মায়ের সাথে সম্পর্কের জেরে জাহাজের ক্যাপ্টেনকে দশ টুকরা


প্রকাশিত: ১২:২৬ পিএম, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

লাইটারেজ জাহাজের ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ মহসিনকে যে হত্যা করা হয়েছে সে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর ওই হত্যাকাণ্ডের কারণ সম্পর্কেও জানতে পেরেছে পুলিশ। প্রায় একমাস ধরে নিখোঁজ ছিলেন মহসিন।  

মহসিনের সঙ্গে যে নারীর পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক ছিল তারই ছেলে আরিফুল (১৯) মহসিনকে হত্যার পর করাত দিয়ে কেটে তার মরদেহ দশ টুকরা করেন। শুক্রবার বিকেলে গ্রেপ্তার হওয়ার পর পুলিশকে এসব জানিয়েছেন আরিফ নিজে।     

আরিফুল জানিয়েছেন, মায়ের পরকীয়ায় ক্ষুদ্ধ হয়ে জাহাজের ক্যাপ্টেনকে দশ টুকরা করে মরদেহ নদীতে ফেলে দেন তিনি।

আরিফুলকে শুক্রবার বিকেলে নগরীর সিমেন্ট ক্রসিং এলাকা থেকে ইপিজেড থানা পুলিশ আটক করে।   
এরপর পুলিশের কাছে খুনের বিস্তারিত বর্ননা দেন আরিফ। শনিবার দুপুরে তাকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসে পুলিশ।

সংবাদ সম্মেলনে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) দেবদাস ভট্টাচার্য। ইপিজেড থানার ওসি আবুল কালাম আজাদও উপস্থিত ছিলেন ওই সময়।
 
আরিফ জানান, পেশায় তিনি এবং তার মা নাজমা বেগম দুজনই পোশাক শ্রমিক। ১২ বছর আগে মারা যান আরিফের বাবা। ঢাকার বাসিন্দা মহসিন এমভি সাগরকন্যা নামে একটি লাইটারেজ জাহাজের ক্যাপ্টেন ছিলেন। জাহাজটি তেল পরিবহন করতো। জাহাজটি চট্টগ্রামে নোঙ্গর করলে মহসিন ইপিজেড এলাকায় পোশাককর্মী নাজমা বেগমের বাসায় থাকতেন। ৫-৬ বছর ধরে নাজমা বেগমের সঙ্গে মহসিনের সম্পর্ক চলছিল।

আটকের পর আরিফ পুলিশকে জানিয়েছেন, মহসিনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে তার শরীর দশ টুকরা করে নদীতে ফেলে দেয়া হয়েছে।

আরিফুলের ভাষ্য অনুযায়ী, ১৫ জানুয়ারি দুপুরে মহসিন তাদের বাসায় যান। এ সময় নাজমা বেগম আরিফুলকে কাজের কথা বলে বাইরে পাঠান। বাইরে থেকে এসে মাকে মহসিনের সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে তাকে খুনের পরিকল্পনা আঁটতে শুরু করেন আরিফুল।   

ওইদিন বিকেলেই তার মা কারখানায় চলে গেলে ঘুমন্ত মহসিনের বুকের ওপর বসে বালিশচাপা দিয়ে তাকে হত্যা করেন আরিফুল। এরপর মরদেহ খাটের নিচে দুইদিন রেখে দেন। দুইদিন পর একটি করাত কিনে এনে তার মায়ের অবর্তমানে মরদেহ দশ টুকরা করে আলাদা আলাদা করে বাজারের ব্যাগে ভরে রাখেন। ১৭ জানুয়ারি রাতের আঁধারে মহসিনের মরদেহ ব্যাগে ভর্তি করে চার ভাগে ফেলা হয়। এর মধ্যে মাথা থেকে গলা পর্যন্ত দুই ভাগ করে কর্ণফুলী নদীতে এবং সিমেন্ট ক্রসিং এলাকায় একটি বড় নালায় ফেলে দেয়া হয়। বুক থেকে নাভি পর্যন্ত ফেলা হয় হালিশহর থানার আনন্দবাজার এলাকায় নদীর পাড়ে। হাত-পা ফেলে দেয়া হয় একই এলাকায় আরেকটা বড় নালায়।

১৮ জানুয়ারি হালিশহর থানা পুলিশ আনন্দবাজার এলাকা থেকে বুক থেকে নাভি পর্যন্ত উদ্ধার করে। এ ঘটনায় হালিশহর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।

গত ২১ জানুয়ারি মহসিনের ভাই ও স্ত্রী ঢাকা থেকে এসে ইপিজেড থানায় একটি অপহরণ মামলা করেন এবং নাজমা নামে একজনের সঙ্গে তার অবৈধ সম্পর্ক থাকার বিষয়ে পুলিশকে তথ্য দেন। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ নাজমা বেগমকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। নাজমা বেগম বর্তমানে জেলে আছেন।

ইপিজেড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, মাকে গ্রেফতারের পর আরিফুল থানায় এসেছিল। তাকে একেবারে স্বাভাবিক লাগছিল। পরে তিনি পালিয়ে ঝালকাঠি চলে যান। এতে আমাদের সন্দেহ হয়। আমরা বিভিন্ন কৌশলে তাকে নগরীতে এনে আটক করেছি।

আরিফুল মাদকাসক্ত বলে জানিয়েছেন ওসি। এছাড়া নাজমা বেগমও হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে বিস্তারিত জানেন বলে ধারণা পুলিশের।

জীবন মুছা/এনএফ/এবিএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।