ফরিদপুরে অযত্নে-অবহেলায় তারেক মাসুদের বাড়ি
অডিও শুনুন
ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার নুরপুরে ১৯৫৬ সালের ৬ ডিসেম্বর জন্ম গ্রহণ করেন খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ। তার পুরো নাম আবু তারেক মাসুদ। ২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার জোকা এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান এ চলচ্চিত্রকার।
২০১১ সালে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের দাবির মুখে ও সরকারের আশ্বাসে তারেক মাসুদের ফরিদপুরের ভাঙ্গার নূরপুরের গ্রামের বাড়িসহ প্রায় দেড় একর জমি সরকারের ট্রাস্টে দেওয়া হয়। তবে এতদিনেও স্থানটিতে হয়নি কোনো স্থাপনা। অনেকটা অযত্নে-অবহেলা ও অনাদরে পড়ে আছে তারেক মাসুদের বাড়িটি। এতে হতাশ তারেক মাসুদের পরিবার, দর্শনার্থী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
তারেক মাসুদ একাধারে ছিলেন চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার, লেখক এবং গীতিকার। ২০০২ সালে মাটির ময়না তার প্রথম ফিচার চলচ্চিত্র। ২০০২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে ডিরেক্টরস ফোর্টনাইটসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাড়িটির আঙিনা জুড়ে বুনো ঘাসপাতা জন্মেছে। দর্শনার্থীদের বসার বেঞ্চ কিংবা রেস্ট হাউজ কিছুই নেই। দর্শনার্থীরা বাড়িটি দেখতে এসে রীতিমতো হতাশ হন। একটি পাবলিক টয়লেট পর্যন্ত নেই। তারেক মাসুদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র ও বিভিন্ন সময়ে তার হাতের তোলা ছবিগুলোও দিনে দিনে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
তারেক মাসুদের ভাইয়ের স্ত্রী সম্পা মাসুদ জাগো নিউজকে বলেন, তারেক মাসুদ নিহতের পর সরকারের আশ্বাসে ট্রাস্টে দেওয়া হয় পুরো বাড়িটি। কিন্তু প্রায় এক যুগ পেরিয়ে গেলেও দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন বা কোনো অগ্রগতি নেই।
আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ভাঙ্গা গোলচত্বরের পাশে বাড়িটির অবস্থান। পদ্মা সেতু চালুর পর দর্শনার্থীদের ভিড় বেড়েছে। দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে উন্নয়ন তো দূরে থাক, দর্শনার্থীদের জন্য একটি শৌচাগারের, বসার বেঞ্চ পর্যন্ত নেই।
তারেক মাসুদের ভাই মাসুদ বাবু জাগো নিউজকে বলেন, সরকার এখানে তারেক মাসুদের সংগ্রহশালা, মিউজিয়াম, গবেষণাগার, লাইব্রেরি, রেস্ট হাউজ, পিকনিক কর্নারসহ নানা উদ্যোগের পরিকল্পনা নেয়। সরকারের আশ্বাসেই পুরো বাড়িটি সরকারের ট্রাস্টে লিখে দেওয়া হয়। এগুলো বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে জেলা-উপজেলায় চিঠিও দেওয়া হয়। কিন্তু, তা এখন পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
তারেক মাসুদের মা নুরুন নাহার মাসুদ জাগো নিউজকে বলেন, আমার ছেলে তারেক মাসুদ মাটির ময়না, মুক্তির গানসহ অসংখ্য জনপ্রিয় চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছে। সরকার ও দেশের কল্যাণে কাজ করলেও কোনো সুযোগ সুবিধা কখনো নেয়নি। কিন্তু আজ তার (তারেক মাসুদ) অনুপস্থিতিতে স্মৃতিগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, হারিয়ে যাচ্ছে। আমার বয়স ৮০ বছর। আর কতদিনই বা বাঁচাবো। বেঁচে থাকতে যেন এ ট্রাস্টের বাস্তবায়ন দেখে যেতে পারি এটাই আমার শেষ চাওয়া।
এ বিষয়ে ভাঙ্গা জর্জ আদালতের আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ইকরাম আলী শিকদার জাগো নিউজকে বলেন, আসলে সবাই আমরা বিষয়টি অনুভব করি। কিন্তু সচিবালয় ও মন্ত্রণালয়ে তদবিরের অভাবে হয়তো কাজের উদ্যোগ ও গতি নেই।
তারেক মাসুদ ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক ও ভাঙ্গা কেএম কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোসায়েদ হোসেন ঢালী জাগো নিউজকে বলেন, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের অবহেলা ও গাফলতির কারণে এখনো তার বাড়িটি আলোর মুখ দেখেনি। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের কাছে বারবার ধরনা দিলেও কাজের কাজ হয়নি কিছুই। যা সত্যিই বড় কষ্ট ও বেদনাদায়ক।
ভাঙ্গা নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সুবাস চন্দ্র মন্ডল জাগো নিউজকে বলেন, তারেক মাসুদ ভাঙ্গার সন্তান হলেও তিনি বাংলাদেশের গর্ব। ভাঙ্গায় তারেক মাসুদের বাড়িটি আজ অযত্নে পড়ে আছে। স্থানীয় প্রশাসনকে বারবার বলার পরও কোনো ফল হয়নি।
এ বিষয়ে ফরিদপুর তারেক মাসুদ ফিল্ম সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক এইচ এম মেহেদী হাসান জাগো নিউজকে বলেন, এটা বড় দুঃখজনক যে আমরা এমন একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্রকারের স্মৃতিটুকু হারাতে বসেছি। সংরক্ষণের অভাবে তারেক মাসুদের স্মৃতিগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আজিম উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, এ সংক্রান্ত বিষয়ে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া হবে। চিঠির মাধ্যমে সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে দ্রুত উন্নয়ন বাস্তবায়নের বিষয়ে জোর সুপারিশ ও অনুরোধ জানানো হবে।
এসজে/জেআইএম