রতনের বাকির খাতা দেওয়াল আর দরজা
যেকোনো ব্যবসায় বাকিতে বিক্রির প্রচলন আছে। তবে সেই বকেয়া মনে রাখতে একেক সময় একেক ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার হয়েছে। বর্তমান ডিজিটাল সময়ে বাকি লিখে রাখার জন্য চলে এসেছে অ্যাপ। তবে একটু ব্যতিক্রম মো. রতন। তিনি তার মাছ বিক্রির বকেয়া চক দিয়ে লিখে রাখেন ক্রেতার বাড়ির দেওয়াল, পিলার ও দরজায়। পরিশোধ হলে আবার মুছে দেন।
রতনের বাড়ি রাজশাহীর চারঘার উপজেলার শলুয়া ইউনিয়নে। তিনি দীর্ঘ এক যুগ ধরেই এভাবেই ব্যবসা করে আসছেন। প্রতিদিন মাছ বিক্রি করেন ফেরি করে। একটি ভ্যানে করে মাছ নিয়ে ছুটে চলেন এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে।
চারঘাট উপজেলার শলুয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) কাছে নির্মাণ করা হয়েছে আশ্রয়ণের ঘর। সম্প্রতি সেখানে গিয়ে দেখা গেলো, প্রায় প্রতিটি ঘরের দরজা ও দেওয়ালে চক দিয়ে লিখে রাখা বিভিন্ন টাকার পরিমাণ। কোনো কোনো দেওয়াল বা দরজার লিখন মুছে ফেলা হয়েছে। আশ্রয়ণের বাসিন্দারা জানান, বিভিন্ন অংকের এসব লেখা মাছ বিক্রেতা রতনের।
কিছুক্ষণের মধ্যে দেখা গেলো মাছ নিয়ে হাজির রতন। তিনি ভ্যান নিয়ে প্রবেশ করতেই বিভিন্ন বাড়ি থেকে লোকজন এসে মাছ নিয়ে দরদাম শুরু করলেন। দরদাম মিলে গেলেই শুরু হয় ওজন। এরপর মাছ নিয়ে চলে যান ক্রেতারা।

মাছ বিক্রি শেষে সেই বাড়ির দেওয়ালে আগের দেওয়া বাকির সঙ্গে নতুন করে বাকি যোগ করে লিখে রাখলেন রতন। তবে কয়েকজনকে মাছ না নিয়ে আগের বকেয়া পরিশোধ করতে দেখা গেল।
রতনের কাছে মাছ কিনলেন শফিকুল ইসলাম। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখানে আসার পর থেকেই আমরা রতনের কাছে মাছ কিনি। মূলত আমাদের কাছে সবসময় টাকা থাকে না। আবার অনেকেই কাজে চলে যায়। তখন বাড়ির বউরা এই মাছ কেনে। তাদের কাছে তো আর টাকা থাকে না। তাই বাকিতে মাছ কিনতে হয়। বাড়িতে ফিরেই দেখি ঘরের দরজাতে লেখা আছে টাকার পরিমাণ। পরের দিন সেই টাকা বাড়িতে রেখে গেলে রতন এসে সেগুলো নিয়ে যায় আবার কেটেও দিয়ে যায়।
শফিকুলের পাশের বাড়ি মর্জিনার। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে রতন বাকিতে মাছ বিক্রি করেন। পরে চক দিয়ে বাকি লিখে রেখে যান। টাকা পেলেই সেটি মুছে দিয়ে যান। এটা আমাদের জন্য ভালো হয়েছে।’
কথা হয় মাছ বিক্রেতা রতনের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখানে যতটা ঘর আছে প্রতিটা ঘরে যাবেন দেখবেন লেখা আছে। না লিখলে তারা টাকা মেরে খেয়ে নেয়।’
তিনি বলেন, ‘গরিবের কাছে মাছ বেচে আমিও গরিব হয়ে গেছি। দিন দিন ফকির হয়ে যাচ্ছি। অনেক সময় লেখা মুছে যায়। তখন কিছুটা লোকসানও হয়। তবু আমি চাক দিয়েই লিখে রাখি।’
সাখাওয়াত হোসেন/এসআর