মাদারীপুর আদালতে ঝুলছে সাড়ে ২৫ হাজার মামলা, হতাশ বিচারপ্রার্থীরা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি মাদারীপুর
প্রকাশিত: ০৯:৫০ এএম, ২৯ ডিসেম্বর ২০২২

মাদারীপুরের আদালতে মামলা জট কমছেই না। প্রতিদিনই এই তালিকা ভারী হচ্ছে। আদালতে বর্তমানে সাড়ে ২৫ হাজার মামলা বিচারাধীন। দীর্ঘদিনেও বিচার শেষ না হওয়ায় আদালতপাড়ায় এসে হয়রানি আর ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বাদী-বিবাদীরা। এতে ক্ষুব্ধ আইনজীবীরাও।

যদিও রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলির দাবি, চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নতুন ভবন নির্মাণ হলেই আস্তে আস্তে কেটে যাবে এই সমস্যা।

মাদারীপুরের চরমুগরিয়া বন্দর এলাকার বাসিন্দা খলিলুর রহমান। আট বছর আগে একটি দেওয়ানী মামলা করেন আদালতে। বিচারের আশায় আইনজীবী, মুহুরী আর কাগজপত্রের পেছনে খরচ করেছেন কয়েক হাজার টাকা। কোনো সমাধান না হওয়ায় হতাশাগ্রস্ত তিনি। শুধু খলিলুর রহমানই নন, তার মতো অধিকাংশের অবস্থা একই রকম। মামলা করে বছরের পর বছর ঘুরছেন আদালতপাড়ায়। এতে বার বার আদালতে আসা যাওয়ায় কর্মজীবনে সমস্যা আর অর্থ ব্যয়ে বেড়েছে ভোগান্তি। কোনো কোনো মামলায় নেই বাদীর উপস্থিতি, আবার বেশকিছু মামলায় সাক্ষী দিতে বিলম্ব হচ্ছে, ফলে কমছেই না মামলার জট।

একদিকে বিচারক ও এজলাস সংকট, অন্যদিকে ব্রিটিশ আমলের আইনের পরিবর্তন না হওয়ায় দীর্ঘদিনেও মামলার জট কাটছে না বলে দাবি আইনজীবীদের। পাশাপাশি হয়রানিমূলক মামলায় বাদীদের আইনের আওতায় আনা গেলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে বলে প্রত্যাশা তাদের।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মাদারীপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ৪ হাজার ৮০০, সহকারী জজ আদালতে সাত হাজার, চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সাড়ে সাত হাজার, নারী ও শিশু আদালতে দুই হাজার ৩০০, ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল আদালতে চার হাজার মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এই মামলার জন্য ১৭ জন বিচারকের বিপরীতে এজলাস রয়েছে মাত্র ১৪টি।

ভুক্তভোগী খলিলুর রহমান বলেন, আইনজীবী বলছেন, আমি মামলার রায় পাবো, কিন্তু কবে রায় হবে সঠিকভাবে বলতে পারছেন না। আমি গরিব মানুষ, টাকা জোগাড় করা আমার জন্য বড়ই কঠিন। মামলা চালানো এখন কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আরেক ভুক্তভোগী এমদাদুল হক খন্দকার বলেন, আমার বাড়ি শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার নাগেরপাড়া গ্রামে। একটি মামলায় আমি আসামি। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীর অভাবে সাত বছরেও মামলার কোনো সুরাহা হয়নি। ফলে কর্মজীবনে সমস্যা আর টাকা খরচ করতে করতে ভয়াবহ অবস্থায় আছি। কবে এর থেকে মুক্তি পাবো জানা নেই। আদালতে আসলেই নতুন তারিখ, কিন্তু না আসলে বিপদ।

মাদারীপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী অ্যাডভোকেট যতিন সরকার বলেন, এ সমস্যার অন্যতম কারণ হলো বিচারক ও এজলাস সংকট। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী যারা আছেন, তারা সময়মতো না আসায় অনেক মামলায় রায় হয় না।

মাদারীপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম বলেন, বেশকিছু মামলাই মানুষকে হয়রানি করতে করা হয়। এসব মিথ্যা মামলায় বাদীকে আইনের আওতায় আনা হলে মামলার সংখ্যা কমে যাবে। আর প্রকৃতপক্ষে তদন্ত দেরি হলেও মামলার বিচার সঠিকভাবে হয় না। পর্যাপ্ত বিচারক ও এজলাস হলে সবক্ষেত্রেই বাদী ও বিবাদী লাভবান হবেন।

মাদারীপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সহকারী কৌঁসুলি (এপিপি) অ্যাডভোকেট বিদ্যুৎ কান্তি বাড়ৈ বলেন, আদালতে বিচারক সংকট কাটাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। দুই-একটি এজলাস হলেই আপাতত সমস্যা দূর হতো।

মাদারীপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট গোলাম কিবরিয়া বলেন, চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নতুন ভবন নির্মাণ হলেই আস্তে আস্তে কেটে যাবে এই সমস্যা। এরইমধ্যে ভবন নির্মাণের জন্য জায়গা চূড়ান্ত হয়েছে। আশা করছি, শিগগির এ সমস্যার সমাধান হবে।

এমআরআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।