কুড়িয়ে পাওয়া ৫০ হাজার টাকা ফেরত দিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন বৃদ্ধা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি গাইবান্ধা
প্রকাশিত: ০৪:০৬ পিএম, ০৩ নভেম্বর ২০২২

গাইবান্ধায় সড়কে কুড়িয়ে পাওয়া ৫০ হাজার টাকা ফেরত দিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন নুরনেছা বেগম (৬৫) নামের এক বৃদ্ধা। মঙ্গলবার (১ নভেম্বর) বিকেলে ওই টাকা প্রকৃত মালিকের হাতে তুলে দেন তিনি।

পাঁচ সন্তানের জননী বৃদ্ধা নুরনেছা বেগম গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার চিনিরপটল গ্রামের কৃষক আব্দুল হামিদ মিয়ার স্ত্রী। হারানো টাকার মালিক বাহার আলী একই গ্রামের মৃত অলোক বেপারির ছেলে।

jagonews24

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার চিনিরপটল গ্রামের বাহার আলীর স্ত্রী আছমা বেগম গত ১৫ অক্টোবর দুপুরে গ্রামীণ ব্যাংক সাঘাটা শাখা থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণের টাকা তোলেন। সেই টাকা নিয়ে হেঁটে সাঘাটা চৌরাস্তা এলাকায় আসেন। সেখান থেকে পরিবারের জন্য ৫০০ টাকার বাজারও করেন তিনি। অবশিষ্ট ৪৯ হাজার ৫০০ টাকা একটি শপিং ব্যাগে করে নিয়ে ভ্যানযোগে বাড়িতে আসার সময় ব্যাগটি হারিয়ে ফেলেন আছমা বেগম।

ওইদিন হেঁটে বাড়িতে আসার সময় টাকার ব্যাগটি সড়কে কুড়িয়ে পান বৃদ্ধা নুরনেছা। টাকা পেয়ে বৃদ্ধা তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। পরে মঙ্গলবার বিকেলে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে নুরনেছা বেগম ও তার স্বামী আব্দুল হামিদ মিয়া প্রকৃত মালিক বাহার আলীর হাতে টাকা তুলে দেন।

jagonews24

নুরনেছার মেয়ে মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘টাকা কুড়িয়ে পেয়ে মা আমাকে ফোন করে জানান। পরে তিনি বলেন টাকা ফেরত দেবেন। আমরা আর না করি নাই।’

কুড়িয়ে পাওয়া অর্ধলাখ টাকা ফেরত দিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন বৃদ্ধা নুরনেছ। অনেক উৎসুক জনতা তাকে দেখতে বাড়িতে ভিড় করছেন।

মশিউর রহমান নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, ‘কুড়িয়ে পাওয়া টাকা ফেরত দেওয়া তো দূরের কথা, এখনকার যুগে মানুষ গাছের লাউ ছিড়ে নিয়ে যায়। বেগুন তুলে নিয়ে যায়।’

এ যুগে এমন ঘটনা নজিরবিহীন উল্লেখ করে পবনতাইর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আনিছুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, এ ঘটনা সমাজের জন্য শিক্ষনীয়।

jagonews24

এ বিষয়ে নুরনেছা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ‘এই ট্যাকা নিয়ে খরচ করি খাইলে পরকালে হিসেব দেওয়া নাগবে। কী দরকার, আল্লাহ্ মোক এমনিতে দিবে। ট্যাকার ব্যাগ পাইয়া কাককো কম নাই (কাউকে বলিনি)। পরে ব্যাগের মধ্যে দ্যাখোম কিস্তির বইয়ে বাহার আর আছমার ফটোক (ছবি)। পরে স্বামীর সাথে কথা কছোম, বেটির সাথে কথা কইয়্যা ফেরত দিছোম। ট্যাকা ফেরত দিয়্যা এখন অনেক হালকা নাগবের নাগছে মোর (এখন অনেক হালকা লাগছে)।’

হারানো টাকা ফিরে পেয়ে বাহার আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘টাকাগুলো হারিয়ে আমরা হতাশায় পড়ে গিয়েছিলাম। এমনিতেই আমরা গরিব মানুষ। কৃষিকাজ করে খাই। তার ওপর টাকাগুলো গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া। কীভাবে শোধ করবো এই চিন্তায় ছিলাম। টাকাগুলো পেয়ে অনেক উপকার হয়েছে। আমি বৃদ্ধা নুরনেছার প্রতি কৃতজ্ঞ।’

এসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।