ঠাকুরগাঁওয়ে জেঁকে বসেছে শীত, বিপাকে নিম্নআয়ের মানুষ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ঠাকুরগাঁও
প্রকাশিত: ০২:১৪ পিএম, ০৩ জানুয়ারি ২০২৩

উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে জেঁকে বসেছে শীত। বিকেল বাড়তে থাকে হিমেল হাওয়া ও কুয়াশা পড়া। ভোর থেকে বেলা ১১টা বাজেও দেখা মেলে না সূর্যের। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টির মতো ঝিরঝির করে পড়তে থাকে কুয়াশা। আর এমন কনকনে ঠান্ডায় চরম বিপাকে পড়েছে খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষরা। দিনে ও রাতে স্থানীয়সহ দূরপাল্লার যানবাহন চলছে হেডলাইট জ্বালিয়ে।

তেঁতুলিয়া থেকে পাথর বোঝাই ট্রাক নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন সাহাদত হোসেন। রাত ৯টার দিকে ঠাকুরগাঁও ট্রাকটার্মিনালে কথা হয় তার সঙ্গে।

jagonews24

তিনি বলেন, তেঁতুলিয়া থেকে লোড ট্রাকটি নিয়ে ঠাকুরগাঁও আসলাম খুব কষ্ট করে। রাস্তায় এতো কুয়াশা হেডলাইটের আলোয় দুই হাত দূরে ভালো করে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। এতে রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটার শঙ্কা খুব।

ঠাকুরগাঁও বাসস্ট্যান্ড গোল চত্বরে অটোচালক মানিক বলেন, আমি প্রায় ২০ বছর ধরে ঠাকুরগাঁওয়ে অটো চালাচ্ছি। এবারের মতো এমন ঘন কুয়াশা আর অন্যবার দেখিনি। কুয়াশার কারণে অটো চালাতে খুবই সমস্যা হচ্ছে। অনেক দুর্ঘটনাও ঘটাচ্ছে। কিন্তু তারপরেও ঝুঁকি নিয়ে অটোচালাতে হচ্ছে।

ঠাকুরগাঁও রেনু মার্কেটের নৈশ্যপ্রহরী হিরা বলেন, শীতে থাকা যাচ্ছে না কাঁথা কম্বল কিছু নাই। তাই কাঠ-খড় পুড়িয়ে আগুন পোহাচ্ছি। এভাবেই কষ্ট করে ডিউটি করছি।

এই ঠান্ডায় প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না মানুষ। শীতের কারণে মাঠ ঘাটে ঠিকভাবে কাজ করতে পারছেন না শ্রমিকরা। এমন অবস্থায় শ্রমজীবী, দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষরা পড়েছেন চরম বিপাকে। কিছু কিছু মানুষ উপায় না পেয়ে বৃদ্ধ বয়সেও এই শীতে মাঠে ঘাটে কাজ করছেন পেটের দায়ে। সরকারের কাছে তাদের আকুতি শীতবস্ত্রের।

jagonews24

সদর উপজেলার মোহাম্মদপুরের ফেঁসাডাঙ্গী এলাকায় আলুর ক্ষেতে কাজ করছিলেন কয়েকজন শ্রমিক। তাদের মধ্যে তমিজ উদ্দিন নামে এক বৃদ্ধ বলেন, বাবা দুঃখের কথা আর কাকে ও কি বলবো। দুইদিন ধরে গায়ে প্রচণ্ড জ্বর। তারপরেও মাঠে আসতে হয়েছে শুধু পেটের জন্য। কাজ না করলে খাবার জুটবে না।

এই বয়সে ও এতো শীতে মাঠে কাজ করছেন কেন ছেলে মেয়ে নাই আপনার? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার দুই ছেলে তারা বিয়ে করে আলাদা হয়ে গেছে। আমাদের দেখে না তারা। তাই বুড়া বুড়ি আমরা দুইজনই কাজ করে খাই।

মোহম্মদপুরের খুরসেদ নামে এক শ্রমিক বলেন, সরকার বা চেয়ারম্যানের কাছ থেকে আমি একটাও শীতের কাপড় পেলাম না এ পর্যন্ত। তাই সরকার যদি একটু দয়া করে শীতে কাপড় দিতো তাহলে এই প্রচণ্ড ঠান্ডা থেকে রেহায় পেতাম।

jagonews24

নারগুন কহড়পাড়া গ্রামের কৃষক সিলাজুল ইসলাম (৭০) বলেন, এবার শীতটা খুবই বেশি মনে হচ্ছে। দুপুর হয়ে গেছে তাও সূর্যের তাপ তেমন নেই। এতে আমাদের কিছু করার নাই। আমরা গরিব মানুষ কাজ করে খেতে হয়। তাই যতই কষ্ট হোক আমাদের মাঠে কাজ করতেই হবে। তবে সরকার যদি আমাদের দিকে একটু সুনজর দিয়ে গরম কাপড়ের ব্যবস্থা করে দিতো তাহলে আমাদের উপকার হতো।

জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে এবার এ জেলার জন্য ২৮ হাজার কম্বল বরাদ্দ এসেছে। তা ছিন্নমূল ও দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে। এ বরাদ্দ চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল তাই আরও ২০ হাজার কম্বল ও ২০ লাখ টাকা শীতবস্ত্রের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এসময় তিনি বেসরকারি সংস্থা এবং বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

তানভীর হাসান তানু/জেএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।