ধ করে দিয়েছেন। এ উপজেলায় প্রায় ১৫০ থেকে ২০০টি খামার বন্ধ হয়ে গেছে। খামারা ঋণগ্রস্ত হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। কালার বার্ড পালনের মাধ্যমে আবারও খামারিরা লাভবান হতে পারে। সেজন্য এ জাতের মুরগি পালনে অন্য খামারিদের উদ্বুদ্ধ করার প্রতি খুব গুরুত্ব দিয়েছি।

আকমল হোসেন আরও বলেন, খামারের পাশাপাশি মুরগি বাচ্চা উৎপাদনের জন্য ছোট্ট পরিসরে একটি হ্যাচারি স্থাপন করেছি। যেখান থেকে প্রতি মাসে এক লাখ মুরগির বাচ্চা উৎপাদন করা যায়। এ হ্যাচারিতে সোনালি মুরগির বাচ্চা উৎপাদনের পাশাপাশি কালার বার্ড মুরগির বাচ্চা উৎপাদন করা হচ্ছে। পাবনা জেলায় শুধু এ হ্যাচারিতে কালার বার্ডের বাচ্চা উৎপাদন করা হয়। এ জাতের মুরগির বাচ্চা ৪৫ থেকে ৫০ টাকা পিস বিক্রি করা হচ্ছে। যেসব খামারিরা কালার বার্ড মুরগি পালন শুরু করেছেন তারা প্রত্যেকেই লাভবান হচ্ছেন। একই সঙ্গে দেশের মাংসের চাহিদা মেটাতে কালার বার্ড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নাজমুল হোসেন জাগো নিউজকে জানান, কালার বার্ড মুরগি এ অঞ্চলের আগে খামারিরা পালন করতেন না। এখন কিছু খামারি পালন শুরু করেছে। প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে খামারিদের সবধরনের পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করা হয়।

শেখ মহসীন/আরএডি/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।