নানা সমস্যায় জর্জরিত বাগেরহাট বিসিক শিল্পনগরী

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি বাগেরহাট
প্রকাশিত: ০৪:৩৫ পিএম, ১৭ নভেম্বর ২০২২

নানা সমস্যায় জর্জরিত বাগেরহাটের একমাত্র বিসিক শিল্পনগরী। পানির সংকট, জলাবদ্ধতা, খানাখন্দে ভরা রাস্তা, অপর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ নানামুখী সংকটের মধ্যে চলছে বাগেরহাট বিসিক শিল্প নগরীর প্রতিষ্ঠানগুলো। এ অবস্থায় চরম হতাশার মধ্যে রয়েছেন বিসিক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ীরা। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে অবকাঠামোগত উন্নয়নের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। এ সমস্যা চলমান থাকলে অনেক ব্যবসায়ীই বিসিকে শিল্পপ্রতিষ্ঠান করার আগ্রহ হারাবেন।

বাগেরহাট বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) ১৯৯৬ সালে শহরের ভৈরব নদের পাশে প্রায় ২১ একর জমির ওপর গড়ে তোলা হয়। এই শিল্পনগরীতে ১২৩টি প্লট রয়েছে। যার প্রতিটিই বরাদ্দ নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া নিরবচ্ছিন্ন সেবার জন্য রয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ উপ-বিদ্যুৎকেন্দ্র।

jagonews24

বাগেরহাট বিসিক শিল্প নগরীতে ৫২টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। কিন্তু ভঙ্গুর অবকাঠামো ও প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার অভাবে চালু রয়েছে মাত্র ৪০টি। এর মধ্যে ইজিবাইক সেটিংস, নারিকেল তেল, অটোরাইস ও ফ্লোয়ার, সরিষা, ডাল মিল, পুরোনো প্লাস্টিক প্রক্রিয়াজাতকরণ, কোকোনাট ফাইবার মিলস অন্যতম। শিল্প নগরীর এ সব প্রতিষ্ঠানে হাজারও শ্রমিক কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করেন।

এ দিকে বিসিক শিল্প নগরীতে পানির সংকট, জলাবদ্ধতা, রাস্তাঘাট ও ড্রেনেজ সমস্যা দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধানের দাবি জানান মালিক, শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ এ শিল্পের সাথে জড়িত সংশ্লিষ্টরা। তাদের দাবি, দ্রুত সময়ের মধ্যে এর সমাধান না হলে অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে।

jagonews24

বিসিকের একটি কারখানায় কর্মরত অলোক কুমার বসু বলেন, বিসিকে ট্রাক, অটোরিকশা, নসিমন, ভ্যানসহ প্রতিনিয়ত ভারী যান চলাচল করে। কিন্তু এখানে রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। এত খারাপ যে হেঁটেও চলা যায় না। কয়েক দিন আগেও আমার কারখানার এক ভ্যান চিনি ভাঙা রাস্তার মধ্যে পড়ে যায়।

এ বিষয়ে বাদল দাস নামে এক নসিমনচালক বলেন, আমি পাঁচ বছর ধরে বিসিকের বিভিন্ন কারখানার পণ্য আনা নেওয়া করি। কিন্তু এখনো রাস্তা ঠিক হয়নি। অনেক ঝুঁকির মধ্যে দিয়ে মালামাল আনা-নেওয়া করতে হয়। মাঝে মধ্যে মালামাল নিয়ে রাস্তার মধ্যেও পড়েছি।

জয়ন্ত নামে এক রিকশাচালক বলেন, আমার যাত্রীদের বেশিরভাগই বিসিকের শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারী। কিন্তু বিসিকের ভেতরে তো ঢোকার উপায় নেই। রাস্তা এত ভাঙা যে ঢুকলেই রিকশা উল্টে যায়।

jagonews24

রহমত শিকদার ও অচিন্ত দাস নামে দুই শ্রমিক বলেন, বিসিকে উৎপাদিত পণ্য বিভিন্ন এলাকায় যায়। এখান থেকে সরকার রাজস্ব পায়। তাই অবহেলা না করে বাগেরহাটের একমাত্র বিসিক শিল্পনগরী বাঁচিয়ে রাখার আহ্বান জানান তারা।

স্বর্ণালী অয়েল মিলের মালিক শংকর সাহা বলেন, বিসিকে পানির সংকট চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। শ্রমিকরা অনেক কষ্ট করেও পানির অভাবে ঠিকভাবে হাত-মুখ ধোয়াসহ প্রস্রাব, পায়খানা করেও ঠিকভাবে পানি ব্যবহার করতে পারে না।

তিনি বলেন, বিসিকের মাঝের রাস্তাটা সংস্কারের অভাবে একবারে চলাচলের অনুপযোগী অবস্থা। রাস্তাটি তৈরির পর একবারের জন্যও সংস্কার করা হয়নি। তিনি দ্রুত সময়ের মধ্যে পানি সংকটসহ রাস্তাঘাট ঠিক করার দাবি জানান।

jagonews24

সাহা এন্টারপ্রাইজের অন্যতম অংশীদার অশোক কুমার সাহা বলেন, পণ্য সরবরাহ ও কাঁচামাল সংগ্রহের জন্য প্রতিনিয়ত ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু রাস্তা খারাপ হওয়ায় ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় অনেকের ব্যবসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

ভাই ভাই ডাল মিলের মালিক কমল দাস বলেন, বিসিকের মধ্যে প্রত্যেকটি রাস্তার অবস্থা খারাপ। ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে নিজেদের খরচে মিলের সামনে একাধিকবার ইট, বালু ও খোয়া দিয়েছি। রাস্তা ঠিক থাকলে ব্যয় বৃদ্ধিসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় পড়তে হচ্ছে।

বাগেরহাট বিসিক শিল্পনগরী মালিক সমিতির সভাপতি শিব প্রসাদ ঘোষ বলেন, বিসিকের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য জেলা প্রশাসকসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে গিয়েছি। এতগুলো শিল্পপ্রতিষ্ঠান থাকার পরেও এখানে ভালো ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই, রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থা, পানি সংকট। এত সমস্যা নিয়ে শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। শুনেছি, এখানে লাখ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু সেই টাকায় কি হয়, কি কাজ করে- তা আমরা জানতেও পারি না।

jagonews24

এ বিষয়ে বিসিক শিল্প নগরীর প্রমোশন কর্মকর্তা ইউনুস আর রাফি বলেন, বিসিকের পাশে শক্ত বাঁধ না থাকায় জোয়ারের পানি ঢুকে জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি হয়। ফলে রাস্তা টেকসই একটু কম হয়। তবে বিসিকের মধ্যে দুটি রাস্তার টেন্ডার হয়েছে। আশাকরি দ্রুত সময়ের মধ্যে সংস্কারকাজ শুরু হবে।

বাগেরহাট বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপক মো. শরিফ সরদার বলেন, বিসিকে বাজেট স্বল্পতার কারণে কাজ একটু ধীরগতিতে হয়েছে। কিন্তু অনেক কাজই বাকি রয়েছে। এরই মধ্যে পেছনের একটি রাস্তা সংস্কার করা হয়েছে। সামনের রাস্তা সংস্কারের কাজও দ্রুত শুরু হবে। কিছু রাস্তা সংস্কারের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। পানির সমস্যাও দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান হবে বলে তিনি জানান।

এসএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।