পাকশীতে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আওয়ামী লীগের দুপক্ষের গোলাগুলি
পাবনার ঈশ্বরদীতে বালু ব্যবসার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছ। সংঘর্ষে চারজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
শনিবার (৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টার দিকে পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন, যুবলীগ কর্মী মাসুম (৩৫), সম্রাট (৩৫), মিরাজ (৩০) ও সুইট (৩২)।
আহতদের মধ্যে পৌর শহরের হাসান আলীর ছেলে মাসুম ও আমবাগান এলাকার সানোয়ার হোসেনের ছেলে সম্রাটকে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। আহত অপর দুইজনকে স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পাকশী ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিন্টু সঙ্গে বালুর ব্যবসা নিয়ে পাকশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাদের মতবিরোধ চলছিল। চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিন্টুর বিআইডব্লিওটিএর কাছ থেকে কেনা বালুর আধিপত্য নিয়ে বিরোধের সূত্রপাত হয়। বালু উত্তোলনের পর সাইফ্জ্জুামান পিন্টু প্রায় তিন মাস হার্ডিঞ্জ ব্রিজের কাছে বালু স্তূপ করে রেখেছেন। এ বালুর আধিপত্য নিয়ে পিন্টু এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক জহুরুল ইসলাম মালিথার মধ্যে পুনরায় দ্বন্দ্ব শুরু হয়।
শনিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এসময় গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। এ ঘটনায় লাঠি, পাথর ও ইটের আঘাতে চারজন আহত হন। আহতরা হলেন, জহুরুল ইসলাম গ্রুপের সম্রাট, সুইট, মিরাজ এবং চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান গ্রুপের যুবলীগ কর্মী মাসুম।
পাকশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিন্টু বলেন, পদ্মা নদী ড্রেজিং করে উত্তোলিত বালু আমি বিআইডব্লিওটিএর কাছ থেকে টেন্ডারে কিনেছি। স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল এ বালু পরিবহন ও বিক্রিতে বাধা দেয়। এজন্য তিন মাস বালু বিক্রি বন্ধ আছে। পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে শনিবার থেকে বালু বিক্রি শুরুর কথা ছিল। এরইমধ্যে অপরপক্ষ আমাদের ওপর হামলা চালায়।
এদিকে, জহুরুল ইসলাম মালিথা বলেন, বিআইডব্লিওটিএর কাছ থেকে কেনা বালু সাইফুজ্জামান পিন্টু অনেক আগেই বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন যে বালু আছে সেগুলো পাকশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাদের। সেগুলো দখল করে বিক্রি করার জন্য পিন্টু সেখানে লোকজন জমায়েত করেন। আমাদের ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও হার্ডিঞ্জ ব্রিজের পাশে খাওয়া ধাওয়ার আয়োজন করেছিল। সেখানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ রশিদুল্লাহ, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হবিবুল ইসলাম হব্বুল, সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম বাবু মণ্ডলসহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
পাকশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হবিবুল ইসলাম হব্বুল বলেন, বিষয়টি সুরাহা করতে আমিসহ পাকশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতারা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। আমরা চলে আসার পর শুনতে পাই দুইপক্ষের মারামারি হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে পাকশী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শহীদুল ইসলাম বলেন, সংঘর্ষের সময় হার্ডিঞ্জ ব্রিজের কাছে পুলিশের একটি টিম ছিল। পুলিশ দ্রুত সংঘর্ষ থামিয়ে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষের সময় গুলির শব্দ শোনা যায় এবং একটি জিপ গাড়ি, পাঁচটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। সংঘর্ষের সময় লাঠি ও ইটের আঘাতে চারজন আহত হয়।
ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) শফিকুল ইসলাম শামীম বলেন, আহত মাসুম ও সম্রাটকে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। তাদের শরীরে লাঠি ও ইটের আঘাতে চিহ্ন রয়েছে।
এ বিষয়ে ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অরবিন্দ সরকার বলেন, বালু ব্যবসার আধিপত্য নিয়ে চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিন্টুর সঙ্গে পাকশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাদের বিরোধ ছিল। সবার সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সুরাহা হয়। তারপরেও কেন মারামারির ঘটনা ঘটলো তা বুঝতে পারলাম না।
শেখ মহসীন/এমআরআর/জেআইএম