সাড়ে তিন বছর পর রহস্য উদঘাটন
হত্যার পর মরদেহ সিমেন্টের পিলারে বেঁধে পানিতে ডুবিয়ে দেন খালু

গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার সূর্যনারায়ণপুর গ্রামে স্বজনদের সঙ্গে ভাড়া থেকে পোশাক কারখানায় কাজ করতেন সাবিনা (২০)। ২০১৯ সালের ২৫ জুন নতুন বাসা খোঁজার জন্য বের হন। রাতে না ফেরায় কল করলে তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।
দুদিন পর শ্রীপুর উপজেলার রাজাবাড়ী বাজারের একটি পুকুরের পানিতে ভাসমান অবস্থায় সাবিনার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওইদিনই নিহত তরুণীর খালা ফুলেমা খাতুন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে বিরুদ্ধে শ্রীপুর থানায় মামলা করেন।
শ্রীপুর থানা ও শিল্প পুলিশ মামলাটি তদন্ত করলেও হত্যার রহস্য উদঘাটনে করতে পারেনি। পরে মামলার তদন্তভার পায় গাজীপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। দীর্ঘদিন তদন্ত শেষে পিবিআই জানিয়েছে, খালুর নির্দেশেই সাবিনাকে শ্বাসরোধে হত্যার পর মরদেহ সিমেন্টের পিলারে বেঁধে পানিতে ডুবিয়ে দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় তুলা মিয়া (২৪) নামের একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৮ডিসেম্বর) ভোরে ময়মনসিংহের ভালুকার ভরাডোবা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
তুলা মিয়া ময়মনসিংহের ধোবাউড়া থানার দর্শা-মোড়লবাড়ি গ্রামের আব্দুল ছালামের ছেলে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তুলা মিয়া হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন বলে জানান গাজীপুর পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান।
ভিকটিম সাবিনা ময়মনসিংহের ধোবাউড়া থানার জোকা গ্রামের লাল মিয়ার মেয়ে। তিনি খালা, খালু ও নানির সঙ্গে গাজীপুরের কাপাসিয়ার সূর্যনারায়ণপুর গ্রামের কামালের বাড়িতে ভাড়া থেকে স্থানীয় পোশাক কারখানায় কাজ করতেন।
শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) বিকেলে জেলা পিবিআই কার্যালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
পিবিআই জানায়, সাবিনার আগে চারটি বিয়ে হয়েছিল। তার বিভিন্ন ছেলেদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল এবং তাদের সঙ্গে ঘুরে গভীর রাতে বাসায় আসতেন। এ নিয়ে সাবিনার সঙ্গে খালু সুজনের প্রায় বাগবিতণ্ডা হতো। এলাকার সাধারণ মানুষ বিষয়টি নিয়ে খালু সুজনকে বিভিন্ন কথা বলে বিচার দিতেন।
ঘটনার দিন এক বন্ধুর সঙ্গে ঢাকায় বেড়াতে যান সাবিনা এবং রাতে দেরিতে ফেরায় খালুর বাবা তাকে গালিগালাজ করেন। এসময় সাবিনা উত্তেজিত হয়ে খালুর বৃদ্ধ বাবাকে চড় মারেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে খালু সুজন সাবিনাকে লাঠি দিয়ে মারধর করলে তার হাত ভেঙে যায়।
সাবিনা দৌড়ে পাশের কক্ষের অপর ভাড়াটিয়া তুলা মিয়ার রুমে যান। এসময় তাকে মারধর করায় থানায় গিয়ে মামলা করবে বলে হুমকি দিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যান সাবিনা। পরে বাসায় না ফেরায় রাত ১১টার দিকে তার মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
খালু সুজন ও তুলা মিয়াসহ অন্যান্যরা সাবিনাকে খুঁজতে বাসা থেকে বের হন। একপর্যায়ে তারা শ্রীপুর উপজেলা রাজাবাড়ী বাজারে সাবিনার সন্ধান পেলে তাকে বাসায় ফিরতে বলেন। এতে তিনি অস্বীকৃতি জানান এবং খালুর বিরুদ্ধে মামলা করার কথায় অনড় থাকেন। এরপর খালু সুজন ও তুলা মিয়াসহ অন্যরা সাবিনাকে কৌশলে রাজাবাড়ী বাজারের পেছনে পুকুর পাড়ে নিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। পরে মরদেহ সিমেন্টের পিলারে বেঁধে পানিতে ডুবিয়ে দেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গাজীপুর পিবিআইয়ের এসআই জহিরুল ইসলাম বলেন, পাঁচজন মিলে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। এদের মধ্যে তুলা মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছে। খালু সুজনসহ বাকি আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
আমিনুল ইসলাম/এসআর/এএসএম