শুধু পাথর আমদানিতেই সীমাবদ্ধ নাকুগাঁও স্থলবন্দর

ইমরান হাসান রাব্বী ইমরান হাসান রাব্বী , শেরপুর প্রতিনিধি শেরপুর
প্রকাশিত: ০৫:২০ পিএম, ১৫ নভেম্বর ২০২২

পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হলেও মাত্র একটি পণ্য আমদানিতেই সীমাবদ্ধ শেরপুরের নাকুগাঁও স্থলবন্দর। ১৮টি অনুমোদিত পণ্য আমদানির কথা থাকলেও শুধু পাথর আমদানি কার্যক্রম চলছে এই বন্দরে। এতে মুখ থুবড়ে পড়েছে বন্দরের কার্যক্রম। আগ্রহ হারাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বেকার হয়ে পড়ছেন শ্রমিকরা।

তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, ভুটান-ভারত-বাংলাদেশ ত্রিদেশীয় বাণিজ্য সমঝোতা চুক্তি হলে আবারও ঘুরে দাঁড়াবে নাকুগাঁও স্থলবন্দর।

jagonews24

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ৩৩ বছর বন্ধ থাকার পর ১৯৯৭ সালে দেশের উত্তর সীমান্তবর্তী শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার নাকুগাঁও ইমিগ্রেশন চেকপোস্টসহ বন্দরটি প্রথমে স্থল শুল্কবন্দর হিসেবে চালু হয়। কয়লা আমদানির মধ্যদিয়ে এই বন্দর বেশ চাঙা হয়ে ওঠে। সৃষ্টি হয় কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান। কিন্তু ২০০২ সালে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ বন্দর দিয়ে কয়লা ও পাথর ছাড়া সব পণ্য আমদানি বন্ধ হয়ে যায়।

২০০৯ সালের ১২ ডিসেম্বর তৎকালীন নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান বন্দরটি পরিদর্শন করে এটিকে পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হিসেবে চালুর ঘোষণা দেন। এরপর ২০১১ সালের ৩১ ডিসেম্বর তিনি নাকুগাঁও এলাকায় পূর্ণাঙ্গ বন্দরের অবকাঠামোর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর প্রায় সাড়ে ১৩ একর জমির ওপর ১৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে এর অবকাঠামো নির্মাণ হয়।

সম্ভাবনাময় এ বন্দরটিকে ২০১৫ সালে পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হিসেবে ঘোষণা করা হয়। প্রায় সাড়ে ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা হয় ওয়্যারহাউজ, কাস্টমস ভবনসহ অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন কাজ। যোগাযোগ সহজ করতে আড়াইশ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ২৯ কিলোমিটার পাকা সড়ক। আমদানির অনুমতি দেওয়া হয় পাথর ও কয়লাসহ প্রচলিত ও অপ্রচলিত ১৮টি পণ্যের। তবে দীর্ঘ আট বছরে বন্দরের শুধুমাত্র অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দরের সুবিধা পাচ্ছেন না এখানকার আমদানিকারকরা। শুধু পাথর আমদানি আর মানুষ পারাপারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে এ বন্দরের কার্যক্রম।

jagonews24

বন্দরের শ্রমিকদের অভিযোগ, বন্দর দিয়ে একসময় পাথর আর কয়লা এলেও কয়লা আমদানি বন্ধ দীর্ঘদিন ধরে। নানা অজুহাতে প্রায়ই বন্ধ থাকে পাথর আমদানিও। এতে বন্দরের প্রায় চার হাজার শ্রমিকের বেকার ও কর্মহীন থাকতে হয় বছরের বেশিরভাগ সময়। এতে চরম দুর্ভোগ ও কষ্টে দিন কাটছে শ্রমিকদের।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, যেসব পণ্য আমদানি করা সহজ হবে, সেসব পণ্য আমদানি করার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। এ বন্দরের ওপারেই মেঘালয় রাজ্য থাকায় সেখান থেকে শুঁটকি মাছ, খৈল, সুপারি ও পশুখাদ্য আমদানি করা সহজ এবং লাভজনক হবে। এ বিষয়ে এনবিআরের কাছে বারবার আবেদন করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।

নাকুগাঁও স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল জাগো নিউজকে বলেন, সরকারের রাজস্ব বাড়াতে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতার বিকল্প নেই। ১৮টি পণ্যের আমদানির কথা থাকলেও আমরা তা পারছি না। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হলেও ভারতের মেঘালয় ও পাশের আরেক দেশ ভুটান থেকে অনেক পণ্যই যেমন গম, সুপারি, হলুদ, শুঁটকি ইত্যাদি আমদানি করা যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে নাকুগাঁও স্থলবন্দর কর্মকর্তা পার্থ ঘোষ বলেন, পণ্য আমদানি বাড়ানোর জন্য স্থানীয় ব্যবসায়ীরা আমাদের প্রতিনিয়ত তাগিদ দিচ্ছেন। রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে ব্যবসায়ী নেতাদের কথাবার্তা চলছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা ও অনুমতি পেলে বন্দরটি আরও গতিশীল হবে। আমরাও আমাদের সক্ষমতা দেখাতে পারবো।

রাজস্ব বোর্ড ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, ২০২১-২২ অর্থবছরে এ বন্দরে সরকারের রাজস্ব ও বন্দর কর্তৃপক্ষের সেবা মাশুল মিলে মোট আয় হয়েছে প্রায় সাড়ে ১০ কোটি টাকা। বন্দরের কার্যক্রম আরও বেগবান করতে সাম্প্রতিক সময়ে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বন্দরটি পরিদর্শন করেছেন।

jagonews24

বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জাগো নিউজকে মো. আলমগীর বলেন, ‘স্থলবন্দর দিয়ে কী কী পণ্য আমদানি-রপ্তানি হবে তা এনবিআর নির্ধারণ করে থাকে। স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ শুধু ফ্যাসিলিটিগুলো ডেভেলপ করে দেয়। এনবিআর তাদের পর্যবেক্ষণ ও চাহিদার ওপর ভিত্তি করে পণ্য আমদানির বিষয়টি নির্ধারণ করে থাকে। আমরা এনবিআরকে ব্যবসায়ীদের বিষয়টি জানাবো। তারা এ বিষয়ে উদ্যোগ নেবেন।’

তবে পণ্য আমদানি জটিলতা সমাধানে দ্রুতই উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ।

তিনি বলেন, এখানকার অবকাঠামো ও যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই ভালো। শুল্ক এবং ফি মিলে এখানে প্রায় ১০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। এটি আমাদের জন্য বেশ ইতিবাচক। এখানকার স্থানীয় ব্যবসায়ীদের আমদানির বিষয়টি নিয়ে আমরা এনবিআরের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলবো।

এসআর/এসএইচএস/জিকেএস

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।